পরীক্ষার দিনে একই সময়ে রাস্তায় নামছে প্রায় অর্ধকোটি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবক। পরীক্ষাগুলোও অনুষ্ঠিত হচ্ছে আবার কর্মদিবসে। ফলে পুরো চাপ পড়ছে রাস্তায় ও যানবাহনের উপর। সম্প্রতি শেষ হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায়ও দেখা গেছে পরীক্ষার্থীদের যানজট ঠেলে কেন্দ্রে আসতে ঘাম ঝরাতে হয়েছে। কোথাও কোথাও যানজটের কারণে অনেক শিক্ষার্থী সময়মতো পরীক্ষার হলেও প্রবেশ করতে বিলম্ব করেছে।
এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় কোনো কেন্দ্রে একজন পরীক্ষার্থীর সাথে প্রয়োজনে একজনের বেশি অভিভাবক না আসার জন্য লিখিত নির্দেশনা জারি করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। সেখানে মূলত অভিভাবকদের কেন্দ্রে না আসতেই উৎসাহিত করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজন হলে সেখানে শুধু একজনই আসতে পারবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিকট অতীতে দেখা গেছে সদ্যসমাপ্ত এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের সাথে কমপক্ষে দুইজন অভিভাবক কেন্দ্রে এসেছে। আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাতে একইভাবে অভিভাবকরা কেন্দ্রে এসে ভিড় করলে এর প্রভাব পড়ছে অন্যসব যাত্রীদের চলাচলের ওপর। এই বাড়তি চাপ নেয়ার মতো পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থাও এখনো গড়ে ওঠেনি।
সাধারণ একটি হিসেবেই দেখা গেছে, এবারের এইচএসসি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ। এখন এই ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর সাথে যদি গড়ে দুইজন করে অভিভাবক কেন্দ্রে আসতে চায় তাহলে অভিভাবক ও শিক্ষার্থী মিলে রাস্তায় বের হবে ৪২ লাখ লোক। এর সাথে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ও কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট আরো প্রায় আট থেকে ১০ লাখ শিক্ষক কর্মকর্তা কর্মচারী রাস্তায় রেব হবে। আর এই সব ব্যক্তিদেরকেই রাস্তায় বের হতে হবে ঠিক একই সময়ে। সাধারণ কর্মদিবসে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে এবং রাস্তায় একই সময়ে অতিরিক্ত ৫০ লাখ লোকের চলাচলের কারণে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। ফলে শুধু পরীক্ষার্থীরাই নয়, দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদেরও।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, পাবলিক পরীক্ষার দিনে রাস্তায় অতিরিক্ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এটা আমাদের নজরেও এসেছে। আমরা এবারের এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও শৃঙ্খলা কমিটির সভাতে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমরা চিন্তা করছি আগামী দিনে যেকোনো পাবলিক পরীক্ষার সময়সূচি তৈরি করার সময়ে এ বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখব। বিশেষ করে যেসব পরীক্ষায় বেশিসংখ্যক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করবে ওই পরীক্ষাগুলো অফিস টাইমের বাইরে নিয়ে (দুপুরের দিকে) শিডিউল করা হবে।
শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ লাঘবে অভিভাবকদেরও ভূমিকা রয়েছে। আমরা বারবারই বলছি পরীক্ষার্থীদের সাথে কেন্দ্রে কোনো অভিভাবককে আসার দরকারই নেই। তবে যদি একান্ত প্রয়োজন হয় তাহলে যেন একজনের বেশি কোনো অভিভাবক কেন্দ্রে না আসে। তাই আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি পরীক্ষায় কেন্দ্রে একজনের বেশি অভিভাবক এলাউ (অনুমতি ) না করার জন্য মাউশিকে বলা হয়েছে। মাউশি ইতোমধ্যে এ বিষয়ে নির্দেশনা জারি করেছে।
উল্লেখ্য আগামী ২ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে চলতি বছরের এইচএসসি, আলিম, এইচএসসি (ভোকেশনাল), এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) এবং ডিপ্লোমা ইন কমার্স চূড়ান্ত পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সাথে একজনের বেশি অভিভাবক আসতে পারবে না বলে নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সাথে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে পরীক্ষা গ্রহণ নিশ্চিত করতে এ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।