দেশে আরও দুজনের শরীরে নাইজেরিয়ায় শনাক্ত করোনার ধরন ইটা পাওয়া গেছে। তাদের একজন ঢাকার (৩২), আরেকজন সিলেটের (৩১) বাসিন্দা। গতকাল মঙ্গলবার করোনাভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত তথ্যভান্ডার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটার (জিসএআইডি) ওয়েবসাইটে বাংলাদেশে করোনার এ ধরন শনাক্তের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশে এ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের পাঁচটি ধরন শনাক্ত হয়েছে। এগুলো হলো— যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, নাইজেরিয়া। এর মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনার যুক্তরাজ্যের ধরনকে আলফা, ব্রাজিলের ধরনকে গামা, ভারতীয় ধরনকে ডেল্টা, দক্ষিণ আফ্রিকার ধরনকে বিটা এবং নাইজেরিয়ার ধরনকে ইটা বলে নামকরণ করেছে।
নতুন করে পাওয়া করোনার ইটা ধরনটির গবেষণায় এই দুই ব্যক্তির নমুনা বিশ্লেষণ করেছে বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিষ্ঠান চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন। করোনাভাইরাসের ইটা ধরনের নাম বি.১.৫২৫, যা নাইজেরিয়ার ধরন বলে পরিচিত।
গত বছরের ডিসেম্বরে করোনার এই ধরনটি প্রথম নাইজেরিয়াতে শনাক্ত হয়। এরপর তা যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। সারা বিশ্বে করোনার ইটা ধরন ৬০টি দেশে ছড়িয়েছে বলে জানা গেছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, করোনার এই ধরনটির ঝুঁকি নিয়ে তারা গবেষণা করছেন। এটাকে বর্তমানে বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণে (ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার ইনভেস্টিগেশন) রেখেছেন। তবে যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা করোনার ইটা ধরনটির মধ্যে ‘তাৎপর্যপূর্ণ রূপান্তর’ (সিগনিফিকেন্ট মিউটেশন) পেয়েছেন।
জিআইএসএইআইডির সর্বশেষ তথ্য বলছে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪৪ জনের মধ্যে করোনার ডেল্টা ধরন শনাক্ত হয়েছে। করোনার আলফা ধরন শনাক্ত হয়েছে ৮৪ জনের মধ্যে। বিটা ধরন শনাক্ত হয়েছে ২৭ জনের মধ্যে। বাংলাদেশে ইটা ধরন মিলেছে ১৫ জনের মধ্যে এবং করোনার গামা ধরনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে একজন ব্যক্তির মধ্যে।
জিআইএসএইআইডির তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে ডেল্টা ধরন মিলেছে ২৩ জনের মধ্যে। তাঁদের কারও সম্প্রতি ভারত ভ্রমণের ইতিহাস নেই। নতুন করে ডেল্টা ধরন শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে শিশুও আছে। এই ২৩ জনের মধ্যে ১৮ বছরের নিচে বয়স আছে চারজনের। ডেল্টা ধরনে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে কম বয়সী হচ্ছে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশু।
নতুন করে করোনার ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হওয়া ২৩ জনের মধ্যে ১৬ জনই চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা। বাকি ছয়জন গোপালগঞ্জের এবং একজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা।
এর বাইরে যশোর, পিরোজপুর, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, গাইবান্ধা, দিনাজপুরের বাসিন্দারা করোনার ভারতীয় ধরনে আক্রান্ত হয়েছেন বলে সে তথ্য জিআইএসএআইডির তথ্যভান্ডারে প্রকাশিত হয়েছে।
বাংলাদেশের গত ৭ মে প্রথম দুই ব্যক্তির শরীরে করোনার ডেল্টা ধরনের (বি.১.৬১৭) অস্তিত্ব পাওয়া যায়। তারা দুজনই সম্প্রতি ভারত থেকে দেশে ফেরেন। এ পর্যন্ত দেশে ৪৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ডেল্টা ধরনের উপস্থিতি পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এদের মধ্যে কেবল ১১ জন সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ করেছেন। বাকিরা দেশেই সংক্রমিত হয়েছেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের গবেষকেরা বলছেন, করোনার জিনোম গবেষণায় প্রায় ৭০ শতাংশ পাওয়া যাচ্ছে ডেল্টা ধরন। এটি অনেক বেশি সংক্রামক অন্য ধরনগুলোর তুলনায়। বেশি সক্ষমতার কারণে এটি সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে বেশি ছড়াচ্ছে।
যবিপ্রবি জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক ও মো. ইকবাল কবীর বলেন, ‘করোনার ডেল্টা ধরন সীমান্তবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে স্থানীয় সংক্রমণ (লোকাল ট্রান্সমিশন) করছে। নতুন করে এই ধরনে আক্রান্তদের অবশ্য কেউ ভারতে যাননি। তবে তারা হয়তো সম্প্রতি ভারত ভ্রমণ করে এসেছেন এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এসেছিলেন। এভাবেই কিন্তু এই ধরনটি বেশি ছড়াচ্ছে।’