রাজধানীর দক্ষিণখানের সরদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুর রহমানের (৫৪) সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে নিজের স্বামী আজহারুল ইসলামকে খুন করান আসমা আক্তার (২৬)। স্বামীকে হত্যা না করলে প্রেমিক ইমামকেই মেরে ফেরার হুমকি দেন তিনি। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে গত মঙ্গলবার রাজধানীর আবদুল্লাহপুর থেকে রাতে আসমাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে, পরিকল্পনা করেই স্থানীয় সরদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুর রহমানকে দিয়ে নিজের স্বামীকে খুন করান ওই নারী। মূলত ইমামের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েছিলেন আসমা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
এ বিষয়ে গতকাল বুধবার র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘নিহত আজহারের সঙ্গে মসজিদের ইমাম মাওলানা আবদুর রহমানের পারিবারিক সম্পর্কের মতো ছিল। আজহার-আসমা দম্পতির চার বছরের শিশুসন্তানকে আরবি পড়াতেন ইমাম আবদুর রহমান। আজহারকেও আরবি পড়াতেন তিনি। সেই সুবাদে ৫-৬ মাস ধরে তাদের বাসায় আসা-যাওয়া ছিল ইমামের। এর মধ্যেই আজহারের স্ত্রী আসমার সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্ক তৈরি হয়।’
র্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এক সময় আজহারকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য মসজিদের ইমামকে বলেন আসমা। আর সেই কাজটি ভাড়াটে কাউকে দিয়ে করানোর জন্য বলেন। কিন্তু অন্যকে দিয়ে না করিয়ে ইমাম আবদুর রহমান নিজেই খুনের ছক কষেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৯ মে রাতে আজহারকে মসজিদে ডেকে নেন ইমাম। সেখানেই ছুরি দিয়ে হত্যা করেন তাকে। এর পর নিজের শয়নকক্ষেই লাশ ছয় টুকরো করে ফেলে দেন সেপটিক ট্যাংকে।’
এর মধ্যে গত ২৪ মে র্যাব ১-এর গোয়েন্দা দল গোপন সূত্রে জানতে পারে, সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সিঁড়িতে রক্তের দাগ লেগে আছে এবং পাশের সেপটিক ট্যাংক থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এ তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা দল ছায়া তদন্ত শুরু করে। ওই দিন রাতেই সেপটিক ট্যাংক থেকে নিখোঁজ আজহারের খণ্ডিত লাশ উদ্ধারসহ হত্যাকাণ্ডের মূলহোতা সংলগ্ন মসজিদের ইমাম মো. আবদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, আসমা আক্তার প্রায়ই বলত যদি আজহারুলেকে হত্যা না করতে পারেন তাহলে তিনি নিজে আত্মহত্যা করব, নয়তো ইমামকে হত্যা করবেন। হত্যাকাণ্ডের পরে আসমা ইমামকে বিয়ে করবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) অনুজ কুমার সরকার গতকাল আসামিদের আদালতে হাজির করে প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন। আদালত দুজনের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আসমা আক্তারের পক্ষে আইনজীবী দিলীপ কুমার সরকার রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, ‘ঘটনা মসজিদের ভেতরের। তখন আসমা ছিলেন শ্বশুরবাড়িতে। কী কারণে তার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে তিনি তা জানেন না। যে এ ঘটনা ঘটিয়েছে, তার সাজা চাই। কিন্তু নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন। আসমার একটা ছোট সন্তান রয়েছে। সব কিছু বিবেচনায় তার রিমান্ড বাতিলপূর্বক জামিন প্রার্থনা করছি।’
আসামি আবদুর রহমানের পক্ষে আইনজীবী বলেন, ‘মসজিদের ইমাম আবদুর রহমান এলাকার ষড়যন্ত্রের শিকার। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। হয়রানি করার জন্য তাকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। বয়স্ক মানুষ। রিমান্ডে নিলে তাকে টর্চার করা হবে। তাই রিমান্ড বাতিল করে তাকে জামিন দেওয়া হোক। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম নিভানা খায়ের জেসী দুই আসামির পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।