খোলাবাজারে রেকর্ড অতিক্রম করল ডলারের দাম

Slider অর্থ ও বাণিজ্য

খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) মার্কিন ডলারের মূল্য আবারো ১০৪ টাকা অতিক্রম করেছে। গতকাল এক্সচেঞ্চ হাউজভেদে প্রতি ডলার পেতে ১০৪ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১০৫ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। এদিকে ব্যাংকে ডলারের দামও সেঞ্চরি অতিক্রম করে ১০১ টাকা উঠেছে। যদিও এর চেয়ে বেশি দরে নগদ ডলার লেনদেন করেছে বেশির ভাগ ব্যাংক। কয়েকটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপকরা এ কথা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা যে হারে বাড়ছে, সরবরাহ ওই হারে বাড়ছে না। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক অতিপ্রয়োজনীয় বিশেষ করে জ্বালানি তেল আমদানির দায় মেটাতে ব্যাংকগুলোর ডলার সরবরাহ করছে। তবে ডলারের রিজার্ভ নীচের দিকে নেমে যাওয়ায় এ ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।

ব্যাংকগুলোর তহবিল ব্যবস্থাপকদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, কিছু কিছু ব্যাংক বিদেশী এক্সচেঞ্চ হাউজগুলোর কাছ থেকে বেশি দরে ডলার কিনছে। বৃহস্পতিবার ১০৩ টাকা পর্যন্ত প্রতি ডলারের জন্য ব্যয় করেছে। এর পরও ব্যাংকগুলো তাদের চাহিদা অনুযায়ী ডলার সংস্থান করতে পারেনি। বাধ্য হয়ে অতিপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য আমদানি ঋণপত্রস্থাপন ছাড়া অন্যক্ষেত্রে বন্ধ রাখা হচ্ছে। এভাবে এলসি খোলার হার কমিয়ে দিয়ে ডলারের চাহিদা কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

একটি প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী গ্রুপের মার্কেটিং প্রধান নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ম্যালামাইনের কাঁচামাল বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ যাবত তারা এলসি খুলতে পারছেন না। ব্যাংকগুলো থেকে জানিয়ে দেয়া হচ্ছে, পরে এলসি খোলা হবে। এর ফলে পণ্যের সরবরাহ কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব স্থানীয় বাজারে পড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

এদিকে ডলারের দাম প্রায় প্রতিদিনই বেড়ে যাচ্ছে। গতকাল কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম বেড়ে ১০৫ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। গত মাসের শেষ দিকে খোলাবাজারে ডলারের দাম উঠেছিল সর্বোচ্চ ১০৪ টাকা। ওই সময় হইচই পড়ে যায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হস্তক্ষেপে বাজারে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছিল। ওই সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের সর্বোাচ্চ দর বেঁধে দেয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। কিন্তু কয়েক দিনের মাথায় বেঁধে দেয়া দর থেকে সরে আসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আবারো বাজারের ওপর ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর থেকেই ডলারের দাম আবারো বাড়তে থাকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে প্রায় সবধরনের পণ্যের দাম বেড়ে গেছে। পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় বাজারে পণ্যের ওপর পড়েছে। আগে থেকেই করোনাভাইরাসের প্রভাবে আন্তর্জাতিকবাজারে ব্যবসা মন্দা ছিল, বিশেষ করে বাংলাদেশী শ্রমের প্রধান বাজারগুলো সঙ্কোচিত হয়ে পড়েছিল, এর ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব অর্থনীতির সবক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে। এতে আমদানি ব্যয় যে হারে বেড়েছে, সেই হারে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স আসছে না। পাশাপাশি, করোনার প্রভাবে দুই বছর ব্যবসাবাণিজ্য মন্দার কারণে পণ্য আমদানি ব্যয় ডেফার্ড করা হয়েছিল। এর চাপ পড়েছে বৈদেশিক মুদ্রার ওপর।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, ডলারের সঙ্কটের কারণে আগের মতো এলসি খুলতে পারছেন না তারা। এর ফলে তাদের আয় কমে যাচ্ছে। কারণ, ব্যাংকগুলোর আয়ের একটি বড় অংশই আসে পণ্য আমদানির জন্য এলসি কমিশন থেকে। এলসির হার কমে যাওয়ায় তাদের আয়ও কমে যাচ্ছে। বছরশেষে এর প্রভাব পড়বে ব্যাংকগুলোর নিট আয়ের ওপর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *