যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞায় পড়া র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমকে হিসাব গুটিয়ে নেওয়ার অনুরোধ করেছে বাংলাদেশের বেসরকারি প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড।
যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্থিক খাতের আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে করা প্রতিশ্রুতি রক্ষায় এই অনুরোধ করা হয়েছে বলে জাহাঙ্গীর আলমকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছে প্রাইম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।
গত ফেব্রুয়ারিতে জাহাঙ্গীর আলম প্রাইম ব্যাংকে তাঁর চলতি হিসাব ও এটিএম কার্ড সচল আছে কি না, তা প্রাইম ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চান। তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গত মাসে এই চিঠি পাঠায়।
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম বর্তমানে প্রেসিডেন্টস গার্ড রেজিমেন্টে কমান্ডার হিসেবে কর্মরত।
জাহাঙ্গীর আলমকে এ বিষয়ে আইনি সহযোগিতা দিচ্ছেন আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যাংকের ভূমিকায় তাঁরা সংক্ষুব্ধ।
গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ১০ ডিসেম্বর র্যাব ও এর সাবেক–বর্তমান সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব বিভাগ ও পররাষ্ট্র দপ্তর।
জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ বলেন, প্রাইম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তথ্য না দেওয়ায় তাঁর মক্কেল গত ৭ মার্চ তথ্য অধিকার আইনে ব্যাংকটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেন।
ওই চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলম প্রাইম ব্যাংকের ইস্যু করা এটিএম কার্ড ও ব্যাংক হিসাব সচল না বন্ধ আছে, তা জানাতে অনুরোধ করেন। যদি বন্ধ থাকে, তাহলে কোন সংস্থার নির্দেশে এবং কেন বন্ধ করা হয়েছে বিস্তারিত উল্লেখ করারও অনুরোধ জানান সাবেক এই র্যাব কর্মকর্তা।
এর পরেও সাড়া না পেয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করেন জাহাঙ্গীর আলম। কালক্ষেপণের কারণ ও তথ্য অধিকার আইন ২০০৯ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে জরিমানা আদায়সহ তথ্য সরবরাহের আর্জি জানান তিনি। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও তিনি আবেদন করেন।
এরপরও সাড়া না পেয়ে গত ১৬ মে তথ্য কমিশনে চিঠি দেন জাহাঙ্গীর আলম। ওই দিনই তাঁকে চিঠি দেয় প্রাইম ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। ওই চিঠিতে ব্যাংকটি জানায়, প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়মকানুন মেনে চলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যেহেতু মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নির্বাহী আদেশ রয়েছে, সে কারণে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে আর লেনদেনের সম্পর্ক রাখতে চায় না। এতে করে ব্যাংক নিজেই আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর যে নেটওয়ার্ক সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। ব্যাংক নিজে এবং তার গ্রাহকেরা আন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিতে পড়বে।
চিঠিতে বলা হয়, ব্যাংক বৃহত্তর স্বার্থে ও গ্রাহকদের নিরাপদ লেনদেন নিশ্চিত করার স্বার্থে জাহাঙ্গীর আলমের লেনদেন স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যত দিন না নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে, তত দিন এই সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে।
এদিকে জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দুই পক্ষকে তলব করে তথ্য কমিশন। গত ৩ জুলাই তথ্য কমিশনে দুই পক্ষের আইনজীবীরাই উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে ১৮ জুলাই তথ্য কমিশন রায় দেবে বলে আইনজীবী শেখ আলী আহমেদ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাইম ব্যাংক লিমিটেড আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।