বরিশালের বাবুগঞ্জের রহমাতপুর ইউনিয়নে নির্বাচনীয় প্রচারণায় পুলিশের ওসি পেটানোর গল্পের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। আওয়ামী লীগ মনোনিত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন গত বুধবার সন্ধ্যায় ইউনিয়নের মীরগঞ্জ বাজার সংলগ্ন রাজগুরু গ্রামে উঠান বৈঠকে এই গল্প করেন। মিলন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।
উঠান বৈঠকে দেওয়া ‘ওসি পেটানোর গল্পে’র ৪১ মিনিট ১৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিও বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়- বক্তব্য শুরুর ১০ মিনিট পরই নৌকাপ্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন ‘ওসি পেটানো গল্প’ শুরু করেন।
সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি মুজিব কোর্ট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪/৫টি কেনু (মারধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কীভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল করো)। সকল কনস্টেবল আমার পক্ষে ছিল। তারা বলছে, স্যার আগেই বলছিলাম মিলন মেয়া কি জিনস, যে থানায় আইয়া গুতাইবে (মারধর)। এহন গুতা খাইছেন? আমি এই মুজিব কোর্ট খুইলা ওসিরে ওই রুমের মধ্যে গুতাইছি।’
উঠান বৈঠকের বক্তব্যে মিলন আরও বলেন, ‘আমি (আক্তারুজ্জামান মিলন) আপনাদের একটি সম্পদ। এর আগের নির্বাচনে আমার ভোট রাশেদ খান মেনন চুরি করে নিয়ে গেছে। বাবুগঞ্জের ওসি মাহাবুব সে গৌরনদীর জামাই ছিল। এই সুফিয়ান ভাই (পাশের এক সমর্থক) সেদিন বলতেছিল আমার ভোট ঘুরানোর জন্য ওসি নির্দেশ দিয়েছে। সে গত নির্বাচনে সরোয়ার মাহমুদের পক্ষ নিয়ে বিভিন্ন সেন্টারে আমার ভোট কেটেছে। সেন্টারে সেন্টারে গুলি করেছে। এই কথা জানতে পেরে আমি মুজিব কোর্ট খুলে ওসির চেম্বারে গিয়ে তার চেয়ারে বসিয়ে ৪/৫টি কেনু (মারধর) দিয়েছি ভাই। যে শালা তুই (ওসি) কীভাবে আমার ভোটটা ঘুরাও (বদল করো)।’
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের অভিযোগ, ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করার জন্য নৌকা প্রার্থী ওসিকে মারধরের কথা প্রচার করছেন। একই সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন লোককে পুলিশে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথাও বলেছেন। এগুলো সুস্পষ্টভাবে নির্বাচনের আচরণ বিধি লঙ্ঘন বলে দাবি তাদের। ওসিকে মারধরের ভিডিও বক্তব্য অভিযোগ আকারে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।
এসব বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ায় ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী শাহীন মিয়া। তিনি বলেন, ‘আমরা তার বক্তব্য শুনেছি। তিনি ভোটারদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন যেন ভোটাররা নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে না যায়। তিনি শুধু ওসিকে মারধরের বক্তব্য দিয়েছেন এমন নয়, জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ারম্যানবৃন্দ, বহিরাগতদের এনে জড়ো করেছেন। সুষ্ঠ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করতেই তার এইসব চেষ্টা।’
অভিযুক্ত মৃধা মু. আক্তারুজ্জামান মিলন বলেন, ‘বক্তব্যে আমি পুলিশে চাকরি দেওয়ার বিষয়টি যেভাবে উপস্থাপন করতে চেয়েছিলাম, হতে পারে সেভাবে বুঝাতে পারিনি। গত নির্বাচনের (২০১৬ সাল) সময় বাবুগঞ্জের তৎকালীন ওসি মাহাবুব আমার তিনটি কেন্দ্রে গুলি করেছে। সেই তিনটি কেন্দ্রে আমি বিজয়ী হতাম। ওসি টাকা খেয়ে আমাকে হারিয়ে দিয়ে গেছে। সাবেক ডিআইজি হুমায়ুন ফোন করে আমাকে গালি দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক ডিসি রায়হান সাহেব আমাকে ফোন করে হুমকি দিয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘বক্তব্যে মানুষ অনেক কথাই বলে। বক্তব্য আর বাস্তবতা এক না। থানার ওসিকে মারধরের ঘটনা সত্য নয়। বুধবারের সভায় মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভোট পাওয়ার জন্য এটুকু বলতে হয়েছে।’
এ বিষয়ে বাবুগঞ্জ থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান বলেন, আগের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী আক্তারুজ্জামান মিলন থানায় ঢুকে ওসিকে মারধর করেছেন এমন বক্তব্য আমি এখনো শুনিনি। বিষয়টি জেনে আমি জানাবো।
বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, ওসিকে মারধর করার বক্তব্য অবশ্যই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। তাছাড়া কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা প্রচার করা, পেশী শক্তি ব্যবহারের হুমকি দেওয়াও লঙ্ঘন। প্রচার প্রচারণায় এমন আচরণ করলে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।