ঢাকা: বাড়ি বাড়ি গিয়ে চলমান ভোটার তালিকা হালনাগাদ কর্মসূচিতে অবাঞ্চিত ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহ না করার জন্য মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে অবাঞ্চিত ব্যক্তি বলতে দেশের নাগরিক নয়, এমন ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।
ইসির নির্বাচন সহায়তা শাখা-২ এর সহকারী সচিব মো. মোশাররফ হোসেন সব আঞ্চলিক, জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের সম্প্রতি নির্দেশনাটি পাঠিয়েছেন।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে- অবাঞ্ছিত ব্যক্তিদের তথ্য যেন সংগৃহিত না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া রোহিঙ্গারা যাতে কোনোভাবেই ভোটার তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হতে না পারে, সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কেবল রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা বা চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৩২ বিশেষ উপজেলা নয়, দেশের সব এলাকার জন্যই সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশন কর্মকর্তাদের এক্ষেত্রে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। নির্দেশনায় বলা হয়েছে-
(ক) রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান অথবা মিথ্যা কাগজপত্র সরবরাহ করেন এবং তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে;
(খ) বিশেষ এলাকাসমূহে ভোটারদের ভোটার এলাকা স্থানান্তর কার্যক্রম সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে;
(গ) রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য প্রদান অথবা ভুয়া কাগজপত্র সরবরাহ করেন তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে;
(ঘ) বিশেষ এলাকাসমূহে ভুমিহীন সনদে সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের প্রত্যয়ন ছাড়া কাগজাদি কোনোরুপেই গ্রহণযোগ্য হবে না; এবং জমির খতিয়ান/দলিল (দাদা/পিতা/স্বামী/নিজ নামীয়) সংশ্লিষ্ট উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের প্রত্যয়নকৃত না হলে তা অগ্রহণযোগ্য হবে;
(ঙ) হালনাগাদ কার্যক্রম ও চলমান প্রক্রিয়ায় ভোটার তালিকায় নিবন্ধনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া থেকে নিবৃত করার বিষয়ে কারো গাফিলতি পরিলক্ষিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা এবং প্রচলিত আইনানুগ ফৌজদারী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে;
(চ) হালনাগাদ কার্যক্রমে বিশেষ এলাকাসমূহে জমির দলিল ও পাওয়ার অব এটর্নীর দলিল নোটারীর মাধ্যমে করা হলে তা অগ্রহণযোগ্য বিবেচনা করতে হবে;
(ছ) বিশেষ এলাকাসমূহে বাংলাদেশি ছেলের সঙ্গে মায়ানমারের মেয়ে এবং মায়ানমারের ছেলের সঙ্গে বাংলাদেশি মেয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে পরবর্তীতে বাংলাদেশী নাগরিক দাবীকারীদের ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তি করা যাবে না;
(জ) বিশেষ এলাকাসমূহে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা-২০২০ অনুযায়ী যেসব বাংলাদেশের নাগরিকগণ গৃহ পাবেন তাদের ক্ষেত্রে সরকারিভাবে গৃহ পাওয়ার বরাদ্দপত্র, গৃহ গ্রহণের প্রমাণক এবং সংশ্লিষ্ট স্থানীয় জনপ্রতিনিধি কর্তৃক ইস্যুকৃত নাগরিকত্ব/জাতীয়তা সনদপত্রে স্মারক নম্বর ও তারিখ সম্বলিত কাগজাদি উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রত্যয়নকৃত হলে তা যাচাই করে গ্রহণ করা যাবে;
(ঝ) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকার ভোটার নিবন্ধনের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নাগরিক সনদ (রঙিন ছবিযুক্ত), তার পিতা-মাতা/স্বামী/স্ত্রীর এনআইডি, পিতা-মাতার নাগরিক সনদ, নিবাহনামা/কাবিননামা (বিবাহিত হলে), পাসপোর্ট (যদি থাকে), পাবলিক পরীক্ষার সনদ এবং অনলাইন জন্ম/মৃত্যু সনদের ভেরিফাইড কপি যাচাইপূর্বক গ্রহণযোগ্য হবে;
(ঞ) স্থানীয় মেয়র/চেয়ারম্যান কর্তৃক সম্প্রতি প্রদত্ত জাতীয়তা/নাগরিকত্ব সনদের মূলকপি, স্মারক নং ও তারিখ সম্বলিত প্রত্যয়নপত্র, রঙিন ছবিযুক্ত ও ছবির উপর কর্তৃপক্ষের সীলমোহর সম্বলিত হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে;
(ট) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য ফরমের পাশাপাশি ভোটারযোগ্য নাগরিকদেরকে অনলাইন নিবন্ধন ফরম (ফরম-২) পূরণ এবং পূরণকৃত ফরম ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে দাখিল করলে তা গ্রহণযোগ্য হবে। তবে বিশেষ এলাকার জন্য অতিরিক্ত বিশেষ তথ্য ফরম আব্যশিকভাবে পূরণ করে দাখিল করতে হবে;
(ড) রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় তথ্যসংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান/সাধারণ মেম্বার/সংরক্ষিত মেম্বার/চৌকিদারের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন; এবং
(ঢ) রোহিঙ্গারা যাতে কোন মতেই ভোটার হিসেবে বিশেষ এলাকাসমূহে বা দেশের অন্য কোন অঞ্চলে নিবন্ধিত না হতে পারে সেবিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
এছাড়া রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকাসমূহের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য ফরমে উল্লিখিত যাবতীয় তথ্যাদি এবং তথ্যাদির স্বপক্ষে প্রমাণক হিসেবে দাখিলকৃত ডকুমেন্টস ‘বিশেষ কমিটি’ পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করবেন। বিশেষ কমিটি’-কে বিশেষ এলাকার জন্য প্রযোজ্য প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-বাছাইপূর্বক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম চলবে আগামী ২০ নভেম্বর পর্যন্ত। এবারের হালানাগাদে ভোটার বৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ ৮৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫২৬ জন ব্যক্তিকে হানাগাদের অন্তর্ভূক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। এবারও গতবারের মতো তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বা তার পূর্বে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এদের মধ্যে যাদের বয়স যখন ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তখন তারা স্বয়ংক্রিভাবে ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।
সর্বশেষ বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালানাগাদ হয়েছিল ২০১৯ সালে। সে সময় ২০০৪ সালের ১ জানুয়ারি বা তার আগে যারা জন্মগ্রহণ করেছেন, তাদের তথ্য নেওয়া হয়েছিল। অর্থাৎ সে সময়ও তিন বছরের তথ্য একসঙ্গে নেওয়া হয়েছিল।
২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর এ পর্যন্ত ভোটার তালিকা হালানাগাদ করা হয়েছে পাঁচবার। ২০০৯-২০১০ সাল, ২০১২-২০১৩ সাল, ২০১৫-২০১৬ সাল, ২০১৭-২০১৮ সাল ও ২০১৯-২০২০ সালে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হালনাগাদ কার্য-ক্রম পরিচালনা করেছে ইসি। বর্তমানে ভোট আয়োজনকারী কর্তৃপক্ষটির তথ্য ভাণ্ডারে মোট ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটারের তথ্য রয়েছে। এদের মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ জন এবং মহিলা ভোটার ৫ কোটি ৫৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৭ জন। হিজড়া ভোটার আছে ৪৫৪ জন।