রমজান আলী রুবেল (শ্রীপুর) গাজীপুরঃ টানা তিন দিনের বৃষ্টির কারণে ধান কাটার শ্রমিক সংকটে ভুগছে গাজীপুরবাসী, প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় কারনে পানিরে নিচে জমির বোরো ধান পেকে প্রায় পঁচন ধরতে চলছে। গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। সরেজমিনে দেখা যায় শ্রীপুর উপজেলার গাজীপুর ইউনিয়নর নগর হাওলা গ্রামের কৃষক আলমগীরের সাথে কথা বলে জানা যায়। শ্রমিক সংকটে তার পাকা ধান জমিতেই পড়ে আছে। অনেক খুঁজে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছেনা । যদিও কিছু শ্রমিক পাওয়া গেলেও মজুরি অনেক বেশি। প্রায় দেড় থেকে দুই মণ ধানের দাম এক শ্রমিকের দিন খরচ!। ফলে থমকে আছে ঘরে ধান উঠানোর কাজ।
বুধবার সকালের দিকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা শ্রমিক হাটে প্রতি বিঘা জমির দান কাটা বাবদ ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার টাকা পর্যন্ত হাঁকানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন কৃষকরা। সেখানে দিনচুক্তি একজন শ্রমিকের মজুরি চাওয়া হচ্ছে ১হাজার থেকে ১২শ’ টাকা।
উপজেলার ২নং গাজীপুর ইউনিয়ন, কাওরাইদ, তেলিহাটি, টেংরা, সাইটালিয়া,৷ বাঁশবাড়ি, মাওনা, বরমীসহ বিভিন্ন গ্রাম ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। পানির নিচে জমিতে ধান পরিপক্ক হয়ে গেলেও শ্রমিকের সংকটের সাথে মজুরি বেশি। কারণ হিসেবে জানা যায়, ধানকাটা এবং লাগানোর কাজ হয় শুধুমাত্র মৌসুম এলেই। কিন্তু বর্তমানে জীবনযাত্রার মানের ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবিকার তাগিদে শ্রমিকেরা ভিন্ন ভিন্ন পেশা বেছে নিয়েছেন। কেউ অটোচালক হয়েছেন, কেউ পোশাক শ্রমিক, কেউ বা মাসিক চুক্তিতে বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত। ফলে ধান কাটার জন্য শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। তাই মৌসুম আসলে এমন সংকটে পড়তে হয়।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এ বছর শ্রীপুর উপজেলায় বোরো ধানের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১১ হাজার ৬৫০ হেক্টর। যা পুরোপুরি অর্জিত হয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় এখনো পর্যন্ত পাকা ধানের ২৫% কর্তন হয়েছে। যার প্রতি হেক্টরে সাড়ে তিন মেট্রিটন করে ফলন হয়েছে।
ধানচাষিরা বলছেন, মৌসুমের শুরুতেই ডিজেল ও বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ায় সেচ কাজে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার সকল প্রকার সার কীটনাশকের দামও বেড়েছে কয়েক দফায়। এমন পরিস্থিতিতে ধান চাষে খরচ হচ্ছে পূর্বের তুলনায় প্রায় দ্বিগুন। এরই মধ্যে ধানে ব্লাস্ট রোগের ফলে উৎপাদনও কমে গেছে। তারা আরও বলেন, বর্তমানে ধানের মণ ৭৫০-৮২০ টাকা। যা একজন কৃষি শ্রমিকের একদিনের মজুরির কম! এক বিঘা জমির সর্বোচ্চ ১৪ মণ ধান কাটতে প্রয়োজন ৮জন শ্রমিক। তার পরেও যদি শ্রমিক পাওয়া যেত তাহলেও স্বস্তি পাওয়া যেত।
বর্গাচাষি কবির হোসেন বলেন । তিনি এবার দুই বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছেন। তার প্রায় সব জমির ধানই পাকা শেষ। হাঁটে কয়েকবার গিয়েও তিনি পাচ্ছেন না শ্রমিক।
কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, গত কয়েকদিন আগেও ৬০০ টাকায় শ্রমিক মিললেও এখন আর ওই মজুরিতে তারা কাজ করতে চাচ্ছে না। প্রায় সব কৃষকের ধান কাটার কাজ শুরু হয়ে যাওয়ায় জনপ্রতি শ্রমিকের মজুরি দাড়িয়েছে খাবারসহ ১৫০০ টাকা।
কৃষি শ্রমিকরা বলছেন, এক লিটার তেল কিনতে ২২০ টাকা লাগে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে সবকিছুর দাম বেড়েছে। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি আমরা। তাই দৈনিক মজুরি ১ হাজার ১৫০০ না হলে আমরা কাজ করেও লাভ নেই।
এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা কৃষিসম্প্রসারণ কর্মকর্তা ইমতিয়াজ জাহান খান বলেন, এ উপজেলায় শিল্পায়নের প্রসারে শ্রমজীবী মানুষেরা দিনকে দিন কলকারখানায় নিয়োজিত হচ্ছে। ফলে কৃষিতে শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে। এছাড়াও উত্তারাঞ্চলের ধান কাটার কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিনগুলোও এখন হাওর এলাকায় থাকায় সেখানে শ্রমিকরা বেশী ব্যস্ত। এ জন্যই সাময়িক ধান কাটার শ্রমিক সংকট দেখা দিচ্ছে।