চামড়া কিনতে ১১ ব্যাংক ঋণ দেবে ৪৪৩ কোটি টাকা

Slider অর্থ ও বাণিজ্য


ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কিনতে এবার ১১টি ব্যাংক ব্যবসায়ীদের ঋণ দেবে ৪৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঋণ দেবে ইসলামী ব্যাংক ১৭০ কোটি টাকা। এর পরেই ঋণ দেবে জনতা ব্যাংক ১২০ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংক ঋণ দেবে ৮৩ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো যেন বরাদ্দকৃত সমুদয় অর্থই ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিতরণ করতে পারে সে জন্য ইতোমধ্যে ঋণ নবায়নের শর্ত শিথিল করা হয়েছে। অনাদায়ী ঋণের মাত্র ২ শতাংশ পরিশোধ করেই ঋণ নবায়ন করতে পারবেন। একই সাথে নতুন ঋণ নেয়ার জন্য কোনো ধরনের কম্প্রোমাইজড এমাউন্টন বা নবায়নের পর বাড়তি অর্থ পরিশোধ থেকেও তাদেরকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। এতে ব্যাংকগুলোর বরাদ্দকৃত অর্থ ঋণ নিয়ে কোরবানির পশুর চামড়া কিনতে আর কোনো বাধা থাকবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র জানিয়েছে, দেশীয় কাঁচামালভিত্তিক চামড়াশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের প্রায় অর্ধেক জোগান আসে প্রতি বছর পবিত্র ঈদুল আজহার কোবানির পশুর চামড়া থেকে। এ সময়ে চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান নিশ্চিত করা হলে এক দিকে মূল্যবান কাঁচামাল সংরক্ষণ করা সম্ভবপর হবে, অন্য দিকে কোরবানিকৃত পশুর চামড়া বিক্রির মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিকভাবে উপকৃত হবে। এ লক্ষ্যে চামড়া ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান নীতিমালা শিথিল করা হয়েছে। তবে এ নীতিমালা কতটুকু কার্যকর হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, প্রতি বছরই ব্যাংকগুলো চামড়া খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ করে থাকে। এ জন্য ব্যাংকগুলোর পর্ষদ অনুমোদন দিয়ে থাকে। কিন্তু প্রতিবারই ব্যাংকগুলো বরাদ্দকৃত অর্থের সমুদয় অংশ বিতরণ করতে পারে না। এর অন্যতম কারণ হলো বকেয়া ঋণ পরিশোধ না করায় নতুন ঋণ দিয়ে পুরনো ঋণ সমন্বয় করে ব্যাংকগুলো। এর ফলে একজন গ্রাহক যেখানে ১০ কোটি টাকা ঋণ পাওয়ার কথা, সেখানে আগের ঋণ সমন্বয় করতে গিয়ে নিট ঋণ পায় দুই কোটি টাকা। এতে প্রভাব পড়ে কাঁচা চামড়ার বাজারে। প্রতি বছরই দেখা যাচ্ছে, কোরবানির চামড়া পানির দামে বিক্রি হচ্ছে। কখনো কখনো চামড়া বিক্রি করতে না পেতে মাটিতে পুঁতে রেখেছে। মহামূল্যমান এ চামড়া যেখানে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের বড় উৎস, সেখানে কাঁচা চামড়া বিক্রি করতে না পেরে নষ্ট হয়ে গেছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অর্থায়নের অভাব। মাঠপর্যায়ে ব্যবসায়ীদের হাতে নগদ অর্থ না পৌঁছানোর ফলে কোরবানির চামড়ার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন সুবিধাভোগীরা। এ সুযোগটি কাজে লাগায় একশ্রেণীর মধ্যস্বত্বভোগীরা। অনেকসময় কাঁচা চামড়া প্রতিবেশী দেশে পাচার হওয়ারও অভিযোগ ওঠে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, ২০২০ সালে ঈদুল আজহার আগে পাঁচ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এ খাতে বরাদ্দ রেখেছিল ৬৪৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা; কিন্তু এর বিপরীতে ব্যবসায়ীরা ঋণ পেয়েছিল মাত্র ৬৫ কোটি টাকা। গত বছরও বরাদ্দ রাখা হয়েছিল ৫৮৩ কোটি টাকা; কিন্তু অর্ধেকেরও কম ঋণ বিতরণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। গত বছর অগ্রণী ব্যাংক চামড়া খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছিল ১২০ কোটি টাকা। এ বছর ব্যাংকটি এ খাতে বরাদ্দ রেখেছে ৮৩ কোটি টাকা। রূপালী ব্যাংক গত বছর বরাদ্দ রেখেছিল ২২৭ কোটি টাকা, এবার ব্যাংকটি এ খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছে মাত্র ৩০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান মতে, জনতা ব্যাংক গত বছর চামড়া খাতে ঋণ বিতরণের জন্য বরাদ্দ রেখেছিল ১৪০ কোটি টাকা। এ বছর ব্যাংকটি এ খাতে বরাদ্দ রেখেছে ১২০ কোটি টাকা। রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ ব্যাংক সোনালী ব্যাংক গত বছর চামড়া খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছিল মাত্র ২৫ কোটি টাকা, এবারো ব্যাংকটি বরাদ্দ রেখেছে ২৫ কোটি টাকা।
বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক গত বছর কাঁচা চামড়া কিনতে ৬৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখে। এ বছর ব্যাংকটি এ খাতে বিনিয়োগ দিতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ রেখেছে ১৭০ কোটি টাকা। আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক গত বছর এ খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছিল এক কোটি ৯ লাখ টাকা। এবার ব্যাংকটি এ খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছে পাঁচ কোটি ২০ লাখ টাকা।

পরিসংখ্যান মতে, ঢাকা ব্যাংক এ বছর চামড়া খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছে তিন কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংক গত বছর এ খাতে ঋণ দিতে বরাদ্দ রেখেছিল ৫০ লাখ টাকা, এবারো একই বরাদ্দ রাখা হয়েছে। দি সিটি ব্যাংক গত বছর বরাদ্দ রেখেছিল ২০ লাখ টাকা, এবার বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া যমুনা ব্যাংক পাঁচ কোটি টাকা ও সাউথ-বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক এক কোটি টাকা চামড়া কিনতে ঋণ দেয়ার জন্য বরাদ্দ রেখেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *