বজ্রপাতে নিহত ৫ জন একই পরিবারের

Slider জাতীয়


সিরাজগঞ্জ: ছোট ভাই, দুই ছেলে, মেয়ের জামাতা ও নাতিকে সঙ্গে নিয়ে পাশের মাটিকোড়া গ্রামে আমন ধানের চারা তুলতে গিয়েছিলেন বৃদ্ধ সমসের আলী (৬৫)।

আকস্মিক বজ্রপাতে তিনিসহ প্রাণ হারালো তার পরিবারের পাঁচ জন সদস্য।

বাকি এক সদস্যের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মাটিকোড়ায় বজ্রপাতের ঘটনায় সমশের আলী পরিবারের পাঁচ সদস্য ছাড়াও প্রাণ হারিয়েছে শিশুসহ আরও চারজন। দরিদ্র বর্গাচাষি সমশের আলীর বাড়ি উল্লাপাড়া পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ড শিবপুর গ্রামে। তিনি মাটিকোড়া গ্রামে শাহ আলম নামে এক কৃষকের কাছ থেকে আমন ধানের চারা কিনে তা তুলতে গিয়েছিলেন। সেখানেই বজ্রপাতের শিকার হন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যসহ আরও কয়েকজন শ্রমিক।

শমসের আলী পরিবারের নিহত বাকি সদস্যরা হলেন- তার ছোট ভাই আফছার আলী (৬০), ছোট ছেলে শাহিন মিয়া (২১) মেয়ে জামাতা মোকাম মিয়া (৫০), সমসের আলীর নাতি ও মোকাম মিয়ার ছেলে মোন্নাফ আলী (১৮)। এ ঘটনায় আহত সমসের আলীর বড় ছেলে জাহাঙ্গীর (২৭) আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এ ঘটনায় নিহত বাকিরা হলেন- পঞ্চকোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া এলাকার নুরুল ইসলামের ছেলে শাহ আলম (৪০), একই গ্রামের বাহাদুর হোসেনের ছেলে আব্দুল কুদ্দুস (৬০), মোস্তফার মেয়ে রিতু খাতুন (১৪) ও নুরনবীর মেয়ে জান্নাতি (১২)।

উল্লাপাড়া পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আজাদ হোসেন জানান, সমসের আলীর পরিবার হতদরিদ্র। তিনি অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ছেলেদের সঙ্গে চাষাবাদ করেই সংসার চালান। আজকের বজ্রপাতের ঘটনায় একজন বাদে এই পরিবারের সব সদস্যই মারা গেছেন। একজন বেঁচে থাকলেও তার শারীরিক অবস্থাও ভালো না। মর্মান্তিক এ মৃত্যুতে এলাকাজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

তিনি বলেন, রাতে নিহতদের মরদেহ বাড়িতে আনার পর ওই এলাকায় শোকের মাতম চলছে।

এদিকে এ দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ দেখে বাড়ি ফেরার পথে এক নারী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। তবে তার নাম-পরিচয় জানা যায়নি।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘাটিনা গ্রামের রিপন, মমিন, শাহজাহানপুরের সাত্তার ও কল্পনা, এনায়েতপুর গুচ্ছগ্রামের নাজমা, সাবিনা, শিবপুরের আলিম, নাসরিনসহ শত শত মানুষ নিহতদের বাড়িতে এসেছেন। এত মরদেহ একবারে দেখেই তারা ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন। অনেকে হাউমাউ করে কাঁদছেন। নিহতদের স্বজনদের শান্তনা দেওয়ার কারও ভাষা নেই। আবার কেউ কেউ নিরবে ফেলছেন চোখের পানি।

জানতে চাইলে নাসরিন খাতুন বলেন, এক বাড়িতে পাঁচজন মারা গেছেন। ওই পরিবারটি শেষ হয়ে গেল। এত লাশ আমরা কখনও এক সঙ্গে দেখিনি।

এদিকে নিহতদের স্বজনরা বার বার মুর্ছা যাচ্ছেন। কেউ কোনো কথা বলতে পারছেন না। সমসের স্ত্রী ও মেয়ে বার বার অচেতন হয়ে পড়ছেন।

উল্লাপাড়া পৌর মেয়র এস এম নজরুল ইসলাম
বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। এক পরিবারের এতগুলো মানুষের মৃত্যু স্বাভাবিকভাবে মেনে নেওয়া যায় না। আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। একই পরিবারের হলেও এখানে মারা গেছেন তিনটি সংসারের পাঁচজন। আমি প্রতি পরিবারকে নগদ ১০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। এ পরিবারটি একেবারেই অসহায় হয়ে পড়লো। আমরা সাধ্য অনুযায়ী তাদের পাশা দাঁড়াবো।

উল্লাপাড়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েকজন শ্রমিক উপজেলার পঞ্চক্রোশী ইউনিয়নের মাটিকোড়া এলাকার একটি জমিতে রোপা আমন ধানের চারা তুলছিলেন। এ সময় বৃষ্টি শুরু হয়। পরে বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলে পাঁচজন ও হাসপাতালে নেওয়ার পথে চার জন মারা যান। এ ঘটনায় আহত আটজনকে উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জল হোসেন জানান, একই পরিবারের পাঁচজনের মৃত্যুর বিষয়টি অত্যন্ত মর্মান্তিক। আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। ওই পাঁচ পরিবারসহ নিহত প্রতি পরিবারকে ২৫ হাজার করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *