জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া এমপির প্রথম জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট জামে মসজিদের ইমাম আবু সালেহ মো. সলিমউল্লাহ।
জানাজায় অংশ নেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, আপিল বিভাগের বিচারপতি, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতি সভাপতি, সম্পাদকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
এছাড়া বিকেল ৩টায় দ্বিতীয় জানাজা গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা থেকে সশস্ত্র বাহিনীর হেলিকপ্টারে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে তার মরদেহ পৌঁছাবে সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া কাজী আজাহার আলী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে।
এরপর সেখান থেকে তার মরদেহ সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে ভরতখালী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। ওই মাঠে বিকেল ৩টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তার মরদেহ নিজ বাড়ি গটিয়া গ্রামে নেয়া হবে। সেখানে বিকেল সাড়ে ৫টায় আরেকটা জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে বলে জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়েছে।
ফজলে রাব্বি মিয়ার ছোট ভাই মো. ফরহাদ রাব্বি ও মেয়ে ফারজানা রাব্বি বুবলি জানান, জানাজা শেষে দুই ছেলের পাশে তাকে দাফন করা হবে।
এর আগে সোমবার সকালে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ফজলে রাব্বী মিয়ার মরদেহ নিয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান থেকে জানাজার জন্য সরাসরি তার মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ঈদগাহ মাঠে।
এদিকে ফজলে রাব্বী মিয়া এমপির সংসদীয় আসন গাইবান্ধা-৫ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি মৃত্যুবরণ করায় ওই দিন থেকেই আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। রোববার (২৪ জুলাই) জাতীয় সংসদ সচিবালয় থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। কোনো সংসদীয় আসন শূন্য ঘোষিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপ-নির্বাচনের কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে।
শুক্রবার (২২ জুলাই) দিবাগত রাতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৪৬ সালে গাইবান্ধায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি গাইবান্ধা-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ছিলেন।
শিক্ষাজীবনে ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৬১ সালে গাইবান্ধা কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে তিনি বিএ এবং এলএলবি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল সনদ লাভ করেন। এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য হন।
পেশায় আইনজীবী ফজলে রাব্বী মিয়া রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে রাজনীতিতে আসেন ফজলে রাব্বী মিয়া। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান পাকিস্তানে মার্শাল ল’ চালু করেছিলেন। সে সময় ফজলে রাব্বীর চাচা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। চাচার মাধ্যমে তিনি মার্শাল ল’ বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। এভাবেই তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬২-৬৩ সালে শিক্ষা কমিশন রিপোর্টের বিরুদ্ধে তিনি আন্দোলন করেছিলেন।
এরপর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ফজলে রাব্বী মিয়া মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। তিনি ১১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। এ ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তুলতে তিনি কাজ করেছেন।
ফজলে রাব্বী মিয়া ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ, ১৯৯১ সালের পঞ্চম ও ১২ জুন ১৯৯৬ সালের সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পরাজিত হন।
পরে ২০০৮ সালের নবম, ২০১৪ সালের দশম ও ২০১৯ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাইবান্ধা-৫ আসন থেকে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৯০ সালে আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন তিনি। দশম সংসদ থেকে তিনি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।