ফরজ ও ওয়াজিব রোজা ছাড়াও ইসলামে নফল রোজার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। দুনিয়া ও আখিরাত উভয় দিক বিবেচনায় নফল রোজার অনেক উপকারিতা রয়েছে। নফল রোজা পালনে যদিও ইসলামী শরিয়ত বাধ্য করেনি, তবে কেউ যদি পালন করে সে বিরাট সওয়াব অর্জন করবে। নফল রোজার সবচেয়ে বড় লাভ হলো- রোজাদারের ওপর আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যান। হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, হাদিসে কুদসিতে রাসূল সা: বলেছেন যে ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, রোজা আমারই জন্য, আমি নিজেই তাঁর প্রতিদান দেব; রোজা আমারই জন্য আমি নিজেই তার প্রতিদান।’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
নফল রোজা সম্পর্কে আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য একটি নফল রোজা রাখল, আল্লাহ তায়ালা তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে একটি দ্রুতগামী ঘোড়ার ৫০ বছর রাস্তার দূরত্ব রাখবেন। (কানযুল উম্মাল, হাদীস: ২৪১৪৯) অন্য হাদিসে তিনি বলেন, ‘রোজা ঢালস্বরূপ এবং জাহান্নাম থেকে বাঁচার সুদৃঢ় দুর্গ।’ (নাসায়ী শরীফ)।
একইসাথে রোজাদার কোনো দোয়া করলে তা কবুল হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনে আস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, ‘রোজাদার ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়। (বায়হাকী শরীফ)।
যেসব দিনে রোজা রাখা হারাম
পাঁচটি দিন ছাড়া সারা বছরই নফল রোজা রাখার সুযোগ আছে। এরপরও সাপ্তাহিক, মাসিক ও বার্ষিক কিছু নির্দিষ্ট দিন আছে, যেসব দিনে রোজা পালনের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। যে পাঁচটি দিনে রোজা রাখা যাবে না (হারাম), তা হলো- রোজার ঈদের দিন, কোরবানির ঈদের দিন ও তৎপরবর্তী তিন দিন। এ ব্যাপারে একবার ঈদের নামাজের খুতবায় হজরত ওমর রা. বলেন, ‘হে লোক সকল! আল্লাহর রাসূল সা: এ দুই ঈদের দিনে রোজা পালন করতে নিষেধ করেছেন। তার মধ্যে একটি হলো- তোমাদের রোজা ভাঙার দিন অর্থাৎ ঈদুল ফিতরের দিন। আর অন্যটি হলো- এমন দিন যেদিন তোমরা তোমাদের কুরবানির পশুর গোশত খাবে।’ (সহিহ বুখারী)
নফল রোজা রাখার বিশেষ সময়
সাপ্তাহিক রোজা
সপ্তাহের সোম ও বৃহস্পতিবার এ দুই দিন রোজা পালন করা সুন্নত। কেননা আল্লাহর রাসূল সা: এই দুই দিন রোজা রাখতে পছন্দ করতেন। হজরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত হয়েছে, মহানবী সা:-কে সোমবারের রোজা সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, ‘এই দিনে আমার জন্ম হয়েছে এবং এই দিনে আমাকে নবুয়ত দেয়া হয়েছে বা আমার ওপর কোরআন নাজিল হওয়া শুরু হয়েছে।’ (সহীহ মুসলিম : ১১৬২) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘সোম ও বৃহস্পতিবার বান্দার আমল আল্লাহতাআলার কাছে পেশ করা হয়। কাজেই রোজাদার অবস্থায় আমার আমলগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করা হোক এমনটি আমি পছন্দ করছি।’ (সুনানে তিরমিজী : ৭৪৭)
মাসিক রোজা
চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রোজার অনেক ফজিলতের কথা হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। চান্দ্রমাসের এই তিন দিনকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ‘আইয়ামে বিজ’ বলা হয়। বিজ অর্থ সাদা বা আলোকিত। যেহেতু এই তিন দিনের রাতগুলো ফুটফুটে চাঁদের আলোয় উদ্ভাসিত থাকে। তাই এগুলোকে ‘আইয়ামে বিজ’ বলা হয়। হজরত আবু জর গিফারি রা. বর্ণনা করেন, হজরত রাসূলুল্লাহ সা: তাকে এভাবে বলেছেন, ‘হে আবু জর, যদি তুমি প্রতি মাসে তিন দিন রোজা পালন করতে চাও, তাহলে ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে তা পালন করো।’ (সুনানে তিরমিজী : ৭৬১)
বার্ষিক রোজা
প্রতি বছর শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা রাখা সুন্নাত। আল্লাহর রাসূল সা: বলেন, ‘যারা রমজানে রোজা পালন করবে এবং শাওয়ালে আরো ছয়টি রোজা রাখবে; তারা যেন পূর্ণ বছরই রোজা পালন করল।’ (মুসলিম শরীফ: ১১৬৪) চান্দ্র মাস হিসেবে ৩৫৪ দিন বা ৩৫৫ দিনে এক বছর হয়। প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কমপক্ষে ১০ গুণ করে দিয়ে থাকেন। (সুরা-৬ আনআম, আয়াত: ১৬০)। এই হিসেবে রমজান মাসে ৩০ দিনের রোজা ১০ গুণ হয়ে ৩০০ দিনের সমান হয়। অবশিষ্ট ৫৪ বা ৫৫ দিনের জন্য আরো ছয়টি পূর্ণ রোজার প্রয়োজন হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা শাওয়াল মাসের ছয় দিনে আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তি এই মাসে ছয় দিন রোজা রাখবে, আল্লাহ তাআলা তাকে প্রত্যেক সৃষ্ট জীবের সংখ্যার সমান সওয়াব দেবেন, সমপরিমাণ গুনাহ মুছে দেবেন এবং পরকালে তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করবেন।’ (হাদীস শরীফ) শাওয়াল মাসের যেকোনো সময় এই রোজা আদায় করা যায়। ধারাবাহিকভাবে বা মাঝেমধ্যে বিরতি দিয়েও আদায় করা যায়।
নফল রোজার নিয়ত কখন করব
রমজান মাসের ফরজ রোজা ছাড়া অন্যান্য সব রোজার নিয়ত সেহরির সময়ের মধ্যেই করতে হবে। ঘুমানোর আগে বা তারও আগে যদি এই দিনের রোজার দৃঢ় সংকল্প থাকে, তাহলে নতুন নিয়ত না হলেও চলবে এবং সেহরি না খেতে পারলেও রোজা হবে। (ফাতাওয়া শামি)।