তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে টানা দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে এক ম্যাচ হাতে রেখেই ড্যান কেক সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার মিরপুরে ওপেনার তামিম ইকবালের অপরাজিত ১১৬ রানের সুবাধে ৭ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়েছে টাইগাররা।
এর আগে পকিস্তানের দেওয়া ২৪০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ঝড়ো সূচনা করেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। মাত্র ২ ওভার ৫ বলে দলীয় ২২ রানে পাকিস্তানের উইকেট কিপার সরফরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান সৌম্য সরকার। জুনাইদ খানের বলে আউট হওয়ার আগে ১১ বলে ১৭ রান করেন সৌম্য।
সৌম্যর আউটের আরও যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন তামিম ইকবাল। মাহমুদুল।লাহকে সঙ্গে নিয়ে পাকিস্তানি বোলারদের ওপর ‘স্টিম রোলার’ চালান এ ওপেনার। ১৪ ওভার বলে শতরানে পৌঁছানোর পথে তামিম- মাহমুদুল্লাহ মিলে ৭৮ রানের জুটি গড়েন। এর মধ্যে তামিম একাই করেন ৬১ রান।
দলীয় ১০০ রানের মাথায় সাঈদ আজমলের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। এর আগে ২৮ বলে ১৭ রান করেছেন মাহমুদুল্লাহ।
এর পর মুশফিককে সঙ্গে নিয়ে আরও ১১৮ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল। রাহাত আলির বলে ব্যক্তিগত ৬৫ রানে আউটের আগে তামিমের সঙ্গে ১১৮ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যান।
এর আগে রোববার বিকেলে টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান। ইনিংসে শুরুতেই বাংলাদেশি বোলারদের তোপের মুখে পড়ে পাকিস্তান। অধিনায়কের সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণ করে দলীয় ৭৭ রানে টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটসম্যান আউট হন। এর পর সাদ নাসিমকে সঙ্গে নিয়ে ৭৭ রানের জুটি গড়েন হারিস সোহেল। অধিনায়ক মাশরাফির করা ৩৯তম ওভারের শেষ বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে সাজঘরের পথ ধরেন হারিস। সাদ তখন ৬০ রানে অপরাজিত।
হারিস আউটের পর উইকেটে আসেন পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। তাকে সঙ্গে নিয়ে শেষ পর্যন্ত লড়ে যান সাদ। ৫০ ওভার শেষে পাকিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২৩৯ রান। সপ্তম উইকেট জুটিতে ৬৬ বলে ৮৫ রান সংগ্রহ করেন ওয়াহাব ও সাদ।
৯৬ বলে ৭৭ রান করে অপরাজিত থাকা সাদ নাসিমের দৃঢ়তা আর ওয়াহাব রিয়াজের ৪০ বলে ৫১ রানের সময়োপযোগী অর্ধ-শতক পাকিস্তানকে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেয়। এ দু’জনের ব্যাটিংয়ের সুবাধে শেষ ৫ ওভারে ৪৯ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান।
১০ ওভারে ৫১ রান দিয়ে ২ উইকেট পাওয়া সাকিবই আজ বাংলাদেশের সফল বোলার। এছাড়া মাশরাফি, নাসির, রুবেল ও আরাফাত একটি করে উইকেট পেয়েছেন। ৭৭ রান করে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংগ্রাহক সাদ নাসিম। ওয়াহাব রিয়াজের ৫২ ছাড়াও ওপেনার আজহার আলি ৩৬ এবং মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হাসির সোহেলের ৪৪ রানই বলার মতো স্কোর।
১০০ রানে ২ উইকেট পতনের পর দলকে জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন মুশফিক-তামিম- ।এর আগে রোববার দুপুর আড়াইটায় ঢাকার মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয়।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে বোলিংয়ে এসে নিজের প্রথম বলেই আঘাত হানেন বাংলাদেশের পেসার রুবেল হোসেন। রুবেলের করা প্রথম বলে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান সরফরাজ। তিনি করেন ৭ রান।
পরের ওভারেই মোহাম্মদ হাফিজকে পরিষ্কার বোল্ড আউট করে সাজঘরে ফেরত পাঠান বাঁহাতি স্পিনার আরাফাত সানি। রানের খাতায় শূন্য নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় হাফিজকে।
এরপর ১৬তম ওভারে বোলিংয়ে এসে পাকিস্তানের অধিনায়ক আজহার আলিকে ফেরান। ওই ওভারে তৃতীয় বলে উইকেট রক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার আগে আজহার করেন ৩৬ রান।
পরের ওভারে বোলিংয়ে এসেই কোনো রান করা ফাওয়াদ আলমকে বোল্ড করে সাজঘরে ফেরত পাঠান নাসির হোসেন।
ইনিংসের ২২তম ওভারে বোলিংয়ে এসে পাকিস্তান ইনিংসে আবারও আঘাত হানেন অলরাউন্ডার সাকিব। এবার তার শিকার মোহাম্মদ রিজওয়ান। ওভারের তৃতীয় এলবিডব্লিউ হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে তিনি করেন ১৩ রান।
বিশ্বকাপে স্লো ওভার রেটের কারণে এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে এই ম্যাচে দলে ফিরেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। আর বাদ পড়েছেন পেসার আবুল হাসান।
শুক্রবার মিরপুরে প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ দল: তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম (উইকেট রক্ষক), সাকিব আল হাসান, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), আরাফাত সানি, রুবেল হোসেন এবং তাসকিন আহমেদ।
পাকিস্তান দল: মোহাম্মদ হাফিজ, আজহার আলি (অধিনায়ক), হারিস সোহেল, সাদ নাসিম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, ফাওয়াদ আলম, সরফরাজ আহমেদ (উইকেট রক্ষক), ওয়াহাব রিয়াজ, জুনাইদ খান, সাঈদ আজমল এবং রাহাত আলি।