যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে। অন্যদিকে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সতর্কতা দিয়েছে। বলেছে, ওমিক্রন আতঙ্কে যেসব কঠোর বিধিনিষেধ দেয়া দিয়েছে বিভিন্ন দেশ, তাতে অর্থনীতিতে আবার প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হবে। এসব নিয়ে বৃহস্পতিবার নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সূচকের পতন হয়েছে জাপানে, অস্ট্রেলিয়ায়। এ খবর দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে গত ২২ শে নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে ফিরেছেন এক ব্যক্তি। তিনি পূর্ণ ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা নিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও দেশে ফেরার সাতদিন পরে তার করোনা পজেটিভ ধরা পড়েছে।
অন্যদিকে এই শীতে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল নিয়ে কাজ করছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। একটি সূত্র বলেছেন, মধ্য মার্চ থেকে ভ্রমণকারীদের মুখে মাস্ক পরার নিয়ম বর্ধিত হতে পারে। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার ঘোষণা দেয়া হতে পারে। আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের জন্যও কঠোর পরীক্ষার নিয়ম চালু করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের এক চিঠিতে বলা হয়েছে, ওমিক্রন আক্রান্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন অংশ থেকে যেসব যাত্রী যাবে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের নামের তালিকা সরবরাহ করতে হবে।
এখনও পর্যন্ত নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট সম্পর্কে পর্যাপ্ত তথ্য জানা যায়নি। এরই মধ্যে প্রায় দুই ডজন দেশে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মহামারি বিষয়ক শীর্ষ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি বুধবার বলেছেন, কিভাবে এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত ছড়ায়, কতটা ভয়বহ সংক্রমণ সৃষ্টি করে এবং বিদ্যমান টিকার বিরুদ্ধে তা কাজ করে কিনা তা জানা যাবে দুই সপ্তাহ বা তারও বেশি সময়ে।
শুরুতেই মহামারি বিষয়ক ডাটায় দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (এনআইসিডি) বলেছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে অতিক্রম করতে পারে ওমিক্রন। তবে বিদ্যমান টিকা এখনও ভয়াবহ রোগ এবং মৃত্যু থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। কয়েকদিনের মধ্যেই ওমিক্রনের সংক্রমণ ক্ষমতা সম্পর্কে জানা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহামারি বিষয়ক বিশেষজ্ঞ মারিয়া ভন কেরখোভ। অন্যদিকে বায়োএনটেকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছেন, ফাইজারের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে তারা যে টিকা তৈরি করেছেন তা ওমিক্রনের ভয়াবহতা থেকে শক্তিশালী সুরক্ষা দেয়।
অন্যদিকে প্রাথমিকভাবে যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে তাতে ওমিক্রন আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোর চেয়ে অনেক বেশি সংক্রামক। এমন পূর্বাভাসে আর্থিক বাজার তছনছ হয়ে যাচ্ছে। আতঙ্কে বিভিন্ন দেশ বিধিনিষেধ দিচ্ছে। ফলে আরো একবার অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে পড়ছে। তারই আভাস পাওয়া গেছে বৃহস্পতিবার। এদিন সকালেই জাপান এবং অস্ট্রেলিয়ার গুরুত্বপূর্ণ শেয়ার মার্কেটগুলোর সূচক দুর্বল হয়েছে। বুধবার ওয়াল স্ট্রিটের বড় বড় শেয়ারের পতন হয়েছে শতকরা কমপক্ষে এক ভাগ। যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ওমিক্রন শনাক্তের খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। ব্যাংক অব জাপানের পরিচালনা পরিষদের সদস্য হিতোশি সুজুকি বলেছেন, যদি করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট ভোক্তাদের ক্ষতি করে অথবা সরবরাহ চেইনের গলা চিপে ধরা হয় তাহলে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের যে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল তা ব্যর্থ হতে পারে। তিনি বলেন, যদি সরবরাহ চেইনে প্রত্যাশার চেয়ে এই কঠোরতা বড় অথবা দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ঝুঁকি দেখা দেবে।
তবে এতটা হতাশ নন ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ব্যাংকো সেন্ট্রাল নগ ফিলিপিনাসের গভর্নর বেনজামিন ডিওকনো। তিনি বলেছেন, নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আমরা অতো উদ্বিগ্ন নই। আমার মনে হয় এর প্রভাবকে অনেক বেশি বাড়িয়ে বলা হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, ২৮ শে নভেম্বর থেকে বিশ্বের প্রায় ২৬টি দেশ ভ্রমণে কঠোরতা অবলম্বন করেছে। সর্বশেষ দক্ষিণ কোরিয়া এতে যোগ দিয়েছে। পূর্ণ টিকা নেয়া ব্যক্তিদের এতদিন কোয়ারেন্টিন ছাড়াই প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন থেকে দু’সপ্তাহের জন্য সেই অবস্থা স্থগিত করা হয়েছে। অর্থাৎ এ সময়ে দক্ষিণ কোরিয়া সফরে গেলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। বুধবার এ দেশটিতে প্রথম ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়।
ইন্দোনেশিয়া তার সীমান্ত কড়াকড়ি করেছে। কোয়ারেন্টিনের বিধান বর্ধিত করেছে। চলাচল সীমিত করেছে। দক্ষিণ আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় আটটি দেশের যেকোনো দেশের বিদেশির জন্য ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।