সুনামগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত প্রস্তাবিত রেললাইন নিয়ে ফেসবুকে পাল্টাপাল্টি স্ট্যাটাস দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন এবং পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। রেলের এই রুটের বিষয় নিয়ে নিজেদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে বলে মনে করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। আর আলাপ-আলোচনা না করে রেলের ওই রুট নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তবে নিজেদের ফেসবুক পেজ থেকে দেয়া স্ট্যাটাসে দুই মন্ত্রীই তাদের ৫০ বছরের দীর্ঘ সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ করেছেন। ফেসবুকে প্রথম স্ট্যাটাসটি দিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। গত ১৪ জুন দেয়া সেই স্ট্যাটাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিখেছিলেন, ‘মান্নান আমার বন্ধু, মান্নানের সাথে আমার সম্পর্ক ৫০ বছরের অধিক। আমি এবং মান্নান সুখে–দুঃখে সব সময়ই ছিলাম এবং আছি, ভবিষ্যতেও আমৃত্যু থাকব বলেই আশা করি। দুঃখজনক যে, সিলেটের একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে দেখলাম আমার এবং মান্নানের মধ্যে নাকি দ্বন্দ্ব রয়েছে এবং এই দ্বন্দ্বের কারণে নাকি সিলেটের অনেক উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে! কে বা কারা এই সংবাদটি প্রচার করছেন জানি না, তবে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং বানোয়াট।
যে বা যারা এটি প্রচার করছেন, তারা হয়তোবা কোনো বিশেষ বা অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য করছেন। ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটির প্রয়োজন আছে বলে মনে করছি না, তবে একটি বিশেষ কারণে দিচ্ছি আর তা হলো আমার এবং মান্নানের স্থানীয় অনেক শুভাকাঙ্ক্ষী রয়েছেন আর তাঁদের মধ্যে যাতে কোনো বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয়।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে পাল্টা স্ট্যাটাস দেয়া হয় পরিকল্পনামন্ত্রীর দপ্তর থেকে। ফেসবুক পেজে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘এটা সত্য যে ড. মোমেনের সঙ্গে আমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দীর্ঘ ৫০ বছরের। কিন্তু তিনি সুনামগঞ্জের পাঁচজন সংসদ সদস্যের পাশে রয়েছেন উল্লেখ করে রেলমন্ত্রীর কাছে যে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দিয়েছেন, সেটি আমাকে বিস্মিত করেছে। তিনি যে পাঁচজন এমপির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন, সেখানে একজন জাতীয় পার্টির এমপিও রয়েছেন। আব্দুল মোমেন ভালো করেই জানেন, আমিও (মান্নান) সুনামগঞ্জের একজন সংসদ সদস্য। সুনামগঞ্জের সঙ্গে ছাতকের রেললাইন নির্মাণ নিয়ে তিনি যেমন অবগত, ঠিক তেমনি বিষয়টি আমিও অবগত। আমি যতটুকু জানি, তাঁর বর্ণিল জীবনে তিনি কখনো সুনামগঞ্জে যাননি।সুনামগঞ্জে কখনো তাঁর পা পর্যন্ত পড়েনি। অথচ তিনি রেললাইন নির্মাণ নিয়ে একটি পক্ষের অবস্থান নিয়েছেন। অন্য কেউ হলে এই পরিস্থিতিতে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইতেন। কিন্তু আমাদের দীর্ঘ ৫০ বছরের বন্ধুত্ব একই সঙ্গে আমরা দুজনেই মন্ত্রিসভার সদস্য অথচ তিনি আমার সঙ্গে এ বিষয়ে এতটুকু যোগাযোগ করেননি। আমার সঙ্গে কথা না বলে অন্য পাঁচজন সংসদ সদস্যের পক্ষ নিয়ে রেলমন্ত্রীকে ডিও লেটার পাঠানো কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
জানা গেছে, সুনামগঞ্জ থেকে ছাতক পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। রেললাইনের রুট নির্ধারণ নিয়ে রেলমন্ত্রী কথা বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রীর সঙ্গে। রেললাইনের রুট নির্ধারণ নিয়ে তিন থেকে চারটি রুট নিয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সুনামগঞ্জের পাঁচজন সংসদ সদস্যের পক্ষে অবস্থান নিয়ে একটি ডিও লেটার দেন রেলমন্ত্রীকে।