যে কারণে গ্রেপ্তার ভোরের পাতার সম্পাদক এরতেজা হাসান

Slider বিনোদন ও মিডিয়া


দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানকে জালিয়াতি ও প্রতারণার একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর গুলশান গুলশান-২ এ অফিস থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল।

পিবিআই সদরদপ্তরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া) আবু ইউসুফ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা একটি জালিয়াতি ও প্রতারণার মামলার তদন্তে কাজী এরতেজা হাসানের নাম উঠে আসে। এর পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি রাজধানীর খিলক্ষেত থানায় মামলাটি করেন আসিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ভাই সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি আসিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্টসের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)।

জানা যায়, আসিয়ানের সঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির জমি নিয়ে বিরোধ। রাজধানীর ফার্মগেটে যে ভবনে ভোরের পাতার কার্যালয়, সেখানেই আগে নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ছিল।

আসিয়ানের মামলায় নর্দার্ন ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহকে এর আগে গ্রেপ্তার করেছিল পিবিআই। রিয়াজুল আলম নামে আরেকজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে এবং তদন্তে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কাজী এরতেজা হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয়।

মামলার এজাহারে বাদী অভিযোগ করেন, ‘২০০৫ সাল থেকে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা করে আসছি এবং ডিএমপি দক্ষিণখান থানার অন্তর্গত বিভিন্ন স্থানে আমার প্রজেক্ট চালু আছে। আমার বন্ধু কাজী শামীম মাহদী ইলেক্ট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কাজ করার সুবাদে আমার সঙ্গে সু-সম্পর্ক গড়ে উঠে। তিনি তার পরিচিত বিভিন্ন ব্যক্তিকে আসিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপম্যান্ট প্রজেক্টে প্লট বুকিংয়ের ব্যবস্থা করে দেন। ২০১০ সালের শুরুতে কাজী শামীম মাহদী আমাকে বলেন, তার পরিচিত একজনের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এবং তারা তাদের ক্যাম্পাসের জন্য জমি খুঁজছেন।’

অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সাল থেকে সরকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপন করার তাগাদা প্রদান করে আসছে। তার পরিচিত ব্যক্তির ক্যাম্পাস অতি দ্রুত স্থানান্তরের জন্য স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) কর্তৃক নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। স্বল্প সময়ের মধ্যে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্যাম্পাস স্থাপন করতে ব্যর্থ হলে কার্যক্রম বন্ধ করার সম্ভাবনা রয়েছে। তখন কাজী শামীম মাহদী জানান, আপনাদের অনেক জায়গা আছে, একটা জায়গা তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য চান। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে একদিন আমার অফিসে কাজী শামীম মাহদী মামলার প্রথম আসামি আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহসহ ২/৩ জনকে সঙ্গে নিয়ে আসেন।

তিনি জানান, দক্ষিণখান এলাকার আসিয়ান সিটির সাইট ভিজিট করে তারা জানায়, পাঁচ বিঘা জমি লাগবে। এবং তারা দক্ষিণখান মৌজার মহানগর জরিপ দাগ নং-২৬৮০৪, ২৬৮১৬, ২৬৪৮৬, ২৬৪৮৫, ২৬৪৮৭, ২৬৮০৮ এবং ২৬৪৮৯ পছন্দ করেন। আলাপ-আলোচনার পর জায়গার মূল্য ৫০ কোটি টাকা নির্ধারণ করি। ২০১৩ সালের ৩ আগস্ট তিনশত টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে খিলক্ষেত থানাধীন আসিয়ান মেডিকেল কলেজে অবস্থিত আমার বড় ভাই নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার ব্যক্তিগত অফিসে দুপক্ষের সম্মতিতে একটি চুক্তি সম্পাদিত হয়।’

চুক্তিপত্রে প্রথম পক্ষ হিসেবে মামলার এক নম্বর আসামি আবু ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ জমির ক্রেতা এবং দ্বিতীয় আসামি মো. রিয়াজুল আলম সাক্ষী হিসেবে সই করেন।

চুক্তিপত্রে উল্লেখ আছে, জমির দামের সম্পূর্ণ টাকা ওই বছরের ৩০ আগস্টের মধ্যে পরিশোধ করতে প্রথম পক্ষ বাধ্য থাকবেন। কিন্তু উল্লিখিত সময়ের মধ্যে নির্ধারিত ৫০ কোটি টাকার মধ্যে নগদে ৩০ কোটি টাকা পরিশোধ করেন এবং অবশিষ্ট ২০ কোটি টাকা বাকি রাখেন। অবশিষ্ট টাকা পরিশোধে সময় চান তারা। প্রথম আসামি বলেন, আমরা কাজ শুরু করে স্বল্প সময়ের মধ্যেই বাকি টাকা পরিশোধ করে দেব।

মামলার বাদী আরও বলেন, ‘আমি সরল বিশ্বাসে তাদের কাজ শুরু করার অনুমতি দিই। কাজ শুরুর পর থেকে বিভিন্নভাবে কালক্ষেপণ করতে থাকেন এবং টাকা পরিশোধ না করে বিভিন্ন বাহানা করতে থাকেন।’

‘এভাবে ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েও অপরিশোধিত টাকা পরিশোধ করেননি। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় আমার জমি বিক্রির পাওনা টাকা চাইলে ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ জানান, আমি নাকি কোনো টাকা তাদের কাছে পাব না। কারণ, আমার বড় ভাই নজরুল ইসলাম ভূঁইয়া ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসে জমিটি রেজিস্ট্রি করে দিয়েছেন এবং তারা জমির দাম বাবদ সম্পূর্ণ টাকা আমাদের পরিশোধ করেছেন।’

সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের (নজরুল ইসলাম) সঙ্গে রেজিস্ট্রি করে দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে তিনি হতবাক হয়ে যান এবং বলেন এটা কী করে সম্ভব? জমি রেজিস্ট্রির বিষয়ে আমার বড় ভাই কিছুই জানেন না। এ ছাড়া তিনি নিজেও কয়েকবার অপরিশোধিত টাকা পরিশোধ করার জন্য তাগাদা দিয়েছেন।

পরবর্তী সময়ে আমি খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, ‘আমরা প্রথম আসামি ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহর কাছে জমি বিক্রি করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলাম। সেই জমিটি রেজিস্ট্রিকৃত সাফ-কাবলা দলিল নং-১১৩৫৩ ২০১৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মূলে রেজিস্ট্রি হয়। জমির মূল্য ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা দেখানো হয়েছে। ওই দলিলের রেজিস্ট্রি সম্পাদন প্রক্রিয়া সম্পর্কে আরও জানতে পারি, দলিলটি কমিশনিং এ রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে এবং দলিল সম্পাদনকারী মোহরার হিসেবে আমার অফিসের মোহরার শহিদুল ইসলামের নাম রয়েছে। আমার মোহরার শহিদুল ইসলামকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, তিনি এ রকম কোনো দলিল লেখার কাজ করেননি।’

মামলার বাদী আসিয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলামের ভাই সাইফুল ইসলাম ভুঁইয়া আরও বলেন, ‘আমি ওই দলিল সম্পর্কে ২ ও ৩ নম্বর আসামির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, নদার্ন কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ করেই আপনার জমি রেজিস্ট্রি করেছে। আমি বারবার নদার্ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, এ বিষয়ে আমি যেন বেশি বাড়াবাড়ি না করি। এ ছাড়া আমাকে বিভিন্ন সময়ে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। প্রথম আসামি ইউসুফ মো. আব্দুল্লাহ আমার বড় ভাই নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার স্বাক্ষর, অফিসের সিল ও মোহার মো. শহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর জাল করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে জমির দলিলের রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম সম্পন্ন করেছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *