যশোরে শীত মৌসুমের আগাম চাষে ধুম পড়েছে। আগাম শাকসবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। বৃষ্টির কারণে চাষিরা সময়মতো সবজি চাষ শুরু করতে না পারলেও শেষ দিকে পুরোদমে চাষে নেমে পড়েছেন তারা। চলতি মৌসুমে যশোরে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির লক্ষ্য নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ জমিতেই বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ হয়েছে। এক থেকে দেড় মাসের ভেতর এসব সবজি বাজারে তুলবেন কৃষক।
কৃষক বলছেন, সামনে বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে না পড়লে এ অঞ্চলে রেকর্ড পরিমাণ আগাম জাতের সবজি উৎপাদন হবে।
জেলার সাতমাইল, চুড়ামনকাটি, বারিনগর, হৈবতপুর, কাশিমপুর, বন্দবিলা, লেবুতলা, নোঙরপুর, ইছালি ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকার মাঠজুড়ে চাষ করা হয়েছে বাঁধাকপি, ফুলকপি, শিম, মুলা, লালশাক-পালংশাক, সবুজ শাকসহ নানা ধরনের সবজি। আগাম শীতকালীন চাষ করলে ফসলের বেশি দাম পাওয়া যায়। তাই পুরোদমে চলছে মাঠ প্রস্তুত, বীজ বপন, চারা রোপণ ও পরিচর্যার কাজ। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন শুধু সবুজের সমারোহ।
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, দেশের চাহিদার প্রায় ৬০ শতাংশ সবজিই যশোর থেকে সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে পাইকারদের হাত ধরে সবজি চলে যায় রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে। প্রায় বছরজুড়েই এ অঞ্চলের চাষিরা নানা জাতের সবজি চাষ করে থাকেন। তবে শীত মৌসুম ঘিরে সবজি চাষের ধুম পড়ে এ জেলায়।
গত শুক্রবার সকালে যশোর সদর উপজেলার ইছালী ইউনিয়নে গিয়ে দেখা যায়, মাঠকে মাঠ শুধু সবজির ক্ষেত। ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, পালংশাক, লালশাক, সবুজ শাক, বেগুন, টমেটোসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ শুরু করেছেন কৃষক। এসব ক্ষেত পরিচর্যা করছেন তারা। যশোর-মাগুরা মহাসড়কের পাশেই রাজাপুর মাঠে কথা হয় সবজি চাষি আব্দুল গফুরের সাথে। তিনি বলেন, এ বছর দীর্ঘ অনাবৃষ্টি আর তীব্র গরমের কারণে সময়মতো শীতকালীন সবজির চাষ শুরু করতে পারেনি। যে কারণে একটু দেরি হয়েছে। গত এক সপ্তাহ থেকে এ অঞ্চলে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় আমরা এখন পুরোদমে চাষ শুরু করেছি। তিনি বলেন, আমি দেড় বিঘা জমিতে কপি ও ১০ কাটা জমিতে লালশাকের চাষ করেছি। আশা করি এখান থেকে ভালো লাভ করব।
একই মাঠে কথা হয়, সাহেব আলী নামে আরেকজন কৃষকের সাথে। তিনি বলেন, শীতকালীন সবজি উৎপাদনে উপযুক্ত সময়ের আগেই আমরা সবজি বাজারে তুলতে চাই। এ জন্য একটু আগেভাগে সবজি চাষ শুরু করেছি। আশা করছি আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে এবং ভালো দাম পাবো। তবে সবজি বাজারে তোলার সময় কাক্সিক্ষত দাম পাবো কি না তা নিয়ে শঙ্কায় আছি আমরা। পাশেই নোঙরপুর মাঠে কথা হয় সবজি চাষি শরিফুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, প্রতি বছর আমরা এ অঞ্চলের চাষিরা বিপুল পরিমাণ জমিতে বাঁধাকপির আবাদ করি। কয়েক দিনের মধ্যে এসব ফসল বাজারে তুলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, যশোর সবজি জোন হিসেবে পরিচিত। প্রায় সারা বছর ধরেই এ জেলার চাষিরা নানা জাতের সবজি চাষ করে থাকেন। এ বছর বাজারে সবজির ভালো দাম থাকায় কৃষক ভালো লাভবানও হয়েছে। এসব কারণে চাষিরা শীত সামনে রেখে যতœ সহকারে সবজি চাষ শুরু করেছেন। তিনি বলেন, শীতকালীন আগাম জাতের এসব সবজি চাষ লাভজনক করে তুলতে আমাদের মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের কারিগরি সহায়তার পাশাপাশি নানাভাবে সহযোগিতা করছেন।