রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহর দাফন, বিচার দাবি

Slider ফুলজান বিবির বাংলা


কক্সবাজার: কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে নিজ অফিসে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার মুহিবুল্লাহর (৫০) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় জানাজা শেষে লম্বাশিয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মুহিবুল্লাহর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহাম্মদ সঞ্জুর মোরশেদ। ক্যাম্পের বিতর্কিত কথিত সংগঠন আরসা নেতারাই মাস্টার মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছেন নিহতের ছোটভাই হাবিব উল্লাহ। নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত করে ঘাতকদের শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
জানাজায় অংশ নেয়া রোহিঙ্গারা মুহিবুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেন।

উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ আহাম্মদ সঞ্জুর মোরশেদ বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে নিহত মুহিবুল্লাহ’র মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এখনো মামলা হয়নি। কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টায় জানাজা শেষে লম্বাশিয়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
কক্সবাজারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার শাহ রেজওয়ান হায়াত বলেন, রোহিঙ্গা মুহিবুল্লাহ হত্যাকা- ঘিরে যেসব অভিযোগ বা কথাবার্তা আমরা শুনতে পাচ্ছি সব বিষয় মাথায় রেখে তদন্তের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করা হবে।

মুহিবুল্লাহ হত্যাকা- পরবর্তী যাতে বিশৃঙ্খলা না হয় এজন্য সর্বস্তরে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার প্রায় ক্যাম্পে এনজিওদের নিয়মিত কার্যক্রম বন্ধ ছিল। জরুরি কাজে যারা ক্যাম্পে যান তারাও অন্যদিনের চেয়ে আরও আগে ক্যাম্প ত্যাগ করেন।

চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন বলেন, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে অভিযান চলছে। একই সাথে কি কারণে তাকে হত্যা করা হয়েছে সেটিও খতিয়ে দেখছি আমরা। পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা এ বিষয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এদিকে মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলামের মতে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ড পেছনে তিনটি কারণ থাকতে পারে। এ তিনটি কারণ সামনে রেখে তদন্ত করা হলে মুহিব্বুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।
প্রথমত, মুহিবুল্লাহ ক্রমাগতভাবে রোহিঙ্গাদের একক নেতৃত্বে চলে যাচ্ছিলেন। জাতিসংঘে গিয়ে বৈঠক করেছেন। জেনেভায় গিয়েছিলেন। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন। সবখানেই রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলেছেন। এতে তার জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ায় রোহিঙ্গাদের নেতৃত্বকামী অন্য সংগঠনগুলো সামনে আসতে পারছিল না। ফলে মুহিবুল্লাহর উত্থান মেনে নিতে না পেরে তাকে খুন করতে পারে প্রতিপক্ষরা।
আরেকটি কারণ হতে পারে, রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ সবসময় রোহিঙ্গাদের মাঝে রোহিঙ্গা জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করার চেষ্টায় ছিলেন। কিন্তু এর বিপরীতে যাদের অবস্থান তারাও এ হত্যাকা- ঘটাতে পারে।
সর্বশেষ মুহিবুল্লাহ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে সোচ্চার ছিলেন। কিন্তু কিছু দেশ ভূ-রাজনীতি বা কৌশলগত কারণে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন বিরোধী। সেসব দেশও মুহিবুল্লাহ হত্যাকা-ে পেছনে কলকাঠি নাড়তে পারে। জড়িত থাকতে পারে মিয়ানমার সরকারও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *