হজ বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর মহাসম্মেলন। প্রতি বছর জিলহজ্জ মাসে পৃথিবীর সকল প্রান্ত থেকে আগত মুসলিম মিল্লাত ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক।’ এই ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে খানায়ে কা‘বায় সমবেত হন। হজ ও কোরবানিতে মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ:-এর স্মৃতির নির্দশনসমূহ ও তার পরিবারের চরম আত্মত্যাগেরই স্মরণ করা হয়। এর পেছনে রয়েছে এক মর্মস্পর্শী মহৎ ইতিহাস।
আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জনই হজের অন্যতম উদ্দেশ্য। লোক দেখানো যেকোনো ধরনের কার্যক্রমই ইবাদত-বন্দেগির চেতনাকে বিনষ্ট করে দেয়।
তবে বর্তমানে হজের মতো গুরুত্বপূর্ণ ও মহান ইবাদতে গিয়েও মোবাইল ফোনের ক্যামেরা ব্যবহার করে সেলফি তথা নিজেদের ছবি তোলায় ব্যস্ত হচ্ছেন অনেক হজযাত্রী। ইহরাম বাঁধার স্থান (মিকাত) থেকে শুরু করে বিমানে, ইহরামে, বায়তুল্লাহ তাওয়াফে, জমজমের পানি পানে, সাফা-মারওয়া সায়িতে, আরাফাতের ময়দানে, মিনার কঙ্কর নিক্ষেপে এমনকি মাথামুণ্ডনেও সেলফি তুলে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের হিড়িক চলছে।
সেলফি তোলার মূল উদ্দেশ্যই হলো আত্মপ্রদর্শন। যাকে শরিয়তের ভাষায় ‘রিয়া’ বলা হয়। হজের মতো ইবাদতে এহেন হীন কাজের পরিণতি হতে পারে খুবই ভয়াবহ।
হাদিসে এসেছে, ‘সামান্যতম রিয়াও (লোক দেখানো আমল) শিরক।’ (সুনান ইবনে মাজাহ : ৩৯৮৯)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি লোক দেখানো ইবাদত করে, আল্লাহ এর বিনিময়ে তার লোক দেখানো উদ্দেশ্য প্রকাশ করে দেবেন।’ (সহীহ বুখারী: ৬৪৯৯)
বর্তমানে মহামারীর মতো ছড়িয়ে পড়া এই সেলফি তোলা ও ভিডিও করা বিশ্বনবীর সা: হাদিসের সম্পূর্ণ পরিপন্থী। যেখানে মানুষ শুধু আল্লাহকে পেতেই যায়, সেখানে লাইক-কমেন্ট পেতে মরিয়া হওয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ।
পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে কোনো পুণ্য নেই; পুণ্যবান তো সে-ই, যে আল্লাহর ওপর ঈমান এনেছে, ঈমান এনেছে শেষ দিবসের ওপর এবং সব ফেরেশতা, কিতাবসমূহ ও নবীগণের ওপর।’ (সূরা বাকারা: ১৭৭)
এ আয়াতে গভীর শিক্ষা রয়েছে প্রত্যেক ঈমানদারের জন্য। খুব সচেতন থাকতে হবে—ইবাদত যেন শুধু অঙ্গভঙ্গিতে রূপান্তরিত না হয়। প্রতিটি আমলই যেন শুধু আল্লাহর জন্য হয়। মানুষকে দেখানোর কোনো প্রবণতা থাকবে না সেখানে। কারণ আল্লাহ আমাদের অন্তর দেখেন। সেজন্যই মহান রাব্বুল আলামিন ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না তার (কোরবানির প্রাণীর) গোশত ও রক্ত; বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া।’ (সূরা হজ : ৩৭)
অতএব, হজের সময় হাজিদের সেলফি তোলা থেকে বিরত থাকাই আবশ্যক।
তাই হজে যাওয়ার আগে নিয়তকে বিশুদ্ধ করতে হবে। তা না হলে সেলফির মতো অযথা কাজ থেকে বাঁচা যাবে না, কোনো প্রতিফলও পাওয়া যাবে না। মক্কা-মদিনায় শুধু ঘুরে আসা হবে।
এছাড়া মনে রাখতে হবে বাইতুল্লাহ জিয়ারত বা হজ মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইবরাহীম আ:-এর স্মৃতির নির্দশনসমূহ ও তার পরিবারের চরম আত্মত্যাগেরই স্মরণ। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর সন্তুষ্টির জন্য হজের মহাসম্মেলনে অংগ্রহণ ও একমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই কোরবানি করার তাওফীক দান করুন। আমীন!