সব ধরনের গণপরিবহন চলাচল বন্ধ থাকার পরেও বিকল্প উপায়ে বরিশাল বিভাগীয় গণসমাবেশে যোগ দিচ্ছেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নগরীতে বৃহস্পতিবার থেকেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি পাল্টাপাল্টি মিছিল-শোডাউন-সমাবেশ করছে। যার কারণে বরিশাল নগরীতে উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ দিকে সমাবেশের এক দিন আগ থেকেই (শুক্রবার) সড়ক ও নৌ-পথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বরিশাল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে ধর্মঘটের মধ্যেও বিএনপি নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ট্রলার, মোটরসাইকেল, মাইক্রাবাস, ছোট ট্রাক, মালবাহী জাহাজে করে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন। অনেকেই আবার চার থেকে পাঁচ দিন আগেই বন্ধু, আত্মীয়, মেস ও হোটেলে উঠেছেন। যারা কম দূরত্বের তারা ভ্যান, রিকশা ও সাইকেল চালিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। যারা ইতোমধ্যে চলে এসেছেন, তাদের অনেকেই বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সমাবেশস্থলে রয়েছেন। কেউ সঙ্গে খাবার, বিছানাপত্র ও পানি নিয়ে এসেছেন। বাকিদের জন্য সমাবেশ মঞ্চের পাশেই রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধর্মঘট দিয়ে সারাদেশ থেকে বরিশালকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তারপরেও বিভিন্ন উপায়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেছেন। সমাবেশকে ব্যর্থ করতে সরকারের কোনো ষড়যন্ত্রই কাজে আসবে না।
এ দিকে সমাবেশ সফল করতে বৃহস্পতিবার থেকেই বিএনপির মিছিল-মিটিং করছে। অন্যদিকে সমাবেশের বিপক্ষে মোটরসাইকেল, শোডাউন ও মিছিল করছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এসব মিছিলে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস নৈরাজ্যের স্লোগান দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা। বিএনপির মিছিল-সমাবেশেও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তোলা হচ্ছে গণতন্ত্র ধ্বংসের অভিযোগ। সব মিলিয়ে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে বরিশাল। তবে পুলিশ বলছে, কোনো অবস্থাতেই নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে দেওয়া হবে না।
বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির উপদেষ্টা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বরিশালে নজিরবিহীন পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি বিএনপির সমাবেশ জনস্রোত দেখে বরিশালের গণসমাবেশ ঠেকাতে আওয়ামী লীগ মরিয়া হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, বরিশালে যেন অঘোষিত কারফিউ চলছে। সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার ওপর মোটরসাইকেল মহড়া, মিছিল-সমাবেশ এবং পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া করার চেষ্টা। কোনো কিছুই সমাবেশকে বাধাগ্রাস্ত করতে পারবে না।
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, ধর্মঘট তো আমরা ডাকিনি। এসব তো পেশাজীবী সংগঠনগুলোর ব্যাপার।
বরিশালের পুলিশ কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আমাদের যা করা দরকার তাই করছি।
উল্লেখ্য, খালেদা জিয়ার মুক্তি, তত্ত্বাবধায়ক সরকার, সংসদকে বিলুপ্ত, সরকারকে পদত্যাগসহ বিভিন্ন দাবিতে বিভাগীয় সমাবেশ করছে বিএনপি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, খুলনা ও রংপুর বিভাগে গণসমাবেশ করা হয়েছে।
সামনে আরও পাঁচটি গণসমাবেশ ও ঢাকায় মহাসমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে দলটির। এর মধ্যে আগামী ৫ নভেম্বর বরিশাল, ১২ নভেম্বর ফরিদপুর, ১৯ নভেম্বর সিলেট, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী ও ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় এ কর্মসূচি রয়েছে।