কলকাতায় আটকে আছে জাহাজডুবির শিকার ১৫ বাংলাদেশী নাবিক

Slider সারাবিশ্ব


ফেসবুক ও ইউটিউবে বুধবার রাত থেকে একটি ভিডিও বাংলাদেশের অনেকেই শেয়ার করছেন। যাতে দেখা যাচ্ছে একটা ছোট ঘরে রঙ চটে যাওয়া দেয়ালের সামনে দাড়িয়ে আছেন ১৫ জনের মতো মানুষ। তাদের মধ্যে একজন দুর্দশার বর্ণনা করছেন।

একপর্যায়ে তারা সবাই একসাথে বলে ওঠেন, ‘আমাদের বাঁচান, আমরা দেশে ফিরতে চাই’।

বুধবার রাত ৮টা নাগাদ কলকাতায় আটকে পড়া ১৫ জন নাবিককে নিয়ে ফেসবুকে লাইভ করেন মেরিন ট্রাস্ট ওয়ান নামের জাহাজের ফার্স্ট ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম ফয়সাল।

সেখানে তিনি বলছিলেন, ‘গত ২০ মার্চ আমরা চট্টগ্রাম থেকে কোলকাতার উদ্দেশ্যে রওয়ান দেই। এরপর ২৩ মার্চ আমরা এসে এখানে পৌঁছাই। কিন্তু আনফরচুনেটলি ২৪ মার্চ আমাদের জাহাজটি কোলকাতা পোর্টে ডুবে যায়। এরপর কোলকাতা পোর্ট অথরিটি আমাদের স্থানীয় একটা হোস্টেলে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ করে। এরপর থেকে এই হোটেলেই আমরা দীর্ঘ এক মাস ধরে আছি।’

সাড়ে তিন মিনিটের লাইভে আরো বলা হয়েছে, ‘আমাদের পাসপোর্টগুলো এখানকার লোকাল শিপিং এজেন্ট নিয়ে গেছে। পুলিশি ঘেরাও দিয়ে আমাদের অবরুদ্ধ অবস্থায় রাখে। খাদ্য সরবরাহ যেকোনো সময় বন্ধ করে দেবে। আমরা আমাদের স্বাভাবিক সুস্থ জীবন ফিরে পেতে চাই। আমাদেরকে দেশে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আপনারা সাহায্য করুন।’

ভিডিওতে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, নৌপরিবহন মন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন জানানো হয়। গত মাসে যখন মেরিন ট্রাস্ট ওয়ান নামের জাহাজটি ডুবে যায় তখন বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

যে কারণে তারা আটকে পড়েছেন
কলকাতায় আটকে পড়া এই নাবিকদের একজন হবিগঞ্জের বানিয়ারচরের শাহ মাহবুবুর রহমান। ‌ইঞ্জিন ক্রু হিসেবে মেরিন ট্রাস্ট ওয়ান নামের জাহাজটিতে কাজ করতেন। মাস তিনেক আগে ছেলের বাবা হয়েছেন।

তিনি বলেছেন, ‘জাহাজ থেকে মাল নামানোর পর যখন প্রায় মাল তোলা শেষ হবে, ১৫৬টা কন্টেইনার লোড করার শেষ সময়ে জাহাজটা ডুবে যায়। জাহাজ ডুবে যাওয়ার সময় আমরা শুধু আমাদের পাসপোর্ট বাঁচাতে পেরেছি। এখানে আমরা এক কাপড়ে আছি। যে শিপিং এজেন্টের জন্য আমরা ডেলিভারি দিতে আসছিলাম, তারা এখন আমাদের খেতে দিচ্ছে। কিন্তু তারা বিনা পয়সায় আর খাবার দিতে পারবে না বলেছে।’

আটকে পড়া নাবিকেরা বুঝতে পারছেন না কেন তাদের এভাবে রাখা হয়েছে। হোটেলের যতটুকু জায়গা এর বাইরে তারা বের হতে পারেন না। ১৫ জন ৭টি কক্ষে থাকছেন। কারো কাছে একটি টাকাও নেই।

চিফ ইঞ্জিনিয়ার ফাহিম ফয়সালের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কোম্পানি থেকে আমাদের বলা হয়েছে ৭ থেকে ১০ দিন লাগবে, জাহাজটা উদ্ধার করে ওটা নিয়েই আমরা ফেরত আসবো। দেরি দেখেও তাই আমরা এতদিন কিছু বলছিলাম না। কিন্তু ২৪ এপ্রিল আমাদের কোম্পানি জাহাজটি হঠাৎ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। এর ফলে যেটা হয়েছে জাহাজের ক্রুর সাথে তাদের আর কোনো সম্পর্ক থাকে না। এখন আর কোম্পানিটির তরফ থেকে আমাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে না। তারা আমাদের বলে দিয়েছে তোমরা নিজেরা চেষ্টা কর।

কোলকাতার এই যাত্রাটি ছিল চিফ ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ার পর চট্টগ্রামের বাসিন্দা ফাহিম ফয়সালের প্রথম যাত্রা।

তিনি জানিয়েছেন, নাবিকদের পরিচয়পত্র, অন্যান্য চালানপত্র সবকিছু জাহাজের সাথে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কি কারণে আমাদের মর্টগেজ বানিয়ে এটা করা হচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি না। কোম্পানির কাজটাও এখন চলে গেল। তার মানে বেতনও নেই। আমাদেরও পরিবার আছে। জাহাজ নিয়ে জটিলতা কয়মাস লাগবে আমরা তো সেটা জানি না। ততদিন কি আমরা এখানে বন্দি অবস্থায় থাকবো?

যা বলছে বাংলাদেশ দূতাবাস
এই নাবিকদের ফিরিয়ে আনতে কি করা হচ্ছে জানতে চাওয়া হয়েছিল কলকাতায় বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনের কর্মকর্তা রঞ্জন সেনের কাছে।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলেন, ‘আমরা পোর্ট অথরিটির সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা বলেছে আন্তর্জাতিক শিপিং আইন অনুযায়ী জাহাজ সংস্কার বা উদ্ধার না হওয়া পর্যন্ত তারা নাবিকদের প্রত্যাবাসনের অনুমতি দেবে না। আমরা তাদের বলেছি এর মধ্যে আরো অনেক বিষয় আছে। জাহাজের বিমার অর্থ ক্লেইম করা, সেটাতে অনেক দিন সময় লেগে যেতে পারে। ততদিন তাদের কি হবে। এসব জানিয়ে তাদেরকে চিঠি দিয়েছি। এ ব্যাপারে তারা এখন ইতিবাচক।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *