গ্রাম বাংলা ডেস্ক:রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বারতা নিয়ে পশ্চিম দিগন্তে আবারো উদিত হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজানুল মোবারকের চাঁদ। আজ রমজানের প্রথম দিবস। কুরআন নাযিলের মাস, ইবাদত ও রিয়াজতের মাস এবং সব ধরনের নেক আমলের অসাধারণ মৌসুম শুরু হলো। বনি আদমের প্রতি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত বর্ষণের মাস রমজান। সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে নিজের পরিশুদ্ধি অর্জন ও মহান প্রভুর সান্নিধ্য ও সন্তোষ অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আগমন করে এ মাস।
খাতামুন নাবিয়্যিন মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উম্মত প্রতি বছর এই মাস অতিবাহিত করে রাব্বুল আলামিনের বিশেষ নির্দেশ পালনের মধ্য দিয়ে। আর পরম আস্থা ও অকৃত্রিম বিশ্বাসের সাথে আশা পোষণ করতে থাকে কুরআন মজিদ ও হাদিছে বর্ণিত সিয়ামের পুরস্কার ও সুফল লাভের। তাই এই পবিত্র মাসের আগমন মুসলিম উম্মাহর জন্য এক শুভ উপলক্ষ্য। এ মাসের প্রধান ইবাদত সিয়াম বা রোযা।
রমজানের সিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ নিবৃত্ত থাকা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে পানাহার ও কামাচার থেকে নিবৃত্ত থাকার নাম সিয়াম। রমজানের পুরো মাস সিয়াম পালন করা ইসলামের পাঁচটি মৌলিক বিষয়ের একটি।
বিশ্ব মানবতার ইহ ও পারলৌকিক সার্বিক কল্যাণ ও সাফল্যের একমাত্র নিয়ামক ইসলামের আখেরী নবী রহমাতুল্লিল আলামিন মদিনায় হিজরত করে যাওয়ার দ্বিতীয় বছরে রমজানের সিয়াম পালনের বিধান নিয়ে নাজিল হয় কুরআন মজিদের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতটি। ঘোষণা করা হয়, হে মুমিনরা, তোমাদের প্রতি সিয়াম পালন আবশ্যিক করা হলো যেমন তা আবশ্যিক করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের প্রতি, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পার।
এ আয়াত নাজিল হওয়ার পর প্রথম রমজান আগমনের আগে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশে এক নাতিদীর্ঘ ভাষণ দেন যা বায়হাকি শরিফে সঙ্কলিত হয়েছে। এতে তিনি রমজানের গুরুত্ব, মাহাত্ম ও করণীয় সম্পর্কে উম্মতকে অবহিত করেন। হজরত সালমান ফারসী রাযিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, শাবান মাসের শেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। বললেন, লোকেরা, তোমাদের ওপর এসে পড়েছে এক মহান মাস, বরকতময় মাস। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহতায়ালা এ মাসের সিয়াম ফরজ ও (ইবাদতের উদ্দেশে) রাতে জেগে থাকা ঐচ্ছিক করেছেন। এতে যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। আর যে ব্যক্তি এতে একটি ফরজ আদায় করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রয়েছে পাপ মোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং রোজাদারের মতোই তাকে প্রতিদান দেয়া হবে। কিন্তু রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না। প্রশ্ন করা হলোÑ হে আল্লাহর রাসূল, রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই। তিনি বললেন, যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটু দুধ, একটি খেজুর কিংবা একটু পানীয় দিয়ে ইফতার করাবে, তাকেই আল্লাহতায়ালা এ প্রতিদান দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্ত করে আহার করাবে, আল্লাহতায়ালা তাকে হাউজে কাওছার থেকে পানি পান করাবেন। এ মাসের প্রথম ভাগে রহমত, মধ্যভাগে মাগফিরাত ও শেষভাগে রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। এটা সমবেদনার মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি তার অধীনস্থের কাজের ভার লাঘব করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত আছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঈমান ও ইহতিসাবের সাথে যে ব্যক্তি সিয়াম আদায় করবে, তার ইতোপূর্বেকার পাপগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে। তিরমিজি শরীফে হযরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহুর বরাতে বর্ণিত আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,রমজানের প্রথম রাত এলে শয়তান ও অবাধ্য জিনদের শিকলবদ্ধ করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর কোন দরজা আর খোলা হয় না। জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়। এরপর কোন দরজা আর বন্ধ করা হয় না। আর একজন ঘোষক ঘোষণা করেন, হে কল্যাণপ্রার্থী, তুমি এগিয়ে এসো। আর হে অকল্যাণ প্রত্যাশী,তুমি নিবৃত্ত হও। আল্লাহ অনেককে মুক্তি দেবেন। প্রতিটি রাতে এভাবে ঘোষণা চলতে থাকে।
নেক কাজে উদ্যোগী হওয়া ও অন্যায় কাজ থেকে বিরত থাকা সব সময়েই জরুরি। কিন্তু এ মাসে তাতে আরো সচেতন হওয়া প্রয়োজন। কেননা আল্লাহর অপার রহমত নাযিল হওয়ার মাসে নেক কাজ সম্পাদন ও অন্যায় কাজ বর্জনের মাধ্যমে নিজেকে ভাগ্যবানদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা বুদ্ধিমানের কাজ। বিশেষ করে তাকওয়া অর্জনের যে উদ্দেশ্য সিয়াম পালনের মধ্যে নিহিত, তা সফল হতে হলে রমজানের প্রথম মুহূর্ত থেকেই সযতœ চেষ্টা চালানো প্রয়োজন। রমজানের প্রথম রাতে আহবানের তাৎপর্য এখানেই। অতএব মাহে রমজানের কল্যাণ লাভ ও কর্তব্য পালনে অঙ্গীকারাবদ্ধ হওয়া আজ সবার একান্ত কর্তব্য।