আদালতে জবানবন্দির পর আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনান ও তার দুই সঙ্গীকে নিজ নিজ পরিবারে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে রংপুর মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয় থেকে তাদের মহানগর আমলি আদালতে (কোতোয়ালি) নেওয়া হয়। রংপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, আবু ত্ব-হা নিখোঁজের ঘটনায় দুটি জিডি হয়েছিল। তার মা একটি জিডি করেন এবং তার সঙ্গে নিখোঁজ থাকা আমিরুদ্দিনের ভাই ফয়সাল আরেকটি জিডি করেন। আজ আমরা গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি, ত্ব-হা তার প্রথম স্ত্রীর বাড়িতে আছেন। সেখান থেকে তাকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদে ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানান আবু ত্ব-হা। পরে তার সঙ্গীরাও বিষয়টি স্বীকার করেন। প্রাথমিক এই জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত সোয়া ৯টার দিকে তাদেরকে ডিবি কার্যালয় থেকে আদালতে পাঠানো হয়।
এর আগে আলোচিত ইসলামি বক্তা আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের আত্মগোপন উদ্দেশ্যমূলক এবং সরকারকে বা দেশের মানুষকে বিব্রত করতে নয় বলে জানায় রংপুর জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বিকেল ৫টার দিকে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন রংপুর মহানগর পুলিশের (আরএমপি) ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন।
মারুফ হোসেন বলেন, এটা উদ্দেশ্যমূলক না। সরকারকে বা দেশের মানুষকে বিব্রত করতে এটা করেনি। এখন পর্যন্ত এটা মনে হয়নি। এত কিছু ভেবে তারা করেনি। আবু ত্ব-হা শিক্ষিত ছেলে। তাই সে ফোন বন্ধ করে রেখেছিল। সে জানে তার ফোন যদি অন করা হয় তাহলে তাকে শনাক্ত করা যাবে। তাই সে ফোন সুইচড অফ করে রেখেছিল। তারা সবাই একসঙ্গে ছিলেন। একই বাড়িতে ছিলেন। ড্রাইভার আমিন উদ্দিনকে মডিফাইয়েড করে বলেছিল, আমাকে একটু সহায়তা করো। তাহলে আমার জন্য ভালো হবে। আমাকে এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে হলে আমাকে একটু হেল্প করো। আমারা একটু গোপনে থাকি। সামাজিক ও পারিবারিক পরিস্থিতি থেকে বাঁচতেই আত্মগোপন করেন ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনান।
ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনের পর শুক্রবার ভোরে ত্ব-হাকে তার প্রথম স্ত্রীর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়। তার সঙ্গীদেরও উদ্ধার করে পুলিশ। বিকেল পৌনে পাঁচটার সংবাদ সম্মেলনে আরএমপি ক্রাইম ডিভিশনের উপকমিশনার আবু মারুফ হোসেন আরও বলেন, মা ও ভাইয়ের জিডির সূত্রে আমরা (ত্ব-হার) অনুসন্ধান করতে থাকি। আজকে আমরা গোপন সূত্রে জানতে পারি ত্ব-হা তার (রংপুর নগরের) চারতলার মসজিদে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে আছেন। সেই সংবাদ পেয়ে আমরা তাকে নিয়ে আসি। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে আমরা অপর সঙ্গীদেরও সন্ধান পাই। গাইবান্ধায় বন্ধু সিয়ামের বাসায় ব্যক্তিগত কারণে আত্মগোপনে ছিলেন চারজনই। বন্ধু বাসায় না থাকলেও তার মায়ের কাছে ছিলেন এরা। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে ত্ব-হা আত্মগোপনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সফরসঙ্গীরাও তাদের ফোন বন্ধ করে ত্ব-হার কাছে রেখে দেন। তাকে রংপুরে তার প্রথম স্ত্রীর বাসা থেকেই উদ্ধার করা হয়। আপাতত পুলিশ হেফাজতেই থাকবেন তিনি।
ভোরে উদ্ধারের পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয় আবু ত্ব-হাকে। তার আগে এ ধর্মীয় বক্তার সন্ধান পাওয়া যায়। তিনি তার শ্বশুর বাড়ি অবস্থান করছিলেন। খোকন নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি নগরীর মাস্টারপাড়ায় আবু ত্ব-হাকে দেখেন। কিন্তু ত্ব-হা সে সময় কোনো কথা বলেননি। বরং, মুখে আঙুল দিয়ে চুপ থাকতে বলেন। পরে তাকে রংপুর নগরের আবহাওয়া অফিস সংলগ্ন মাস্টার পাড়ার শ্বশুরবাড়ি থেকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। আবু ত্ব-হাসহ চারজনকে বিকেল পৌনে তিনটার দিকে রংপুর কোতোয়ালি থানায় নেওয়ার কথা নিশ্চিত করেন সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ।
এসব বিষয়ে কথা বলতে ত্ব–হার শ্বশুরবাড়িতে গেলে তার শ্বশুর আজহারুল মণ্ডল এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। ত্ব–হার নানাবাড়িতে গেলেও কেউ এ ব্যাপারে কোনো কথা বলেননি।
গত ১০ জুন দিবাগত রাত থেকে কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না আবু ত্ব-হা মুহাম্মদ আদনানের। নিখোঁজের সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার দুই সঙ্গী আব্দুল মুহিত, মোহাম্মদ ফিরোজ ও গাড়িচালক আমির উদ্দিন। সেদিন বিকেল ৪টার দিকে ওই তিনজনসহ আবু ত্ব-হা রংপুর থেকে ভাড়া করা একটি গাড়িতে ঢাকার পথে রওনা দেন। রাতে মোবাইল ফোনে সর্বশেষ কথা হলে তিনি সাভারে যাচ্ছেন বলে তার মাকে জানান। এরপর রাত ২টা ৩৬ মিনিটে স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা হয় আদনানের। তাকেও সাভার যাচ্ছেন বলেন জানান ত্ব-হা। তারপর থেকেই তার ফোন বন্ধ থাকায় আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। গত ১১ জুন বিকেলে ছেলের সন্ধানে রংপুর কোতোয়ালি থানায় জিডি করেন ত্ব-হার মা আজেদা বেগম।