চেয়ার ছাড়বেন না শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট

Slider সারাবিশ্ব


দেশে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করলেও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে পদত্যাগের দাবি প্রত্যাখান করেছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।

দ্বীপদেশটিতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম জাতির উদ্দেশ্যে কোনো ভাষণ দিলেন তিনি।

ভাষণে রাজাপক্ষে প্রেসিডেন্টের কিছু ক্ষমতা সংসদের কাছে হস্তান্তর করার প্রস্তাব দেন। যদিও তিনি কোনো সময়সীমার কথা বলেননি। অপরদিকে তার বক্তব্য আসল সমস্যাগুলোর যথাযথ সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়েছে বলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।

এর আগে বুধবার (১১ মে) রাতে গুজব ছড়িয়ে পড়ে প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষে এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেই তথ্য কলোম্বোর ভারতীয় হাই কমিশন নাকচ করে দেয়। রাজাপক্ষে পালিয়ে যেতে পারেন- এ ধারণা থেকে আরও বিক্ষোভকারীরা ত্রিঙ্কোমালির নৌঘাঁটিতে জড়ো হয়েছে।

তবে দেশটির সেনাবাহিনী নিশ্চিত করেছে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের পর ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে মাহিন্দা রাজাপক্ষে বর্তমানে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় একটি নৌঘাঁটিতে অবস্থান করছেন।

এদিকে কারফিউ ভেঙে দ্বিতীয় রাতের মতো বিক্ষোভ করেছে বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাবি এখন প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ।

একজন বিক্ষোভকারী বিবিসি তামিলকে বলেছেন, কারফিউ ভেঙে আমাদের এই বিক্ষোভ করতে হচ্ছে কারণ আমাদের কোনো উপায় নেই। আমরা এখনও ভোগান্তির শিকার হচ্ছি। এখনও কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল এবং বিদ্যুৎ নেই। দেশের মানুষ ওষুধ, খাদ্য পাচ্ছে না। পুরো দেশ স্থবির।

প্রেসিডেন্টের কাছে প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, গত ৩০ দিন আপনি কোথায় ছিলেন?

ওই বিক্ষোভকারী আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট যে সংস্কার প্রস্তাব করছেন, সেগুলো আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা এখন তার পদত্যাগ চাই। তিনি কেন সেটি বুঝতে পারছেন না।

এদিকে দেশজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেউ লুটপাট করলে, জীবনের ক্ষতি করলে তাদের গুলি করার। কারফিউ চলাকালে কলোম্বোতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলের একটা রিসোর্টে ভাঙচুর করা হয়েছে। অনেক দোকানে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

সোমবার থেকে এ পর্যন্ত নয়জন নিহত এবং দুইশ’র বেশি মানুষ আহত হয়েছে।

অন্যদিকে কলোম্বোর রাস্তায় বিপুল সংখ্যায় সেনাদের অস্ত্রসজ্জিত গাড়িবহর দেখে গুজব ছড়িয়েছে যে সেনা অভ্যুত্থান হতে পারে। বিরোধী রাজনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, এই সহিংসতা সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের অজুহাত হিসেবে দেখাতে পারে।

তবে প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে বলছেন, তিনি অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবেন যাতে একটা ঐক্যমত্যের সরকার তৈরি করা যায়। কিন্তু প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বলেছে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের অংশ হবে না।

গত একমাসেরও বেশি সময় ধরে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দায় ভুগছে। খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে সেখানে বেড়েছে মূল্যস্ফীতি। সরকার পতনের দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে দেশটিতে বিক্ষোভ চলছে।

বিক্ষোভের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ান মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তারপরও দেশটিতে সহিংসতা বন্ধ হচ্ছে না। এ অবস্থার মধ্যেই নতুন করে মন্ত্রিসভা গঠন ও নতুন প্রধানমন্ত্রী নিযুক্তের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *