শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম বারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ২-০ ব্যবধানে জিতে ২২ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটালো টাইগাররা। ১৯৯৯ সালে প্রথম দ্বিপক্ষীয় আন্তর্জাতিক ওয়ানডে পথ চলা শুরু করে টাইগাররা। দীর্ঘ এই পথ চলায় ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও আক্ষেপের নাম হয়ে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা। অবশেষে সেই ক্ষত কিছুটা পূরণ হয়েছে। বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে বাংলাদেশ হারিয়েছে ১০৩ রানে। ইতিহাস গড়া সিরিজ জয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লীগে শীর্ষে উঠলো টাইগাররা। ৫০ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়াকে টপকে গেলেন তামিম-মুশফিকরা।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে মুশফিকুর রহীমের সেঞ্চুরির পরও ২৪৬ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। তবে মিরপুরের উইকেটে ২৪৬ রানকেই বড় স্কোর বানিয়ে ফেলেন বাংলাদেশের বোলাররা।
এদিন শুরুটা করেন অভিষিক্ত শরিফুল ইসলাম। বাকি কাজটা সারেন মিরাজ, মোস্তাফিজ ও সাকিব। আগের ম্যাচের চার উইকেট নেয়া মিরাজ ২৮ রানে নেন ৩ উইকেট। তিন উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান। সাকিব ঝুলিতে ভরেছেন ২ উইকেট। এদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা থামে ১৪১ রানে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এই ম্যাচের আগ পর্যন্ত ৪৯টি ওয়ানডে খেলে বাংলাদেশ জিতেছিল মাত্র ৮টি। টেস্টে তাদের বিপক্ষে ২২ ম্যাচে জয় মাত্র একটি এবং টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের অর্জন এখন পর্যন্ত ১১ ম্যাচে ৪ জয়। এটি লঙ্কানদের বিপক্ষে নবম দ্বিপক্ষীয় সিরিজ। ২০১৩ ও ২০১৭ সালে দুটি সিরিজ ড্র হয়, বাকি সবগুলোয় জয় লঙ্কানদের। এর আগে লঙ্কানদের কখনো টানা একাধিক ম্যাচে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। এবার সেসব অপূর্ণতা ঘুচেছে এই সিরিজে। এসব অপূর্ণতা পূরণের পাশাপাশি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লীগে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে উঠে গেল বাংলাদেশ।
২৪৭ রানের টার্গেটে দারুণ আত্মবিশ্বাসী হয়ে শুরু করেছিল লঙ্কানরা। কিন্তু তাদের সেই শুরু বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। সফরকারীরা ৮৯ রানেই হারায় ৫ উইকেট। অভিষিক্ত তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম ১৪ রান করা লঙ্কান অধিনায়ক কুশল পেরেরাকে আউট করে দলের পক্ষে প্রথম উইকট উপহার দেন। এরপর আরেক ওপেনার ধানুশকা গুনারত্নায়কে ২৪ রানে আউট করে সাজঘরের পথ দেখান মোস্তাফিজুর রহমান। এরপর আগের ম্যাচে ৪ উইকেট পাওয়া অফস্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ দ্বিতীয় ম্যাচেও বল হাতে ছিল দুর্দান্ত। তার এদিন তিন শিকারের নাম অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস, দাসুন সাকানা ও আগের ম্যাচের ব্যাটে ঝড় তোলা হাসারাঙ্গা। দীর্ঘদিন পর দলে ফেরা সেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় ম্যাচেও ব্যাট হাতে ব্যর্থ। গতকাল তিনি আউট হন শূন্য রানে। তবে বল হাতে দলকে এনে দেন দুই উইকেট। পেসার মোস্তাফিজুর রহমান তার দুর্দান্ত বোলিং অব্যাহত রেখেছেন। তার নিজের পরপর দুই ওভারে তুলে নিয়েছেন দুটি উইকেট। ৩৫তম ওভারে মোস্তাফিজের বলে মিড অফে মাহমুদুল্লাহকে ক্যাচ দেন আশেন বান্দারা। ১৫ রান করে আউট হন তিনি। ৩৪.৪ ওভারে ৮ উইকেটে ১১৬ রান তুলে ধুঁকতে থাকা শ্রীলঙ্কাকে আরো একবার হতাশ করেন মোস্তাফিজ। তিনি সাজঘরের পথ দেখান লক্ষণ সান্দাকানকে। এরপর অবশ্য ৩৮তম ওভার শেষে বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় খেলা। তখন শ্রীলঙ্কার স্কোর ছিল ৯ উইকেটে ১২৬ রান। এরপর আবার খেলা শুরু হলে ডার্ক অ্যান্ড লুইস পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কার টার্গেট দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ২৪৫ রান। শ্রীলঙ্কার অপরাজিত দুই ব্যাটসম্যান যখন মাঠে নামেন তখন তাদের দরকার দুই ওভারে ১১৯ রান। কিন্তু তারা দুই ওভারে করতে পেরেছে ২০ রান। এতে বাংলাদেশ জয় পেয়েছে ১০৩ রানে। সিরিজের প্রথম ম্যাচে সাকিবদের জয়টি এসেছিল ৩৪ রানে।
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৫ রানেই তামিম সাকিবের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে দলকে টেনে তোলেন মুশফিকুর রহীম। আগের ম্যাচে ৮৪ রানে আউট হয়েছিলেন। এবার আর ভুল করেননি। দীর্ঘ ২৩ মাস পর এলো মুশফিকের সেঞ্চুরি। পরে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন ১২৫ রান করে। ১২৭ বলের ইনিংসটি সাজিয়েছেন ১০টি চারের মারে। শেষদিকে সাইফুদ্দিনের ১১ রানের কল্যাণে ইনিংসের ৪৯তম ওভারে অলআউট হওয়ার আগে ২৪৬ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। শ্রীলঙ্কার হয়ে চামিরা ও সান্দাকান ৩টি করে উইকেট নেন।