কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হওয়ার আগে থেকেই বাংলাদেশ বেশ কিছু টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জন থেকে দূরে ছিল। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং স্বাস্থ্য সংকটের কারণে লক্ষ্যগুলির দিকে অগ্রগতি বজায় রাখা এবং দ্রুততম করার চ্যালেঞ্জগুলো আরও তীব্র হয়েছে। যেহেতু অতিমারির প্রভাব পূর্ব-বিদ্যমান বৈষম্যের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, সেহেতু এসডিজি’র প্রভাবগুলো প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর উপর প্রবাহিত হয়েছে। এতে তাদের ক্ষতির সম্মুখীন করেছে এবং ‘কাউকে পেছনে রাখা যাবে না’ এজেন্ডার মূল নীতিকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের ‘বাংলাদেশে এসডিজি বাস্তবায়নে অতিমারি কী প্রভাব ফেলবে?’ শীর্ষক পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা তুলে ধরেন বক্তারা। নাগরিক প্ল্যাটফর্মের এক গবেষণায় উঠে আসা বিষয় এবং আসন্ন ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের জন্য বাস্তবসমস্ত নীতি প্রস্তাব কী হতে পারে সেসব নিয়ে অনুষ্ঠানে আলোচনা হয়।
এতে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক এবং সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) এর সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আলোচনায় বলা হয়, নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশে সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দৃষ্টিকোণ থেকে এসডিজি বাস্তবায়নে অতিমারির অভিঘাত নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছে। এই গবেষণায় এসডিজির চারটি স্তম্ভ, অর্থনৈতিক, সামাজিক, পরিবেশ ও সৃশাসন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়া হয় এবং এর ফলাফল তাদের ঐকমতের প্রতিফলন।
অর্থনীতি এবং সামাজিক স্তম্ভে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এদুটি পুনরুজ্জীবিত না করতে পারলে অতিমারির আগের অবস্থায় ফিরে যাওয়া যাবে না। প্রভাবগুলো প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সরকারের কোনো তথ্য উপাত্ত নেই। কাজেই দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণার তথ্য একত্রিত করে এই ফলাফল উপস্থাপন করা হয়েছে।
এর থেকে বেরিয়ে আসার করণীয়, ব্যয় নিয়ন্ত্রণ এবং আয়ের সুযোগ বাড়ানোর মাধ্যমে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের ক্রয়ক্ষমতা রক্ষায় অবিলম্বে মনোযোগ দিতে হবে। সরকারের উচিত অবিলম্বে শুল্ক এবং কর কমিয়ে দেয়া যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আরও সাশ্রয়ী হয় এবং ‘ন্যায্য মূল্যে’ মৌলিক পণ্যগুলো সরবরাহ করা যায়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ডা. মালেকা বানু বলেন, অতিমারিতে জেন্ডার বৈষম্য অনেক বেড়েছে, এবং সুশাসনের অভাব এই সমস্যাটিকে আরও বৃদ্ধি করেছে। দারিদ্র্য অনেকদিক থেকে নারীদের প্রভাবিত করে, বিশেষ করে যারা অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে, তাই আসন্ন বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা জন্য আরও বেশি অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা উচিত।
সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম কোর গ্রুপের সদস্য এবং সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নগর এলাকায় সামাজিক নিরাপত্তা আরও প্রসারিত করতে হবে। সেই প্রেক্ষিতে তথ্য উপাত্তের ঘাটতি সরকারকে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে পৌঁছাতে বাঁধা দিচ্ছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা) এর নির্বাহী প্রধান অ্যাডভোকেট সাইদা রিজওয়ানা হাসান, ওয়াটারএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান প্রমুখ।