সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের মামলার বিচার শুরুর দ্বিতীয় দিনে আরও একজনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এবং স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক বিশ্বনাথ মণ্ডলের আদালতে ৩নং সাক্ষী শহিদুল ইসলাম সাক্ষ্য দিয়েছেন।
আদালতে এ সময় উপস্থিত ছিলেন, এ মামলার ৪০ আসামির মধ্যে তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৩৯ জন আসামি। অপর আসামি জাবিদ রায়হান লাকী অসুস্থ অবস্থায় খুলনা মেডিকেলে ভর্তি থাকায় তিনি আদালতে হাজির করা হয়নি। তাই আসামি পক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষীদের কোনো জেরা করেননি।
আগামী ১৯ জুলাই পি আর বন্ডে অপর দুই সাক্ষী আনছার আলী ও শওকত আলীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ।
আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২) বলেন, ‘এ মামলার ৪০ জন আসামির মধ্যে জাবিদ হাসান লাকী অসুস্থতাজনিত কারণে আদালতে হাজির না থাকায় আমরা সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ পেছানোর আবেদন করেছিলাম। এ অবস্থায় শহিদুল ইসলামের সাক্ষ্যে আমরা আসামি পক্ষের আইনজীবীরা জেরা করা থেকে বিরত ছিলাম।’
এর আগে গত ২৯ জুন কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপনের এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন, সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ, তাকে সহায়তা করেন অতিরিক্ত পিপি জিপি অ্যাড. আতাউর রহমান, অ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু, অ্যাড. জিএম ওকালত হোসেন, অ্যাড. আব্দুল বারী ও বাংলাদেশ সুপ্রিম কোটের অ্যাড. মোহম্মদ হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে, আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করার জন্য সেখানে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২), অ্যাড. মিজানুর রহমানর পিন্টু ও অ্যাড. শাহানারা পারভিন বকুল।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট সকাল ১০টায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের হিজলদি গ্রামের এক মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে দেখতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে আসেন। সেখান থেকে যশোরে ফিরে যাওয়ার পথে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে কলারোয়া উপজেলা বিএনপি অফিসের সামনে রাস্তার ওপর জেলা বিএনপির একজন নেতা দলীয় কর্মীদের নিয়ে একটি যাত্রীবাহী বাস রাস্তার উপরে আড়াআড়ি করে দিয়ে তার গাড়িবহরে হামলা চালায়। হামলায় তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রকৌশলী শেখ মুজিবুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মতিন, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী সাথী ও সাংবাদিকসহ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।
এ ঘটনায় থানা মামলা না নেওয়ায় ওই বছরের ২ সেপ্টেম্বর কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দিন বাদী হয়ে যুবদল নেতা আশরাফ হোসেন, আব্দুল কাদের বাচ্চুসহ ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৭০-৭৫ জনকে আসামি করে আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ১৮ জনকে সাক্ষী করা হয়।
বিভিন্ন আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ১৮ জুলাই হাইকোর্ট নিম্ন আদালতে মামলার কার্যক্রম নতুন করে শুরু করার করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
মুখ্য বিচারিক হাকিম নিতাই চন্দ্র সাহা ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করার জন্য কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ২০১৫ সালের ১৭ মে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কলারোয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিকুর রহমান ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
মামলাটি তিনটি ভাগে ভাগ হয়ে এসটিসি ২০৭/১৫, এসটিসি ২০৮/১৫ দু’টি অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ-২য় আদালতে বিচারাধীন। অপর টিআর ১৫১/১৫ মামলাটি ২০২১ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি অভিযোগপত্রে উল্লেখিত তালা-কলারোয়ার বিএনপি দলীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে চার থেকে সর্বোচ্চ ১০ বছর মেয়াদে সাজা প্রদান করেন সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ুন কবির।
এরমধ্যে আসামি মাহাফুজুর রহমান সাবু কারাগারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এবং ৯ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। বাকী ৪০ জন আসামি কারগারে রয়েছেন। চলতি বছরের গত ১৬ জুন অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনের অপর দুটি মামলায় চার্জ গঠন করা হয়।