মন্ত্রী-উপদেষ্টার ফোনালাপ: ক্রয় পদ্ধতিকে ‘কোম্পানি’ বলে অপপ্রচার

Slider জাতীয়


মোট নয়টি পদ্ধতিতে কেনাকাটা সম্পন্ন করে সরকার। যার মধ্যে একটি হলো লিমিটেড টেন্ডারিং মেথড বা এলটিএম। ফেব্রুয়ারিতে ফাঁস হওয়া প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের ফোনালাপ ঘিরে এলটিএম শব্দটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা কুৎসার বিষয়টি পুরোপুরি ভুল ছিল।

ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য এখন চোখের সামনেই বাস্তব। ইন্টারনেট এখন পৌঁছে গেছে দুর্গম চরে। ফাইবার অপটিক্যাল কেবল সংযোগের মাধ্যমে পুরো দেশ এখন একই নেটওয়ার্কের আওতায়। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারা মানুষের কাছেও পৌঁছেছে প্রযুক্তির সেবা। ফলে উদ্যোমী মানুষগুলো হয়ে উঠছেন একেকজন উদ্যোক্তা।

এত কাজ সম্পন্ন হয়েছে যে উদ্যোগটির মাধ্যমে সেটি হলো, সরকারের তথ্য-প্রযুক্তি বিভাগ পরিচালিত ইনফো সরকার প্রকল্প। তিন ধাপে বাস্তবায়ন করা হয় এ মহাকর্মযজ্ঞ। যার তদারকির নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

গেল ফেব্রুয়ারিতে আইনমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের মধ্যকার একটি টেলিকথোপকথন অন্তত তিন থেকে চারটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে ইনফো সরকার প্রকল্পটি নিয়ে কথা বলেন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই ব্যক্তি। শোনা গেছে, আর এক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পৃক্ততার কথাও।

সালমান এফ রহমান ও আনিসুল হকের ওই ফোনালাপের অডিওতে বলতে শোনা যায়-

সালমান এফ রহমান: ওখানে ইনফো সরকারে কী এসেছিল?
আনিসুল হক: ইনফো… কী এটা?

সালমান এফ রহমান: সরকারের আইসিটি মিনিস্ট্রির…
আনিসুল হক: হ্যাঁ, এসেছিল।

সালমান এফ রহমান: তো ওটা কী করলেন আপনারা?
আনিসুল হক: পাস করে দিয়েছি।

সালমান এফ রহমান: পাস করে দিয়েছেন?
আনিসুল হক: হ্যাঁ।

সালমান এফ রহমান: এটা তো জয়ের প্রজেক্ট।
আনিসুল হক: হ্যাঁ।

ভাইরাল হওয়া অডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে সালমান এফ রহমান এলটিএম এর মাধ্যমে কাজটি হয়েছে কিনা, তা জানতে চেয়েছেন আইনমন্ত্রীর কাছে।

গুরুত্বপূর্ণ ওই দুই ব্যক্তির কথোপকথনে আরও শোনা যায়-

সালমান এফ রহমান: আমাকে একজন বলল যে জয় এলটিএম চাচ্ছিল। তো আমি ওইটাই কনফার্ম করতে চাচ্ছিলাম; আসলেই জয় এলটিএম চাচ্ছেন কিনা!

আনিসুল হক: হ্যাঁ, এলটিএম জয় চাচ্ছিল তো।

কিন্তু নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া এই ক্লিপের মাধ্যমে একটি পক্ষ বলা শুরু করে যে, এই এলটিএম প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানি। আর সেই প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দিতেই সরকারের প্রভাবশালী এই দুই ব্যক্তি কথা বলেছেন নিজেদের মধ্যে।

এবার জেনে নেওয়া যাক, এই এলটিএম কী এবং কীভাবে কাজ করে! সরকারি যে কোনো কেনাকাটার প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট বা সিপিটিইউ। ইন্টারনেটে তাদের প্রকিউর প্রসেস ফ্লোচার্টে গিয়ে দেখা যায়, মোট ৯টি পদ্ধতিতে কেনাকাটা সম্পন্ন করে সরকার। যার মধ্যে একটি হলো লিমিটেড টেন্ডারিং মেথড-এলটিএম। অর্থাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি করা এলটিএম কোনো কোম্পানি নয় বরং এটি একটি ক্রয় পদ্ধতি।

ভাইরাল হওয়া ফোনালাপটির ব্যাপারে প্রকৃত সত্য হলো- এই ফোনালাপটি সরকারি কাজের অগ্রগতি জানার জন্য মন্ত্রী পর্যায়ের দুই ব্যক্তির স্বাভাবিক কথোপকথন। ইনফো সরকার প্রকল্পের কাজ দ্রুততার সঙ্গে মানসম্পন্নভাবে শেষ করতেই এলটিএম প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। এ পদ্ধতি সরকারের আইনসিদ্ধ একটি বিষয়। এলটিএমকে বিদেশি কোম্পানি হিসেবে মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। অনেক আগের এই ফোনালাপকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা দুই উপদেষ্টা ও আইনমন্ত্রীর মানহানি তো বটেই, এটি সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করারও অপপ্রয়াস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *