সৎ ও যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিন

Slider বাধ ভাঙ্গা মত

।। মোল্লা তানিয়া ইসলাম তমা ।।
দেশ ও সমাজ উন্নয়ন হোক আর নাই হোক- এক শ্রেণীর মানুষ টাকা পেলে ঘন্ডমূর্খ, অযোগ্য, অসৎ ব্যক্তিকে ভোট দিতে প্রস্তুত । আমরা কি সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে আমাদের বিবেক, জ্ঞান, বুদ্ধি ও পবিত্র আনামত ভোট বিক্রি করতে পারি । যে প্রার্থী টাকা দিবেন না, তিনি যত সৎ, ভালো মানুষ, জ্ঞানী হন না কেন, এক শ্রেণীর মানুষ তাকে ভোট দিবেন না । অনেক প্রার্থীরা বলেন- নেও টাকা, দাও ভোট । অনেক ভোটারাও বলেন- দাও টাকা, নেও ভোট । এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময় প্রার্থীরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতি হরহামেশাই বলে যাচ্ছেন বা যাবেন। নির্বাচনের প্রচারণার সময় তাঁদের বক্তব্যে বুঝা যায়- প্রার্থীরা “ধোয়া তুলসী পাতা”। হাত নাড়িয়ে সমর্থক দের অভিবাদন জানানোর সময় দেখা যায়- প্রার্থীদের পাঁচটি আঙুল । নির্বাচন শেষে আর চারটি আঙুল দেখা যায় না, দেখা যায় (“ভুড়ি ডিম”) বৃদ্ধা আঙুল । এক বার কী চিন্তা করে দেখেছি? টাকা নিয়ে ভোট দিলে দেশ ও সমাজের উপকার হবে কী হবে না? সমাজ উন্নয়ন হবে কী হবে না? সাধারণ জনগণ সেবা পাবে কী পাবে না? তাদের টাকা আছে বলে কী তাদের কে ভোট দিতে হবে? সে যোগ্য কী- যোগ্য নয়, ভেবে কী দেখেছি? তিনি অতীতে কী কোন সমাজ সেবার কাজ করেছেন? নাকি শুধু নির্বাচনের সময়ের জন্য বিশিষ্ট সমাজ সেবক, গরিবের বন্ধু, জন দরদী, অন্যায়ের প্রতিবাদী হয়েছেন? তিনি কী অতীতে কোন দিন পায়জামা পাঞ্জাবী, টুপি পরেছেন? নাকি নির্বাচনের জন্য পরেছেন? রাজনৈতিক বড় নেতা বলে কী উনাকে নির্বাচিত করতে হবে? তিনি রাজনীতি করেন বলে- জনপ্রতিনিধি হতে পারেন, আর কেউ না? টাকার বিনিময়ে যারা নির্বাচিত হন, তারা প্রথমে যত টাকা খরচ করে নির্বাচন করেছেন- ঐ টাকা পাঁচ বছরে আমাদের উন্নয়নের টাকা থেকে তাদের নির্বাচনী খরচের মূল পুজি তুলে নেন । এর পর লাভ । এখনো সময় আছে, আমাদের বুঝার । আল্লাহ পাক আমাদের জ্ঞান দিয়েছেন, বুদ্ধি দিয়েছেন। ভালো মন্দ বুঝার তৌফিক দিয়েছেন । অন্ধের মতো পবিত্র আনামত “ভোট” অযোগ্য প্রার্থী কে দিবেন না । সামান্য ৫০০/১০০০ টাকার জন্য নিজে বিক্রি হবেন না। ঐ টাকায় আপনি/ আমি কয় দিন খেতে পারবো? বড়জোর তিন দিন, পাঁচ দিন- এর পরে কী করবেন? পাঁচ বছর তো নিজে পরিশ্রম করে খেতে হবে, জীবন বাঁচাতে হবে। নাকি নির্বাচিত ঐ জনপ্রতিনিধি আপনাকে আমাকে খাওয়াবেন? গাড়ি বাড়ি দিবেন? টাকার বিনিময়ে ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করলে- ঐ জনপ্রতিনিধির কাছে পাঁচ বছর লাঞ্ছিত হবেন, উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হবেন, কোন দিন ঐ জনপ্রতিনিধির কাছে সম্মান পাবেন না । ব্যক্তিগত কোন সমস্যায় পরলে সাহায্য পাবেন না । আরো অনেক কিছু । শুধু এক বার টাকা ছাড়া সৎ ব্যক্তি কে ভোট দিয়ে দেখুন কী তৃপ্তি পাওয়া যায় । আপনার/ আমার কতটুকু কাজে লাগেন। ঐ জনপ্রতিনিধির অফিসে গিয়ে বড় গলায় কথা বলতে পারবেন। আপনাকে/ আমাকে সম্মানের সাথে চা নাস্তা খাওয়াবেন। অধিকার আদায় করতে পারবেন। সমাজের উন্নয়ন করাতে পাবেন। এসব কেন পাবেন বলতে পারেন? বিনা টাকায় সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি কে ভোট দেওয়ার ফলে । বর্তমান যুগে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার অন্যতম একটি মাধ্যম নির্বাচন। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন । জনপ্রতিনিধিরা শুধু ভোটদাতার সঙ্গে নয়, পুরো জাতির সঙ্গেই সম্পৃক্ত ।

জনগণের ন্যায্য অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করতে আদর্শবান, সৎ ও খোদাভীরুর হাতে ক্ষমতা অর্পণ করার লক্ষ্যে স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করা প্রত্যেক ভোটারের নৈতিক দায়িত্ব । ভোট বিশেষ একটি আমানত। ভোটের ব্যাপারটি শুধু পার্থিব নয়; পরকালেও এ ব্যাপারে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে । প্রার্থী সৎ, যোগ্য, আদর্শবান না হলেও তাকে ভোট দেওয়া আর তার ব্যাপারে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে সত্যায়ন করা একই কথা । কোনো নির্বাচনী এলাকায় ভালো, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তি প্রার্থী হলে তাকে ভোট না দিয়ে বিরত থাকা এবং অসৎ ও অযোগ্য প্রার্থীকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করা ধর্মীয় দৃষ্টিতেও গুরুতর অপরাধ । সৎ প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও সৎ ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রার্থীকেই ভোট দিতে হবে, নতুবা আমানতের খেয়ানত হবে । কারো ভোটের কারণে যদি কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হয়ে যান, এতে পরবর্তীকালে তিনি যা যা ভালো কাজ করবেন, তার সওয়াব ভোটদাতাও পাবেন । আর যদি কারো একটি ভোটের কারণে রাষ্ট্রের ক্ষমতা কোনো পাপিষ্ঠের হাতে চলে যায়, তার কারণে ইসলাম হয় ভূলুণ্ঠিত, জনগণ অধিকার থেকে হয় বঞ্চিত, তাহলে ওই ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার কারণে পরকালে মহান আল্লাহর কাছে ভোটদাতাকে জবাবদিহি করতে হবে। তাই এসব নির্বাচনে প্রত্যেক ভোটারের অংশগ্রহণ করা ইমানি দায়িত্ব । ভোট সাধারণ কোনো ব্যাপার নয় । ভোট দেওয়া মানে সাক্ষ্য প্রদান ও সত্যায়ন করা। কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো তার ব্যাপারে এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, তিনি সৎ ও যোগ্য। ইসলাম ও দেশের উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা এবং জনগণের অধিকার আদায়ে তিনিই সবচেয়ে উপযুক্ত। প্রার্থী সম্পর্কে জানা-শোনার পরও অসৎ ব্যক্তিকে ভোট বা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী সময়ে যত অসৎ কর্মকান্ড সম্পাদন করবেন, সেই পাপের অংশে ভোটাররাও শরিক হবেন। পবিত্র কোরআন কারিমে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন, যে লোক সৎকাজের জন্য কোনো সাক্ষ্য দেবে, তা থেকে সেও একটি অংশ পাবে। আর যে লোক মন্দ কাজের জন্য সুপারিশ করবে, সে তার পাপের একটি অংশ পাবে (সুরা নিসা : ৮৫)। কোরআনুল কারিমে আরো এরশাদ হয়েছে, হে ইমানদারগণ! তোমরা ন্যায়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকো এবং ন্যায়সংগত সাক্ষ্যদান করো, তাতে তোমাদের নিজের কিংবা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্মীয়স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তদাপিও (সুরা নিসা : ১৩৫)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো এরশাদ করেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে ন্যায় সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে অটল থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের আক্রোশের কারণে কখনো ন্যায়বিচার পরিত্যাগ করো না (সুরা মায়েদা : ৮)। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কালামে পাকে আরো এরশাদ করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেন যে, যাবতীয় আমানত তার উপযুক্ত লোকদের নিকট অর্পণ করো (সুরা নিসা-৫৮৩)। আল্লাহ বলেন, হে ইমানদারগণ! তোমরা ইনসাফের সঙ্গে আল্লাহর জন্য সাক্ষী হয়ে দাঁড়াও (সুরা নিসা : ১৩৫)। কোরআনে আরো এরশাদ হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! তোমরা জেনেশুনে আল্লাহ ও তার রসুলের সঙ্গে ওয়াদা ভঙ্গ করো না এবং নিজেদের আমানতের খেয়ানত করো না (সুরা আনফাল-২৭)। যোগ্যতার মানদন্ডে প্রার্থী হওয়ার যোগ্য নয়, ফাসিক, অসৎ ব্যক্তি যিনি দলীয়ভাবে লবিং অথবা আর্থিকভাবে প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনে পদপ্রার্থী হয়েছেন এমন প্রতিদ্বন্দ্বীকারী ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া হারাম। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, তোমরা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান থেকে বিরত থাকো (সুরা হজ : ৩০)। রসুল (সা.) উম্মতকে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করা থেকে সতর্ক করেছেন। রসুল (সা.) বলেন, সাবধান! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া সর্বাপেক্ষা বড় গোনাহ। হজরত আয়মান বিন আখরাম (রা.) বলেন, এক দিন নবীজী (সা.) খুতবায় দাঁড়িয়ে বললেন, হে লোক

সকল! মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া আর আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা একই রকম’ (তিরমিজি : ২২৯৯)। হজরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, রসুল (সা.) এরশাদ করেন, রসুল (সা.) একবার কবিরা গোনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলো। তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করা, মাতা-পিতার অবাধ্য হওয়া, মানুষ হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া (বুখারি : ২৫১০) । বর্তমানে সব ধরনের নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি ও বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে অনেক প্রার্থী ভোট সংগ্রহ করেন, যা সম্পূর্ণ হারাম। যেসব পদ প্রার্থী ভোটারদের আপ্যায়নের নামে বিভিন্নভাবে ঘুষ দিয়ে নিজেদের পক্ষে ভোট সংগ্রহ করে ঘুষতন্ত্র চালু করেছেন, সেটা ইসলামের দৃষ্টিতে মহাপাপ। আর যেসব ভোটার প্রার্থীদের যথাযোগ্যতা যাচাই-বাছাই না করে স্বজনপ্রীতিমূলক, সাময়িক সম্পর্ক, সস্তা প্রতিশ্রুতি ও ঘুষ খেয়ে ভোট প্রদান করছেন, আমানতের খেয়ানত করার কারণে তাদের পরকালে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। তাই সৎ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রার্থীকে ভোট দেওয়া নৈতিক দায়িত্ব ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *