এশিয়া কাপে গ্রুপ পর্বের দেখায় পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছিল ভারত। আর সুপার ফোরে এসে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচের শেষ ওভারে এক বল হাতে রেখে ৫ উইকেটের জয়ে সেই প্রতিশোধ তুলে নিল পাকিস্তান।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) ভারতের দেয়া ১৮২ রানের তাড়া করতে নেমে ১৯.৫ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় পাকিস্তান। রিজওয়ান ৫১ বল মোকাবিলায় ৬ চার ও ২ ছক্কার মারে ৭১ রানের ইনিংস খেলেন।
এছাড়া ২০ বল মোকাবিলায় দুইশোর্ধ্ব স্ট্রাইরেটে ৪২ রান করে ম্যাচ জয়ের ভিত গড়ে দেন মোহাম্মদ নেওয়াজ। তার ব্যাট থেকে ৬ চারের সঙ্গে আসে ২টি ছক্কার মার।
ভারতের বোলারদের কেউ এদিন উইকেট শূন্য থাকেননি। ভুবনেশ্বর কুমার, আর্শদীপ সিং, রবি বিষ্ণুই, হার্দিক পান্ডিয়া ও যুজবেন্দ্র চাহাল একটি করে উইকেট শিকার করেন।
এর আগে ইনিংসের শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দেখেশুনে খেলার চেষ্টা করেন বাবর আজম ও রিজওয়ান। কিন্তু চতুর্থ ওভারে এসে বাবর শর্ট মিডউইকেটে থাকা রোহিত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন। রবি বিষ্ণুইয়ের বলে আউট হওয়ার আগে ২ চারের মারে ১০ বলে ১৪ রান করেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
এরপর ফখর জামান ১৮ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলে যুজবেন্দ্র চাহালের বলে ধরা পড়েন বাউন্ডারিতে থাকা বিরাট কোহলির হাতে। জয়ের জন্য তখনো পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ৬৮ বলে ১১৯ রান। সেখানে ক্রিজে এসে ম্যাচের দৃশ্যপট বদলে দেন নেওয়াজ।
চার ও ছক্কার মারে নাকাল করতে থাকেন ভারতীয় বোলারদের। শেষ পর্যন্ত তার টর্নেডো ইনিংস থামান ভুবনেশ্বর কুমার। ইনিংসের ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলে লং অফের ওপর দিয়ে নেওয়াজ ওভার বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে ধরা পড়েন দীপক হুডার হাতে।
অপরপ্রান্তে ক্রিজের দায়িত্ব সামলান রিজওয়ান। তুলে নেন নিজের ক্যারিয়ারের ১৪তম ফিফটি। আর চলতি এশিয়া কাপে এটি তার টানা দ্বিতীয় ফিফটির ইনিংস। ইনিসের শুরুতে ক্রিজে নামা রিজওয়ানের ব্যাট থামে ১৭তম ওভারে। ততক্ষণে ম্যাচ অনেকটা পাকিস্তানের পক্ষে চলে যায়। তবে পরপর দুই ওভারে নেওয়াজ ও রিজওয়ানের উইকেট পড়ায় কিছুক্ষণের জন্য চাপে পড়ে বাবর বাহিনী।
কিন্তু শেষদিকে খুশদিল শাহ ও আসিফ আলি সে চাপ সামলে দলকে ঠিকই জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন। যদিও ১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে আসিফ আলির উইকেটটি পেতে পারত রবি বিষ্ণুই। কিন্তু ক্যাচ ছেড়ে দিয়ে ভারতকে হতাশায় ফেলে আর্শদীপ সিং।
আসিফ অবশ্য ৮ বলে ২ চার ও এক ছক্কার মারে ১৬ রান করে ১৯.৪ ওভারে সাজঘরে ফেরেন। ততক্ষণে জয়ের জন্য পাকিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২ বলে মাত্র ২ রান। ১১ বলে ১৪ রান করে দলে জয় নিশ্চিত করে মাঠ ছাড়েন খুশদিল।
এর আগে নির্ধারিত ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রান সংগ্রহ করে ভারত। গ্রুপপর্বে দুদলের দেখায় বোলিং ইনিংসের শুরুটা দারুণ করেছিলেন পাকিস্তানি পেসার নাসিম শাহ। মাত্র ৩ রান দিয়ে তিনি নিয়েছিলেন একটি উইকেট। কিন্তু সুপার ফোরে নাসিমের করা প্রথম ওভারে ভারত তুলেছে ১১ রান। পরের ওভারে মোহাম্মদ হাসনাইন দেন ৯ রান।
নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে নাসিম দেন ১৪ রান। মারমুখী রোহিত আউট হন হারিস রউফের বল ভাসিয়ে দিয়ে। রোহিতের ক্যাচ নিতে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খান খুশদিল শাহ ও ফখর জামান। গায়ে গায়ে সংঘর্ষ হলেও বল খুশদিল শাহের তালুবন্দী ঠিকই হয়।
মাত্র ১৬ বলে ২৮ রান করেন ভারত ওপেনার। পাকিস্তানি বোলারদের খরুচে স্পেলের পর পাওয়ার প্লে শেষে এক উইকেটে ভারতের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬২। সপ্তম ওভারের প্রথম বলেই শাদাব খান ফিরিয়ে দেন লোকেশ রাহুলকে। ২০ বলে তার ২৮ রানের ইনিংসটিতে ছিল একটি চার ও ২টি ছয়ের মার। ভারতের এই মুহূর্তের সবচেয়ে ইনফর্ম ব্যাটার সূর্যকুমার যাদব। শুরু থেকে মারকুটে থাকা যাদবকে ১৩ রানের মাথায় আসিফ আলির ক্যাচ বানান মোহাম্মদ নেওয়াজ।
তিন উইকেট হারিয়ে ফেলার পর অনেকটাই মন্থর হয়ে যায় ভারতের ইনিংস। এরই মধ্যে পন্তের উইকেটও হারায় তারা। শাদাবের অফ স্টাম্পের বলে রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন আসিফ আলির হাতে। ১২ বলে মাত্র ১৪ রান করেন ভারত উইকেটরক্ষক। আগের ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩ রান করা হার্দিক পান্ডিয়া এদিন ফেরেন ডাক মেরে। হাসনাইনের বলে ক্যাচ দিয় প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি।
কোহলি হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৩৬ বলে। পঞ্চম উইকেট যাওয়ার পর হোদার সঙ্গে ২৪ বলে ৩৭ রানের পার্টনারশিপ করেন তিনি। এরপর হোদা আউট হন নাসিম শাহর বলে বাউন্ডারি হাঁকাতে গিয়ে। ১৪ বলে ১৬ রান করেন তিনি। কোহলি রানআউট হন ৬০ রানে। তার ৪৪ বলের ইনিংসটিতে ছিল ৪টি চার ও একটি ছয়ের মার। আগের ম্যাচেও হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন এ তারকা। শেষ দিকে নিজেদের ভুলে দুটি চার হজম করে পাকিস্তান।