দুই ডোজ টিকাপ্রাপ্তরা ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছে আবারো

Slider সারাবিশ্ব


দুই ডোজ টিকাপ্রাপ্তদের আবারো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত করছে এবং এদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে এসব ঘটনা ঘটছে। তবে বাংলাদেশে কী হচ্ছে তা নিয়ে গবেষণা নেই বললেই চলে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রে দুই ডোজ টিকা নেয়ার পর বুস্টার ডোজপ্রাপ্তরা (অতিরিক্ত এক ডোজ) পুনরায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলেও তাদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজের পরিচালক ড. অ্যান্থনি ফাউসি বলছেন, প্রতিরোধ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার কারণে টিকা প্রাপ্ত আমেরিকানদের মধ্যে সংক্রমণটা তীব্র হচ্ছে। তিনি বলছেন, পূর্ণমাত্রার টিকাপ্রাপ্তরাও উচ্চহারে করোনায় সংক্রমণে ভুগছেন। যারা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তারা নয়।’ তবে ড. ফাউসি টিকা প্রাপ্তদের মধ্যে কী হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে তা বিস্তারিত জানাননি। তিনি বলেন, সামনের শীতে করোনার নতুন ঢেউ শুরু হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত তিনটি টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা গত মার্চে গড়ে ৮৭ শতাংশ ছিল কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে তা ৪৮ শতাংশে নেমে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে ফাইজার, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশেও মডার্না ও ফাইজারের টিকা দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরোধ ক্ষমতা ৪৮ শতাংশে নেমে আসলে বাংলাদেশেও একই অবস্থা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অতএব বাংলাদেশেও টিকার বুস্টার ডোজ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যদিকে গর্ভবতী মায়েরা সাধারণ নারীদের চেয়ে ৫ গুণ বেশি করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে সংক্রমিত হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল (সিডিসি) বলছে, কেবলমাত্র ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টেই গর্ভবতিদের ৫ গুণ বেশি সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সবচেয়ে শঙ্কার তথ্য হলো, গর্ভাবস্থায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হলে সে মায়ের মৃত শিশু ভূমিষ্ঠ (স্টিল বার্থ) হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিডিসির প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ডেল্টার আগে এক হাজার গর্ভবতীদের মধ্যে ৫ জনের মৃৃত্যু হয়েছে।

কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মধ্যে প্রতি এক হাজার গর্ভবতীর মধ্যে মারা গেছে ২৫ জন অর্থাৎ আগের চেয়ে ৫ গুণ বেশি মারা গেছে ডেল্টা সংক্রমণের সময়। সিডিসির গবেষণায় বলা হয়েছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত গর্ভবতীদের মধ্যে মৃত শিশু জন্ম হয়েছে ডেল্টা সংক্রমণের আগের তুলনায় দ্বিগুণ। যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপি রাজ্যে এক হাজার ৬৩৭ জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। একই রাজ্যে ডেল্টার আগে এক হাজার জন গর্ভবতী মায়ের মধ্যে মারা গেছে ৫ জন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই রাজ্যে গত জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রতি এক হাজার জনে ২৫ জন মারা গিয়েছিল। তবে এদের কেউই পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত ছিল না।

এছাড়া সিডিসির গবেষকরা ২০২০ সালের মার্চ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ১২ লাখ নব জন্মের তথ্য বিশ্লেষণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রে এই সময়ে ২১ হাজার ৬৫৩ গর্ভবর্তী মা শিশু প্রসব করেন যারা করোনা সংক্রমিত ছিলেন। এর মধ্যে ১.২৬ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। সিডিসির গবেষকেরা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে গর্ভাবস্থায় টিকার নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। গত ১৯ নভেম্বর সিডিসি বলেছে, বর্তমানে সেখানে ৩৫ শতাংশ গর্ভবতী পূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত। গর্ভবতীদের মধ্যে যারা হাইপারটেনশনে ভুগছিলেন, যাদের কার্ডিয়াক সমস্যা ছিল এবং যাদের চিকিৎসার জন্য ভেন্টিলেশন নিতে হয়েছিল সে গর্ভবতী মায়েদেরই মৃত সন্তান হয়েছে।

সিডিসির উপদেষ্টা কমিটি শেষ পর্যন্ত পূর্ণ টিকা নেয়ার পরও অতিরিক্ত এক ডোজ টিকা বুস্টার ডোজ হিসেবে নিতে সুপারিশ করেছে। সিডিসির উপদেষ্টা কমিটির ১১ জনই বুস্টার ডোজের পক্ষে মতামত দিয়েছেন। তারা অবশ্য ৫০ বছরের বেশি বয়সী সকলের জন্য অবশ্যই বুস্টার ডোজ নেয়ার কথা বলেছেন। আর ১৮ থেকে ৪৯ বছর বয়সীদের জন্য বলেছেন তারাও নিতে পারে। এই নতুন সুপারিশের মানে হলো সকল বয়স্ক ব্যক্তিরই উচিত বুস্টার ডোজ নেয়া। গত ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে তিন কোটি ২৪ লাখ মানুষ বুস্টার ডোজ নিয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *