খাবারের অভাবে শিশুকে বিক্রি করতে বাজারে নিলেন বাবা!

Slider টপ নিউজ


রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও: ঠাকুরগাঁও বালিডাঙ্গী উপজেলায় সাত মাস আগে সাম্মী জন্ম নেয় এক দরিদ্র পরিবারে। ছয় সদস্যের অভাবের সংসারে এই শিশু কন্যাকে দত্তক ও স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে আসেন তার বাবা মতিউর রাহমান মতি। পরে এলাকাবাসীর পরামর্শে বাড়ি ফেরত নিয়ে আসেন তিনি।

মতিউর রহমান (৪৫) ওই উপজেলার ৪ নম্বর বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের জিয়াবাড়ি দক্ষিণ দুয়ারী গ্রামের বাসিন্দা।

তিনি একজন দিনমজুর। সারাদিন মাঠে কাজ করে যা আয় করেন তা দিয়ে কোনমতে সংসার চলে। তিন মেয়ের লেখাপড়ার খরচ ও ৭ মাস বয়সী শিশুকন্যা শাম্মীর খরচ জোগাতে পারছিলেন না তিনি। তাই বাধ্য হয়ে গত রোববার শিশুটিকে বিক্রি ও দত্তক দেওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ে যান স্থানীয় এক বাজারে।

স্থানীয়রা জানান, মতিউর খুবই হত-দরিদ্র। সন্তানদের ঠিকমতো খাবার ও ভরণপোষণ কাপড়-চোপড় কিনে দিতে পারে না। কোনদিন একবেলা খায় তো আরেক বেলা না খেয়ে থাকে। মা-বাবা কখনোই চায় না তাদের সন্তানকে বিক্রি বা দত্তক দিতে। কিন্তু অভাবের সংসার তাদের বাধ্য করেছে।

সরেজমিনে গেলে জানা যায়, ২৬ বছর আগে মতিউর রহমানের সঙ্গে নাজমা বেগমের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পরে তাদের সংসারে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। এভাবে ছেলে সন্তানের আশায় তাদের সংসারে একে একে জন্ম নেয় ৪ কন্যা সন্তান। এখন সেই চার কন্যা সন্তানসহ মোট ছয়-জনের সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। তাই বাধ্য হয়ে সাম্মীকে বিক্রয় ও দত্তক দেওয়ার জন্য বাজারে নিয়ে গেছিলেন তিনি।

বাবা মতিউর রহমান (মতি) বলেন, ‘আমার কোন ছেলে নাই। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আমি। দিনমজুরি দিয়ে যা আয় হয় সেটা দিয়ে তিন বেলার খাবারই জুটে না। তাই আমার ছোট মেয়ে সাম্মীকে বিক্রয় ও দত্তক দিতে বাজারে গিয়েছিলাম। কিন্তু এলাকার অনেকে তা করতে না দিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসে। সরকারীভাবে যদি আমাকে সহযোগিতা করা হয় তাহলে আমি আমার চার কন্যা সন্তানকে নিয়ে সংসার চালিয়ে যেতে পারবো।’

মা নাজমা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর তেমন আয় রোজগার না থাকায় ঠিকমত সংসার চালাতে পারে না। একটা মেয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। কিছুদিন পর তাকে বিয়ে দিতে হবে। আমাদের কোন সম্পদ নেই। তাই আমার স্বামী আমার সব থেকে ছোট ৭ মাসের কন্যা সন্তানকে মানুষের কাছে বিক্রি দেওয়ার জন্য বাজারে নিয়ে গিয়েছিল।’

এ দিকে মতিউরকে ইউনিয়ন পরিষদ ও সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে জানান ৪ নম্বর বড় পলাশবাড়ি ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, ‘মতি গরিব মানুষ। তার কোন জমি-জায়গা নাই। দিন মজুরি দিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে সন্তানদের মুখে খাবার দেন। অভাব অনটনের জন্য তার ৭ মাসের কন্যাকে বাজারে বিক্রি করতে যান। এটা খুবই দুঃখজনক। তবে মতিকে কিভাবে সাহায্য সহোযোগীতা করা যায় তার চেষ্টা আমি করব।’

এ বিষয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহা. যোবায়ের হোসেন বলেন, ‘ওই দরিদ্র পিতা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমি তাদের সহযোগিতার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *