গাজীপুর: গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাময়িক বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশনের অনুসন্ধান টিম।
রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দিনব্যাপী গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নগর ভবন, ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট অফিসে অনুসন্ধান চালিয়েছে দুদক টিম।
এই প্রথম তারা জাহাঙ্গীরের অভিযোগের বিরুদ্ধে গাজীপুরে অনুসন্ধানের কাজ শুরু করেন।
জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন দুদকের অনুসন্ধান টিম। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে গত বছরের ২৫ নভেম্বর সাময়িক বরখাস্ত করার পর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরে মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার দুদক দুই সদস্যের একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করে।
দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবর জানান, গত ৫ জুলাই তাকে (দুদকের উপ-পরিচালক আলী আকবরকে) প্রধান করে একটি অনুসন্ধান টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধান টিমের অপর সদস্য হলেন- দুদকের সহকারি পরিচালক আশিকুর রহমান। জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগের অনুসন্ধান কাজে রোববার প্রথম গাজীপুরে যাওয়া হয়। গাজীপুর সিটির নগর ভবন, কোনাবাড়ীর আঞ্চলিক কার্যালয়, একটি ব্যাংক ও দুইটি পোশাক কারখানাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও কার্যালয়ে অনুসন্ধান চালানো হয়। এসময় কিছু নথি/তথ্যের ফটোকপিও সংগ্রহ করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বাকি ডকুমেন্ট’র ফটোকপি ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরবরাহ করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরো জানান, অনুসন্ধানে অনিয়মের তথ্য-প্রমাণ মিললে নিয়ম ও আইন অনুয়ায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পেলে দ্রুত অনুসন্ধান কাজ শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিতে পারবো। দিনক্ষণ নির্ধারণ করে তাকেও (জাহাঙ্গীর) নোটিশ দিয়ে দুদক কার্যালয়ে ডাকা হবে এবং তার সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে।
দুদকের সহকারি পরিচালক আশিকুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সাবেক মেয়রের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। সিটির উন্নয়ন খাতসহ বিভিন্ন কাজের অনিয়ম অনুসন্ধান করছি। অনিয়ম ৫০০ টাকার হউক বা শতকোটি টাকা হউক, অনিয়মের প্রমাণ মিললে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা আপোষহীন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ মজিবুর রহমান কাজল জানান, দুদকের কর্মকর্তারা অনুসন্ধানকালে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোঃ আকবর হোসেন, হিসাব রক্ষক গোলাম কিবরিয়া, কয়েকজন নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বিভিন্ন শাখার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলেন। দুদকের অনুসন্ধান টিম আমাদের কাছে কিছু ডকুমেন্টের ফটোকপি চেয়েছেন। ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এসব ডকুমেন্টের কপি জামা দিতে বলেছেন।
জানা গেছে, গত বছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কটূক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত বক্তব্যে অভিযোগ উঠে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে। পরে ১৯ নভেম্বর দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও দলের সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। পরে একই বছরের ২৫ নভেম্বর জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়র পদ থেকেও সাময়িক বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এরপর প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরেণকে ভারপ্রাপ্ত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে সাবেক এ মেয়রের বিরুদ্ধে দুদকে নানা অনিয়মের অভিযোগও জমা পড়ে। পরে তা যাছাই-বাছাই করে অনুসন্ধান কার্যক্রম চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
অপরদিকে, মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে সাময়িক বরখাস্তের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে ২৩ আগস্ট রুল জারি হয়েছে। বিচারপতি জাফর আহমেদ ও বিচারপতি মোঃ আক্তারুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ সংশ্লিষ্টদেরকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।