বিশেষ দল নয় জনগণের সাথে সম্পর্ক রাখুক ভারত : খালেদা জিয়া

Slider অর্থ ও বাণিজ্য গ্রাম বাংলা জাতীয় টপ নিউজ ঢাকা রাজনীতি সারাবিশ্ব

49689_khaleda-zia-susoma-shoraj-m
গ্রাম বাংলা ডেস্ক:  বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ চায় ভারত কোনো বিশেষ দল বা ব্যক্তির সাথে নয়, জনগণের সাথে সম্পর্ক রাখুক। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের সাথে তার সাম্প্রতিক বৈঠকটি ছিল অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্র্ণ। ভারতীয় পত্রিকাটির সাথে সাক্ষাতকারে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে মোদি সরকারের আমলে সীমান্ত সমস্যা, তিস্তার পানিবণ্টনসহ বিভিন্ন সমস্যার সমাধান হবে। তিনি আরো বলেন, মোদি তাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। জামায়াত প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দলটির সাথে তাদের নির্বাচনী সমঝোতা হয়েছে। তিনি গত নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা প্রশ্নে জনগণের মধ্যে বিরাজমান ধারণা সম্পর্কেও আলোকপাত করেন।
সাক্ষাতকারে তিনি আরো বলেন, এই দেশের জনগণ ৫ জানুয়ারির নির্বাচন গ্রহণ করেনি। তাই এটা অবৈধ সরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আওয়ামী লীগ সরকারকে তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিতে বলছে।
সাক্ষাতকারে তিনি ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের কাছে তার প্রত্যাশা, সাবেক কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার নিয়ে তার ভাবনা এবং বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন। রোববার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসে সাক্ষাতকারটি নেয়া হয়েছিল।
প্রশ্ন : সুষমা স্বরাজের সাথে আপনার বৈঠকটি কেমন হয়েছে?
খালেদা জিয়া : অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বৈঠকটি হয়েছিল। তিনি খুবই চমৎকার মানুষ। আমরা দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। উদাহরণ হিসেবে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড শূন্যে নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে বলে তিনি বলেছেন। তিস্তা ও স্থল সীমান্ত চুক্তি সম্পর্কে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন যে এগুলো করা হবে। তিনি দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে কথা বলেছেন। এসব প্রসঙ্গ আলোচিত হয়েছে। শুষ্ক মওসুমে পানির প্রবাহ বাধা দিয়ে ভারত আমাদের পানি না দেয়ায় বাংলাদেশের মানুষ ুব্ধ হয়। ভারতের হওয়া উচিত বৃহৎ প্রতিবেশী। আমাদের মধ্যে এত বিশাল সীমান্ত থাকায় নানা সমস্যা থাকতেই পারে। কিন্তু লোকজনকে হত্যা করা হলে জনগণ ক্রুদ্ধ ও উত্তেজিত হয়ে পড়ে। তিনি নিষ্পত্তি না হওয়া দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো নিয়ে আমাদের উদ্বেগ এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর জন্য আমার প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গিকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন?
খালেদা জিয়া : তারা এখনো থিতু হননি। আমি মোদিকে দুটি চিঠি পাঠিয়েছি, একটি তার বিজয়ের পর, আরেকটি শপথ গ্রহণের পর। দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সম্পর্ক জোরদার করতে নতুন সরকারের কাছ থেকে সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি আশা করা যেতে পারে।… তিনি তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে সার্ক নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ, এতে তার দূরদর্শিতা প্রকাশ পেয়েছে। তিন দশক আগে আমার স্বামী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যে সার্কের ধারণা দিয়েছিলেন, এটা তার স্বীকৃতিও। এখন মোদি এর প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করছেন। আমরা মনে করি, এই অঞ্চলের জন্য এটা কল্যাণকর হবে। আমরা চাই আমাদের দেশ উন্নতি করুক, আমরা ভারতের উন্নতিও কামনা করি।
প্রশ্ন :  নেতা হিসেবে মোদিকে আপনার কেমন মনে হয়?
খালেদা জিয়া : ভারতের জনগণই মোদিকে বিচার করবে। সুশাসন এবং অর্থনীতির ওপর তার গুরুত্ব দেয়াটা ভারতের জনগণ স্বাগত জানাবে।
প্রশ্ন : তিনি কি আপনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন?
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, তাকে অভিনন্দিত করার সময় আমাদের মধ্যে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
প্রশ্ন : আপনি কি ভারত সফরের পরিকল্পনা করছেন?
খালেদা জিয়া : আপনি জানেন যে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন, আমি বেশ ব্যস্ত। এই দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। ৯৫ ভাগ লোক আমাদের সাথে রয়েছে। তারা অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়।
প্রশ্ন : নির্বাচনের সময় পূর্ববর্তী ভারত সরকার আপনাকে সমর্থন না করায় আপনি কি হতাশ হয়েছিলেন?
খালেদা জিয়া : তাদের পররাষ্ট্রসচিব [সুজাতা সিং] এখানে এসেছিলেন। তিনি প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে এইচ এম এরশাদের অংশ নেয়া উচিত, অন্যথায় নির্বাচন হবে না এবং মৌলবাদীরা ক্ষমতায় চলে আসবে। তিনি আমাদেরও বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু রাজি হইনি। আমরা কেন ওই নির্বাচনে অংশ নিতে পারিনি তা আমরা তাকে বলেছি। আমরা একটি রাজনৈতিক দল, কোনো গোপন সংগঠন নই। নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে অংশগ্রহণের কোনো সুযোগ থাকে না। পরে এরশাদ প্রকাশ্যে বলেন যে তিনি নির্বাচনে অংশ নেবেন না। কিন্তু পরে কোনো না কোনোভাবে, আমি জানি না কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার কোনো ধরনের ভূমিকা পালন করেছিলেন কি না, অনেকে তা বিশ্বাস করে। কারণ পররাষ্ট্র সচিব এসব কিছু বলেছিলেন। সত্যিই এরশাদ পরে বলেছিলেন যে পররাষ্ট্রসচিব তাকে চাপ দিয়েছেন। আর তারা [ভারত] একমাত্র দেশ যারা নির্বাচনে স্বীকৃতি দিয়েছিল। নির্বাচনে কোনো পর্যবেক্ষক ছিল না। ফলে নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। আর এই দেশের জনগণ নির্বাচনটি গ্রহণ করেনি। তাই এটা অবৈধ সরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তাদেরকে তাড়াতাড়ি নির্বাচন দিতে বলছে।
আওয়ামী লীগ সরকার জানে যে দেশে বা বিদেশে তাদের বৈধতা নেই। আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের বলছে যে প্রথমে তাদেরকে বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেই, তারপর আমরা আলোচনা করব। ফলে তাদের অবৈধতা প্রকাশ হয়ে পড়েছে।… আমি সুষমা স্বরাজকে বলেছি, কোনো দেশে এমন নির্বাচন হয়নি যাতে সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছেন। ২, ৪, ৫ জন হতে পারে, কিন্তু ১৫৪ জন? মন্ত্রিসভার সব সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে তা দেখাতে ডামি প্রার্থী দাঁড় করানো হয়েছিল।
প্রশ্ন : নতুন বিজেপি-নেতৃত্বাধীন সরকার এবং কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন সরকারের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে বলে আপনি মনে করেন?
খালেদা জিয়া : সুনির্দিষ্ট রায় দেয়ার সময় এখনো আসেনি। আবারো বলতে হয়, ওই রায় দেবে ভারতের জনগণ। তবে যেকোনো পরিবর্তনই ভালো কিছু হওয়ার আশা জাগায়। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এবং সার্বিকভাবে এই অঞ্চলে কী ঘটে সেটার প্রতি আমাদের আগ্রহ রয়েছে। তার সরকারের নজর প্রতিবেশী দেশগুলোর জনগণের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টি এটা এবং কেবল নির্দিষ্ট কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ না রাখার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ পরিবর্তন।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন কংগ্রেস-নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের প্রতি তার প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করেনি?
খালেদা জিয়া : বাংলাদেশের জনগণের ধারণা সেটাই। সত্যিকার অর্থে, এটা বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ সুরক্ষা করতে সরকারের একটা ব্যর্থতা কিংবা ইচ্ছার অভাব। এর ফলে নিষ্পত্তি না হওয়া বিষয়গুলো আরো বড় সমস্যায় পরিণত হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন যে ওই সরকার আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে খুবই ঘনিষ্ঠ ছিল এবং তা বাংলাদেশের জন্য কল্যাণকামী ছিল না?
খালেদা জিয়া : এখানে এমন ধারণাই রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ আন্তরিকভাবে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায়। এই সম্পর্ক বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির নয় বরং দুই দেশের জনগণের স্বার্থ সমুন্নত রাখবে। আমি কাউকে এজন্য দায়ী করতে চাই না,তবে আওয়ামী লীগ তাদেরকে তা করতে বাধ্য করেছে। আর ভারত সরকার তার সমর্থন দিয়েছে। এরশাদ এমনকি এখনো একথা বলেন যে তিনি নির্বাচনে যেতে চাননি, তাকে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। তিনি বলছেন, তিনি প্রত্যাহারপত্র দিয়েছিলেন, তা গৃহীত হয়নি। ফলে ধারণার সৃষ্টি হয়েছে যে ভারত সরকার ভূমিকা পালন করেছে।
প্রশ্ন : তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে বাধা দেয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ভূমিকা আপনি কিভাবে দেখেন?
খালেদা জিয়া : মনমোহন সিংয়ের সফরের সময় ঘোষণা করা হয়েছিল যে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে, যদিও বাংলাদেশের জনগণ এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানত না। শেষ মুহূর্তে চুক্তিটি হয়নি এ কারণে যে মমতা এর বিরোধিতা করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ জানে না আসলে কী ঘটেছিল। আমি মমতার সাথে দেখা করিনি, ফলে আমি জানি না কে বাধা দিয়েছে। আমাদের সরকার তেমনটা [মমতার বাধা দেয়ার কথা] বলছে। হাসিনা তেমন বলছেন।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন, বিজেপি স্থল সীমানা চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করাতে পারবে নাকি আবারো মমতা বাধা দেবেন বা বিজেপির আসাম ইউনিট বাধা দেবে?
খালেদা জিয়া : চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ ওই বছরই তা অনুমোদন করেছিল। কিন্তু ভারত এখন পর্যন্ত করেনি। ছিটমহলের বাসিন্দারা সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। তারা দীর্ঘ দিন ধরে অনিশ্চয়তার মধ্যে বাস করছে। এটা আমাদের সম্পর্কের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে। এখন বিজেপি বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করায় আশা করা যাচ্ছে যে এটার নিরসন শিগগিরই হবে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় আপনি ভারতের তিন প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাত পেয়েছেন। আপনি কিভাবে পি ভি নরসীমা রাও, অটল বিহারি বাজপেয়ি এবং মনমোহন সিংকে মূল্যায়ন করবেন?
খালেদা জিয়া : তারা সবাই চমৎকার মানুষ। মনমোহন সিং ছিলেন ভদ্রলোক, খুবই বিনয়ী। বাজপেয়ি ছিলেন প্রবীণ লোক, আমি তার সাথে কথা বলেছি। আমি সফরকালে রাওয়ের সাথে দেখা করেছি। তাদের মধ্যে কে ভালো কে মন্দ তা আমি বলতে পারব না। তাদের সবাই এবং মোদির নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার বলেছেন, [বাংলাদেশের সাথে] সব সমস্যার নিরসন হবে।
প্রশ্ন : কিন্তু তারা এসব সমস্যার সমাধান করতে পারেননি?
খালেদা জিয়া : এখন পর্যন্ত তারা তা করতে পারেননি। তবে আমরা আশাবাদী যে আগের সরকারগুলো যা পারেনি, পূর্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মোদি তা করতে পারবেন।
প্রশ্ন : ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ে আগের বিএনপি সরকারের ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগ ছিল। ভারতের এই উদ্বেগ নিরসনে আপনি কী করেছেন?
খালেদা জিয়া : উদ্বেগটা যথাযথ ছিল না। বিএনপি সম্পর্কে ভুল ধারণা সৃষ্টির জন্য এটা ছিল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রপাগান্ডা। আমরা ভারত বা অন্য কোনো প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করতে না দেয়ার ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা কাজের মাধ্যমে তা প্রমাণও করেছি।
আরেকটি উদ্বেগ ছিল বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে।
আমি সংখ্যালঘু শব্দটি ব্যবহার করব না। আমি বলি, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যক্তির সমান অধিকার রয়েছে। বাস্তবে, বিএনপি আমলে তারা খুবই ভালো ছিল। আওয়ামী লীগ আমলে মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে, কেউ নিরাপদ নেই। ফলে পরিস্থিতির বেশ অবনতি ঘটেছে। বাবরি মসজিদ ভাঙার সময় আমি ছিলাম প্রধানমন্ত্রী। আমি সঙ্গে সঙ্গে দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রশমিত করার জন্য কঠোর অবস্থান গ্রহণ করি। আমি মন্দির ভাঙার ছবি প্রচার না করতে বলি। আমার মন্ত্রিরা হিন্দু সম্প্রদায়কে পাহারা দিতে বিনিদ্র রজনী অতিবাহিত করেছে।
প্রশ্ন : মোদি সরকারের অবৈধ অভিবাসনবিষয়ক নীতিতে আপনি কি উদ্বিগ্ন?
খালেদা জিয়া : নির্বাচনী প্রচারকালে আমরা অনেকবার বিষয়টি শুনেছি। আমরা অতীতেও এমন শুনেছি। বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ অভিবাসী গেছে এমন সুস্পষ্ট প্রমাণ কেউ দিতে পারেনি। সুষমা স্বরাজ বিষয়টি উত্থাপন করেননি। নির্বাচনকালে জেতার জন্য অনেক কথা বলেন (আমরাও অনেক কথা বলি), কিন্তু তা বাস্তবায়ন করা হবে তেমন বোঝান না। আর আমি মনে করি না ভারতে তেমন সংখ্যক বাংলাদেশী আছে। তারা সবাই এখানেই ভালো আছে।
প্রশ্ন : বাংলাদেশে দুটি পরিবার প্রাধান্য বিস্তার করে আছে। আগামী দিনেও কি তা থাকবে?
খালেদা জিয়া : কথাটা ঠিক নয়। পরিবার দুটিকে শ্রদ্ধা করা হয় কারণ মুজিবুর রহমানের অবদান আছে, জিয়াউর রহমানের অবদান আছে। সে কারণেই জনগণ তাদের ওপর আস্থা রাখে। দেখুন, বিষয়টা কেবল রাজনৈতিক নয়। ব্যারিস্টারের ছেলে ব্যারিস্টার হয়, চিকিৎসকের ছেলে চিকিৎসক হয়, ব্যবসায়ীর ছেলে ব্যবসায়ী হয়। ফলে রাজনীতিবিদেরা তাদের পরিবার সদস্যদের মধ্যে সেই আগ্রহের সৃষ্টি করেন। আর তা জনগণের মধ্যে যায়। জনগণ তাদেরকে গ্রহণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তারা গ্রহণ না করলে তারা বিদায় নেবে।
প্রশ্ন : বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সম্পর্ক কী?
খালেদা জিয়া : আদর্শগত মিল নেই। আমরা উদারপন্থী, উগ্র বাম বা উগ্র ডান কোনোটাই নই। আপনি ইতিহাসে ফিরে গেলে দেখবেন যে ১৯৮৬ সালে এরশাদ যখন নির্বাচন আয়োজন করতে চাইল তখন আওয়ামী লীগই জামায়াতের সাথে হাতে হাত মিলিয়েছিল।  এটা [বিএনপি ও জামায়াত] একটি নির্বাচনী সমঝোতা। তারা কিছু অংশে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, আমরা অন্য অংশে করি। এর বাইরে কিছু নেই। তারা তাদের আদর্শ অনুসরণ করে, আমরা আমাদেরটা।
প্রশ্ন : ভারতের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে গত ছয় বছরে আপনি হাসিনার চেয়ে ভিন্ন কী করেছেন?
খালেদা জিয়া : আওয়ামী লীগ সরকারের বিপরীতে, আমরা আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য সকল ক্ষেত্রে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে পারস্পরিক কল্যাণ কামনা করেছি। এই সম্পর্ককে আরো জোরদার করার জন্য উভয় দেশের জনগণের মধ্যে আস্থা সৃষ্টিটা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেছি। উপনিবেশ প্রভূদের ভাগ করে শাসন করার নীতি আতঙ্ক ও অবিশ্বাস সৃষ্টি করেছে। আমাদের উভয় দেশেই এমন কিছু শক্তি আছে যা এই ভীতিকর মানসিক অবস্থা সৃষ্টি করে রেখেছে। ফলে আমাদেরকে নতুন ভিত্তি সৃষ্টির জন্য একসাথে কাজ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে আমাদেরকে প্রথমে একসাথে বসে পারস্পরিক গ্রহণযোগ্য সমাধান কামনা করতে হবে। ভবিষ্যতের বিএনপি সরকার উভয় দেশের জনগণের মধ্যে যোগাযোগকে উৎসাহিত করবে, সকল ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক এবং সহযোগিতায় বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে সকল দ্বিপক্ষীয় ও সার্কের মতো আঞ্চলিক সংস্থাকে ব্যবহার করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *