মির্জাপুরে উদ্বোধনের আগেই ধসে

Slider সারাদেশ


মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি: টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের পারদীঘি এলাকায় ঝিনাই নদীর ওপর নবনির্মিত সেতু উদ্বোধনের আগেই এর সংযোগ সড়ক ধসে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের তদারকির অভাব ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিম্নমানের কাজের ফলে এ অবস্থা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছে।

যোগাযোগব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে এলাকাবাসীর উদ্যোগে ধসে পড়া সংযোগ সড়কের স্থানে প্রথমে বাঁশের সাঁকো, পরে ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগে কাঠের সাঁকো তৈরি করা হয়। বর্তমানে ওই সাঁকোর ওপর দিয়ে অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে স্থানীয়রা।

জানা গেছে, এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার পারদীঘি খেয়াঘাটে ৯৯ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩০ মিটার প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় পাঁচ কোটি ২২ লাখ ৭১ হাজার টাকা। টাঙ্গাইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) থেকে সেতুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করে। পরবর্তী সময়ে ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওরিয়েন্ট ট্রেডকে ২০১৪ সালের ২৫ নভেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর নির্ধারিত সময়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সেতুর কাজ শেষ করতে না পারায় দুই দফায় সময় বাড়ায়। সর্বশেষ গত ১৫ জুন শেষ করার কথা থাকলেও ঠিকাদার জুলাই মাসে নির্মাণকাজ সম্পন্ন করে। এরপর সেতুর দুই পাশে গাইডওয়াল নির্মাণের পর ঠিকাদার সেতুসংলগ্ন নদীর তলদেশ থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করে। কিন্তু বর্ষার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেতুর উত্তর পাশের সংযোগ সড়কটি ধসে যায়। স্থানীয় লোকজন ধসে যাওয়া স্থানে বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল শুরু করে। পরে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ বাঁশের সাঁকোর পরিবর্তে ওই স্থানে কাঠ দিয়ে কিছুটা প্রশ্বস্ত করে আরেকটি সাঁকো নির্মাণ করে। তবে নদীভাঙনে সাঁকোটি এখন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

পারদীঘি গ্রামের রাশেদ খান, কাজী মফিজ উদ্দিন, কালাম খান, আশরাফ খান, রেখা বেগম, রাকিব খান, সুতানরি গ্রামের হরিচরণ মণ্ডল ও আব্দুস সামাদ বলেন, যেকোনো সময় সাঁকোটি ধসে গিয়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠিয়ে সব সময় চিন্তায় থাকতে হয়।

ফতেপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার দায়সারাভাবে নির্মাণকাজ করেছেন। ফলে সেতু উদ্বোধনের আগেই সংযোগ সড়ক ধসে পড়েছে। পরে সেখানে সাঁকো তৈরি করা হয়। নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় ওই সাঁকোর নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। তাই সাঁকোর ওপর দিয়ে স্থানীয়দের অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে ফতেপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ গত মঙ্গলবার মুঠোফোনে জানান, ওই সড়ক দিয়ে উপজেলার ফতেপুর, মহেড়া ইউনিয়নসহ পাশের বাসাইল ও সখীপুর উপজেলার কয়েকটি গ্রামের লোকজন চলাচল করে। জনগুরুত্বপূর্ণ সেতুটি আগামী নভেম্বর মাসে উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু সংযোগ সড়ক ধসে পড়ায় উদ্বোধন অনুষ্ঠান নিয়ে সংশয় রয়েছে।

মির্জাপুর উপজেলা এলজিইডির কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, সেতুটির কাজ ডিজাইন অনুসারে শেষ করা হয়। কিন্তু নদী ভাঙনের কারণে সেতুটির উত্তর পাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ কারণে গাইডওয়ালের পাশ থেকে সংযোগ সড়কের মাটি সরে গেছে। সংযোগ সড়কের নির্মাণকাজ শেষ করতে ফের ডিজাইন করে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। নতুন ডিজাইন অনুমোদন হয়ে টেন্ডারপ্রক্রিয়ায় রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সংযোগ সড়ক নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে তিনি জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *