ঢাকা: নির্বাচনে কেউ তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ালে, রাইফেল নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে—সকালে এমন বক্তব্য দিলেও বিকেলে সেই বক্তব্য সংশোধন করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বিকেলে তিনি বলেন, আপনারা তলোয়ার-রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করবেন না।
রোববার (১৭ জুলাই) সকালে জাতীয় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) সংলাপে বসে প্রতিরোধ গড়ার ওই আহ্বান জানান সিইসি। তিনি বলেন, কেউ যদি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়ায়, আপনাকে রাইফেল বা আরেকটি তলোয়ার নিয়ে দাঁড়াতে হবে।
তবে বিকেলে বাংলাদেশ কংগ্রেসের সঙ্গে সংলাপে বসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, যদিও নির্বাচন এক ধরনের যুদ্ধ। অনেকেই বলছেন, আসেন যুদ্ধের মাঠে আসেন। সেখানে আসলে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে না। আপনাদের জনসমর্থন নিয়ে যুদ্ধ করতে হবে। আপনারা তলোয়ার, রাইফেল নিয়ে যুদ্ধ করবেন না। আপনাদের জনসমর্থন যারা আছে, তারা আসবে, তারা ব্যালট নিয়ে যুদ্ধ করবে।
বলার আগেই পদ ছেড়ে দেবো:
এনডিএমের সঙ্গে বৈঠকে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে নতুন সরকার এলে প্রয়োজনে পদ ছেড়ে দিতেও দ্বিধা করবেন না বলে জানান সিইসি।
তিনি বলেন, আমি চাই সম্প্রীতি, রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য ও সুন্দর নির্বাচন। আমাদের দিয়ে না, যে কাউকে দিয়ে করানোর (নির্বাচন) জন্য যদি আমাকে এই পদ ছেড়ে যেতে হয়, আমাকে রিকোয়েস্ট করতে হবে না। রিকোয়েস্ট করার আগেই চলে যেতে পারবো। কাজেই এই ভয় যেন বিএনপি বা অন্য কারো মধ্যে না থাকে। এই পদে কিন্তু আমরা আমোদ-ফূর্তি করতে আসি নাই। কঠিন একটি দায়িত্ব নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতে এসেছি। কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছি।
নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবেন:
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, অপপ্রচার সমানে চলছে। ইভিএম সম্পর্কে বিভ্রান্তি সংশয় থেকেই যাচ্ছে। আমরা সত্যি উদ্বিগ্ন হচ্ছি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে অনিয়ম, সহিংসতা, ব্যালট পেপার ছিনতাই হলে প্রতিরোধ কতটা সম্ভব হবে। আমাদের প্রত্যাশা জাতীয় নেতৃবৃন্দ ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা ও মতৈক্য হয়ে বিতর্কিত বিষয়গুলোর নিরসন করে আগামী সাধারণ নির্বাচনের জন্য অনকূল পরিবেশ ও সমতল ভিত্তি সৃষ্টি করবেন। এক্ষেত্রে অরাজনৈতিক সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিগত সংগঠিত হয়ে এগিয়ে এসে জাতির একটি সংকটময় মূহূর্তে তাদের প্রজ্ঞা ও জ্ঞান প্রয়োগ করে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে সংলাপে আহ্বান করে আসন্ন নির্বাচনে রাজনৈতিক মতৈক্য সৃষ্টিতে অবদান রাখতে পারেন।
তিনি বলেন, আমরা নির্বাচন করতে চাই অনুকূল পরিবেশ ও শক্ত ভিত্তির ওপর। এজন্য সকলের সহায়তা কাম্য।
রোববার জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ), বাংলাদেশ কংগ্রেস ও বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল)—এই চারটি দলকে সংলাপে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এদের মধ্যে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ আসেনি।
সংলাপে অংশ নিয়ে এনডিএম একাধিক দিনে সংসদ নির্বাচন করাসহ ১২টি সুনির্দিষ্ট দাবি জানিয়েছে। বিএনএফ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শান্তিপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক ভোট অনিশ্চিত বলে সংশয় প্রকাশ করেছে। আর বাংলাদেশ কংগ্রেস স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় নির্বাচনকালীন ইসির অধীনে আনাসহ নয় দফা দাবি জানিয়েছে।
নির্বাচন কমিশন আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত সবগুলো নিবন্ধিত দলকে সংলাপে বসার জন্য সময় নির্ধারণ করে দিয়ে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। সোমবার (১৮ জুলাই) বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট, খেলাফত মজলিস ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি—এই চারটি দল সংলাপে বসার আমন্ত্রণ পেয়েছে।