আগামী ২৮শে নভেম্বরের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের সাবেক এমপি ও দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল হক চৌধুরীর বড় ছেলে এমরান চৌধুরী কলিন্সের বক্তব্য নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী জামিরুল ইসলাম বাবু’র পক্ষে নির্বাচনী সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি প্রতিপক্ষ প্রার্থীকে হুমকিসহ অশালীন কথা বলেছেন।
এমরান চৌধুরী কলিন্স দৌলতপুর বিএনপির প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামের ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবিদ হাসান মন্টি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, ‘ভাই এখনো সময় আছে, আমরা কিন্তু এখনো আমাদের রুদ্ররূপ শুরু করিনি ভাই। এখনো সময় আছে আপনার মান সম্মান নিয়ে ঘরে উঠুন। সময় আছে মান সম্মান নিয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাঁড়ান, তা নাহলে রক্তের বন্যা বয়ে যাবে। আর আমরা যদি রুদ্রমূর্তি ধারণ করি, এটা হবে আপনার জন্যও খারাপ, আপনার দলের জন্যও খারাপ। আমরা আমাদের প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য কতকিছু করতে পারি, সেটা হয়তো আপনার ধারণা নেই। নৌকা পেয়েছে আমাদের জামিরুল ইসলাম বাবু ভাই।
কয়েক মিনিটের বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, জামিরুল ইসলাম বাবু টোকেন চৌধুরীর প্রার্থী, রেজাউল হক চৌধুরীর প্রার্থী, মাহবুব উল আলম হানিফ সাহেবের প্রার্থী। তাই তাকে বিজয়ী করার জন্য আমাদের যা যা করা দরকার তাই করবো। এমরান চৌধুরী কলিন্স ‘বিএনপির প্রার্থীকে হুঁশিয়ার দিয়ে আরও বলেন, আপনি আমাদের শ্রদ্ধাভাজন ভাই, আমি আপনাকে অনুরোধ করবো লোকবল তুলে, নির্বাচনের টাকা জমা দিয়েছেন সুন্দরভাবে মাইকিং করে অথবা সাংবাদিক সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জন করুন। এতে আপনারও ভালো হবে-আপনার দলের লোকদেরও ভালো হবে।’
যদি কখনো বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে, আপনি আবার নির্বাচন করবেন। আমরা সেদিন আপনাকে কিছু বলতে যাবো না, কিন্তু এখন আমার দল ক্ষমতায়, আপনি কেন এখন নির্বাচন করে শুধু শুধু নিজের ভাইবোনকে বিপদে রাখবেন। আপনি যদি আপনার দলের লোককে ভালোবেসে থাকেন, আপনি যদি আপনার গ্রামের লোককে ভালোবেসে থাকেন, তাহলে এই নির্বাচন বর্জন করে ঘরে উঠে বসে থাকুন। তা-না হলে ভাই এই রক্তের খেলা কিন্তু বন্ধ হবে না। এই রক্তের দায়ভার কিন্তু আপনাকে নিতে হবে। আগামী ২৮ তারিখে কিন্তু আপনি ভোট সেন্টারে যেতে পারবেন না, নিজের ভোটটাও দিতে পারবেন না। শুধু শুধু আপনি আপনার ক্ষতি করছেন।
দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, যারা এখনো নৌকায় ওঠেননি ও নৌকার মাঝি হননি তাদের সঙ্গেও আমাদের কথা হয়েছে। তারা কথা দিয়েছে অল্পদিনের ভিতরেই তারা নৌকাতে উঠবেন। আমরা আশাবাদী শাহীন ভাই সেও আসবে, ইনশাল্লাহ আমরা শাহিন ভাইকে সঙ্গে নিয়েই আগামী দিনের প্রোগামটা এখানে করবো।’
এ সভায় নৌকার প্রার্থী জামিরুল ইসলাম বাবুসহ ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ, জাসদ, জাকের পার্টিসহ বিএনপির স্বতন্ত্র মিলিয়ে ৬ জন চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌকার প্রার্থী জামিরুল ইসলাম বাবু বলেন, ‘কলিন্স ভাই এসেছিলেন আমার সমাবেশে। তিনি বক্তব্য দিয়েছিলেন।’
আর বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে এমরান চৌধুরী কলিন্স বলেন, ‘যা হওয়ার হয়েছে। ভাই বিষয়টি নিয়ে লেখালেখি না করাই ভালো। আমি প্রয়োজনে কথা বলবো।’
বিএনপির স্বতন্ত্র প্রার্থী আবিদ হাসান মন্টি সরকার বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও নৌকার প্রার্থী আমাকে মাঠে নামতে দিচ্ছে না। তারা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। সাবেক এমপির ছেলে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা গুরুতর অপরাধের শামিল। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এদিকে এমরান চৌধুরী কলিন্সের এমন বক্তব্য ও আচরণে সাধারণ জনমনে আতঙ্ক ও সংশয় দেখা দিয়েছে। এমন বক্তব্য ও আগ্রাসী আচরণ দেখালেও প্রশাসনিক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না বলে অন্যান্য প্রার্থীদের অভিমত।