ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের জ্যাকেটে যুক্ত হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোড। এ জ্যাকেটের কিউআর কোডে কর্মকর্তাদের তথ্য আগে থেকেই জমা থাকবে ডিবির নিজস্ব সার্ভারে। মোবাইল অ্যাপ দিয়ে সদস্যের কিউআর কোড স্ক্যান করলেই তাদের পরিচয় দেখা যাবে। এক্ষেত্রে যদি কোনো ভুয়া ডিবির পোশাকের কোড স্ক্যান করা হয় তাহলে ‘ইনভ্যালিড কিউআর কোড’ নামে একটি বার্তা দেখা যাবে।
ডিবির জ্যাকেটের সামনে রয়েছে দুটি লোগো। বুকের বাম পাশে ঢাকা মহানগর (ডিএমপি) পুলিশের লোগো ও ডান পাশে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের লোগো। দুটি লোগোই রঙিন। এর নিচে কালো বর্ডারে সাদা হরফে ইংরেজিতে লেখা ‘DETECTIVE BRANCH’। এছাড়া ডান পাশে পকেটের নিচে রয়েছে সাদা রঙের কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোড। জ্যাকেটের পেছনে উপরের অংশে রয়েছে ডিবির লোগো আর নিচে কালো বর্ডারে সাদা হরফে লেখা ‘DETECTIVE BRANCH’।
যে কেউ মোবাইলে স্ক্যান করে আসল বা নকল ডিবির জ্যাকেট শনাক্ত করতে পারবেন। ডিবির জ্যাকেট পরা ব্যক্তিটি আদৌ ডিবি সদস্য কি না, নাকি ভুয়া সদস্য সেটিও স্ক্যানিংয়ের মাধ্যমে ভুক্তভোগীরা তাৎক্ষণিক জানতে পারবেন।
যেভাবে স্ক্যান করা যাবে-
> গুগল প্লে স্টোর থেকে QR কোড স্ক্যানার অ্যাপস ডাউনলোড করতে হবে। অথবা মোবাইলে বিল্ট ইন স্ক্যানার থেকেও কিউআর কোড স্ক্যান করা যাবে।
> দ্বিতীয় ধাপে স্ক্যানার অ্যাপস ওপেন করে সংশ্লিষ্ট ডিবি কর্মকর্তার জ্যাকেটে থাকা কিউআর কোডটি স্ক্যান করতে হবে।
> পরবর্তীতে স্ক্যানিংয়ের কিছু সময় পরে মোবাইলে আসল ডিবি পুলিশ হলে তার বিপি নম্বর, ইউনিট ও বিভাগ দেখা যাবে। এ থেকে যে কেউ নিশ্চিত হতে পারবেন ওই জ্যাকেট পরা ব্যক্তিটি আসল ডিবি।
> স্ক্যানিংয়ে যদি ‘ইনভ্যালিড কিউআর কোড’ মোবাইলে লেখা আসে তাহলে বুঝতে হবে ওই ব্যক্তি নকল ডিবি সদস্য।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ডিবি পুলিশের জ্যাকেট পরে ভুয়া ডিবি পরিচয়ে গুম, অপহরণ, ডাকাতি, মুক্তিপণ আদায় ও ছিনতাইয়ের মতো ঘটনার বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। ভুয়া ডিবি সেজে এমন অসংখ্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন অপরাধীরা। বিভিন্ন অভিযানে গ্রেফতারও হয়েছেন অনেকে। এখন থেকে ভুক্তভোগীরা মোবাইলে থাকা স্ক্যানার দিয়ে স্ক্যান করেই বুঝতে পারবেন আসল বা নকল ডিবির পরিচয়। স্ক্যানিংয়ের সময় কেউ দৌড়ে পালাতে চাইলে তাকে ধরে নিকটস্থ থানা কিংবা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করতে পারবেন ভুক্তভোগী।
গত সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিবিপ্রধান বলেন, ডিএমপির ডিবি পুলিশ যে জ্যাকেট পরে অভিযান চালাচ্ছে, তা বেশ পুরোনো। দীর্ঘদিন ধরে এ জ্যাকেট ব্যবহারের ফলে অনেক প্রতারক চক্র বাইরে থেকে এটি তৈরি করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার করছে। অনেক সময় মানুষকে ফাঁদে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় জ্যাকেটটির হুবহু কপি ভুয়া ডিবি সদস্যদের কাছে পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যতে কাউকে যেন এভাবে প্রতারণার শিকার হতে না হয় সেজন্য ডিবিতে সংযোজন করা হয়েছে নতুন জ্যাকেট। কিউআর কোড ছাড়াও পোশাকে এমন কিছু নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা রয়েছে, এর ফলে জ্যাকেটটি জালিয়াতি করা অসম্ভব হবে না।
ডিবিপ্রধান হারুন আরও বলেন, ডিবির জ্যাকেটে রয়েছে আমাদের মেধা-মননের বিশেষ সমন্বয়। কিউআর কোডসহ বিভিন্ন দৃশ্যমান ও গোপন বৈশিষ্ট্য সংবলিত যে জ্যাকেটটি আমরা ব্যবহার করতে যাচ্ছি, তাতে আমাদের সদস্যদের মধ্যে কর্মতৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি জনগণের কাছে ডিএমপির ডিবিকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে তৈরি করতে পারবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
যেসব বৈশিষ্ট্যের কারণে জ্যাকেট নকল করা সম্ভব হবে না সেগুলো হলো-
১. ডিএমপি ডিবির নতুন জ্যাকেটে এই প্রথম গোপন নম্বর, গোয়েন্দা বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সমন্বয়ে কুইক রেসপন্স কোড বা কিউআর কোডের ব্যবস্থা থাকছে। সন্দেহ হলেই যে কেউ ডিবি পোশাকে থাকা ব্যক্তির কিউআর কোড স্ক্যান করে ওই ব্যক্তি ডিবির প্রকৃত সদস্য কি না তা শনাক্ত করতে পারবেন।
২. নতুন জ্যাকেটে ডিবি এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রঙিন লোগো ব্যবহার করা হচ্ছে, যা সহজেই দৃশ্যমান হবে।
৩. জ্যাকেটে রাত্রিকালীন আলোতে দূর থেকে ডিবি পুলিশের উপস্থিতি বোঝা যাবে।
৪. নতুন ডিবি জ্যাকেটে বিভিন্ন পকেটের সুবিধা থাকাতে অভিযানকালে ডিবি সদস্যরা প্রয়োজনীয় নোটবুক, কলম ও কাগজপত্র নিরাপদে রাখতে পারবেন।