ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাত সহিংসতার ঘটনায় উদ্বিগ্ন নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, এই অবস্থা চলতে থাকলে আগামী জাতীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব পড়বে। অনিয়ম ও সহিংসতা রোধে দায়িত্বপ্রাপ্ত গাফিলতি রয়েছে বলেও মনে করেন দুই সাবেক নির্বাচন কমিশনার। তারা বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য এখন সব পক্ষকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশে এখন নির্বাচন এরকমই হবে। বিরোধী দল থাকুক বা না থাকুক, সরকারি দলের মধ্যেই মারামারি হবে। আরও হবে। ইউনিয়ন পরিষদে মাত্র দ্বিতীয় ধাপ গেছে।
এরপর যখন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে, এমপিরা যখন নমিনেশন পাবে তখন আরও মারামারি হবে। আমাদের ইলেকশন কমিশন কিছু করতে পারবে না। করার কোনো মুরোদ নেই।
দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সহিংসতার কারণ জানতে চাইলে সাখাওয়াত হোসেন বলেন, সহিংসতার কারণ হচ্ছে একই দল। দলের মধ্যে বেশির ভাগ সময় শোনা যায় মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। যারা জনপ্রিয় তাদের মনোনয়ন কোনো না কোনোভাবে দেয়া হয় নাই। কারণ এমপি সাহেবরা নিজেদের কর্তৃত্ব বহাল রাখতে চাইছেন। যে কারণে ম্যাজিস্ট্রেটকে গালাগালি, র্যাবকে গালাগালি এবং নিজেরা কর্তৃত্ব নিয়ে নিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের আর কি করার আছে? নির্বাচন কমিশনের তো কোনো কাজ নেই। তারা তো বলেই দিয়েছে আমাদের কিছু করার নেই। তারা ওখানে বসে বসে মন্তব্য দেবে আর সুযোগ পেলে বিদেশে ঘুরে আসবে। নির্বাচন কমিশন দেশে আছে কিনা সেটাও লোকে টের পায়নি। গোলাগুলি হয়েছে, মানুষ মারা গেছে এটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে কিনা তাও জানি না। তারা তো বলে এটা আমাদের দায়িত্ব না। পুলিশের দায়িত্ব, এর দায়িত্ব- ওর দায়িত্ব।
ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আর এরকমই নির্বাচন কমিশন সামনেও হবে। আগামীতেও এরকম লোক খুঁজে পাওয়া যাবে। নির্বাচন কমিশনের কোনো নিয়ন্ত্রক নাই, কোনো নিয়ন্ত্রণ নাই। কোনো ইনস্টিটিউশন নেই। কোনোভাবেই পলিটিক্যাল প্রসেস, ডেমোক্রেটিক প্রসেস সমুন্নত রাখার চেষ্টা করছে না। আর একটি দল যেহেতু বহু বছর ধরে সরকারে আছে। দলের ভেতরে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। এখন নিম্ন পর্যায় থেকে শুরু হয়েছে- এটা হয়তো আগামীতে আরও উঁচু পর্যায়ে দেখবো।
তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল না থাকলে দেশের রাজনীতিতে ভারসাম্য থাকে না। এটা বিরোধী দলের দোষ, তারা কেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে মাঠ ছেড়ে দিয়ে ‘ফ্রি ফর অল’ করতে দেয়। তারাও এই রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির জন্য দায়ী।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন বলেন, নির্বাচনে যে ধরনের নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার তার অভাব রয়েছে। নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং যারা নির্বাচন করছেন তারা যদি না চায় যে নির্বাচনকে আমরা অবাধ, সুষ্ঠু করবো তাহলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্নভাবে পক্ষপাতিত্ব। এসব কারণে নির্বাচন সুষ্ঠু হচ্ছে আর এসব নির্বাচন প্রকৃত নির্বাচন হচ্ছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
দেশে চলমান ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনে যে দলের ভেতরে মারামারি হচ্ছে কারণ মনোনয়ন পাওয়া লোকের বাইরে নিজের দলের লোক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তাদের বহু হুমকি দেয়ার পরও তারা নির্বাচনে লড়ছেন। কাজেই বোঝা যাচ্ছে যে, যোগ্য ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে না। নিজ থেকে সঠিকভাবে খবরটা উপরে উঠে আসে না। ফলে এবার দেখা যাচ্ছে বিরোধী যারা ছিলেন তারা অনেক বেশি পাস করে ফেলেছেন।
জানতে চাইলে ছহুল হোসাইন বলেন, নির্বাচনের আগে আগেই নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। নির্বাচন কমিশনে যোগ্য, সৎ লোক অনেকেই বলবে দিয়েছি। সরকারও বলবে দিয়েছি। তারপরও শক্ত একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হলে সবাইকে এক বাক্যে বলতে হবে আমরা সঠিক নির্বাচন চাই।