মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু হত্যার অন্যতম কুশীলব হিসেবে পরিচিত খন্দকার মোশতাককে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে মুজিবনগরের সরকার দিবসের এক আলোচনা সভায় দেয়া বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আখাতারুজ্জামান অনুষ্ঠানটির সভাপতিত্ব করেন।
সভায় নিজ বক্তব্য প্রদানকালে অধ্যাপক রহমত উল্লাহ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের অন্য মন্ত্রীদের পাশাপাশি তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুনি মোশতাকের অবদানের কথা উল্লেখ করে তার প্রতিও জানান গভীর শ্রদ্ধা।
এ সভায় উপস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি, প্রক্টর ও একাধিক ব্যক্তির প্রতিক্রিয়ার তার এ শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টির সত্যতা পাওয়া যায়।
পরে আলোচনা সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ শিক্ষক সমিতির সভাপতির বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেন এবং তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
খন্দকার মোশতাক সবসময়ই দেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ছিলেন উল্লেখ উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সামাদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় বাংলাদশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে চক্রান্তে লিপ্ত ছিলেন এবং পাকিস্তানের সঙ্গে আঁতাত করেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাকে চোখে চোখে রাখতে হয়েছে। তাই, শিক্ষক সমিতির সভাপতির এই বক্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গ্রহণ করবে না এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার এটা গ্রহণ করে না।
পরে সবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভিসি আখতারুজ্জামান বক্তব্য প্রদানের সময় শিক্ষক সমিতির সভাপতির বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন।
তবে নিজ বক্তব্যে খন্দকার মোশতাকের নাম নিলেও তাকে শ্রদ্ধা জানানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রহমত উল্লাহ।
তবে বিষয়টি সেখানে থেমে থাকেনি। খন্দকার মোশারফের নাম নেয়ার বিষয়টি ‘স্লিপ অব টাং’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। তার এ মন্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া ও সমালোচনা আসতে থাকে চারদিক থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, রেজিস্টার থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন থেকে আসে প্রতিবাদ।
পরিস্থিতি বিবেচনায় আজ সকাল ১০টায় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন ডাকেন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ। সেখানে এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান তিনি।
গতকাল আলোচনা সভায় খন্দকার মোশতাক আহমেদকে ‘শ্রদ্ধা জ্ঞাপন সূচক’ কোনো শব্দ বা বাক্য তিনি উচ্চারণ করে থাকলে সেটিকে তার ‘নিতান্তই অনিচ্ছাকৃত ভুল’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।