গাজীপুরঃ জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ের জের ধরে গাজীপুর মহানগরের কুনিয়া তারগাছ এলাকায় ছেলের তালাক দেওয়া স্ত্রী ও দুই নাতি ছেলে কর্তৃক লোহার রড দা দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা মামলায় ২জন আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করলেও উক্ত মামলার ২নং পলাতক আসামীকে পুলিশ আজও গ্রেফতার করতে পারেনি তাই অতী দ্রুত মামলার ২নং পলাতক আসামীকে গ্রেফতারের দাবী জানিয়েছে নিহত জমিলা খাতুনের ছোট ছেলে মামলার বাদী হাজী শহিদুজ্জামান সুমন।
উল্লেখ্য, কুনিয়া তারগাছ এলাকার মরহুম আসকর আলী বিএসসির স্ত্রী জমিলা খাতুন(৬০) এর সাথে বড় ছেলে আশরাফুজ্জামান সেলিমের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নাছিমা আক্তার লিলি(৪৫), তার ছেলে আশিকুজ্জামান দীপ্ত(১৯), আরেক ছেলে শাকিরুজ্জামান অর্ক(১৮) দীর্ঘদিন যাবৎ মরহুম আসকর আলী বিএসসির স্ত্রী হাজিয়ানী মোছাঃ জমিলা খাতুন(৬০) এর সাথে জমি জমা সংক্রান্ত বিষয়ে শত্রুতা করে আসতেছিল। উক্ত শত্রতার জের ধরে গত ৬/২/২০২১ইং বেলা আনুমানিক ১২টার দিকে হাজিয়ানী জমিলা খাতুন(৬০) বাসার সামনে মারকো সিএনজি পাম্পের পাশে দাড়িয়ে থাকাকালে উল্লিখিত আসামীরা উক্ত সিএনজির পাম্পের সামনে এসে হাজিয়ানী জমিলা খাতুন(৬০)কে এলোপাথারী ভাবে কিলঘুষি মেরে নিলাফোলা জখম করে টেনেহেচরে তাদের বসতবাড়ীর একটি কক্ষে নিয়ে আটক করে পুনরায় মারপিট করতে থাকে, এসময় ১নং আসামী নাছিমা আক্তার লিলি একখানা দাড়ালো দা দিয়ে পঙ্গু করার উদ্দেশ্যে তার ডান পায়ের নীচে সজোরে কোপ মেরে রক্তাত্ত জখম করে এসময় বৃদ্ধা জমিলা খাতুন আতঃচিৎকার করা অবস্থায় মেঝেতে লুটিয়ে পড়লে আসামী শাকিরুজ্জামান অর্ক জমিলা খাতুনের পরিহিত ওড়না গলায় পেচিয়ে তাঁকে শ্বাষরোধ করিয়া হত্যার চেষ্টা করে। এসময় জমিলা খাতুন প্রান রক্ষার্থে ছুটিয়া যাওয়ার চেষ্টা করলে ২নং আসামী আশিকুজ্জামান দীপ্ত লোহার রড দিয়ে জমিলা খাতুনের দুই পায়ের হাটুর নীচে বাড়াইয়া হাড়ভাঙ্গা জখম করে জমিলা খাতুনের নিকট ব্যাগে থাকা নগদ ১ লক্ষ টাকা কাড়িয়া নেয়, জমিলা খাতুনের আতঃচিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে উল্লিখিত আসামীরা পালিয়ে যায়, এসময় লোকজনের সহায়তায় জমিলা খাতুনকে প্রথমে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকগণ তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা করে সাথে সাথে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি করার জন্য রেফার করে। উক্ত ঘটনায় গত ০৭/০২/২০২১ইং তারিখ গাছা থানায় ১টি মামলা দায়ের করেন হাজিয়ানী জমিলা খাতুনের ছেলে হাজী মোঃ শহিদুজ্জামান সুমন যার নং-০৭। উক্ত মামলা হওয়ার পর গাছা থানার এসআই রাশেদ অভিযান চালিয়ে নিজ বাসা থেকে মামলার ১নং আসামী ছেলের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী নাছিমা আক্তার লিলি(৪৫), ও ছোট ছেলে মামলার ৩নং আসামী শাকিরুজ্জামান অর্ক(১৮)কে আটক করে থানায় নিয়ে এসে কোর্টে প্রেরণ করে। এদিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দীর্ঘ ৫৯ ঘণ্টা মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে জমিলা খাতুন(৬০) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু বরণ করেন।
এদিকে মৃত্যু ২৪দিন অতিবাহিত হলেও মামলার ২নং আসামীকে পুলিশ আজও গ্রেফতার করতে না পারায় মামলার বাদীসহ নিহতের পরিবারের মাঝে দেখা দিয়েছে হতাশা। মামলার বাদী হাজী শহিদুজ্জামান সুমন এই প্রতিবেদককে জানান, আমার বাবা ছিল গাছা থানা আওয়ামীলীগের একজন প্রবীন নেতা, আমার বাবা ছিল একজন মুক্তিযোদ্ধা আমার বাবা মুক্তিযুদ্ধ করতে গিয়ে পাকিস্তানিদের হাতে বহু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, আমার মা মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিকভাবে সহযোগীতা করেছেন, আমার মা জীবিত থাকার আগ পর্যন্ত ছিল একজন আওয়ামীলীগের অন্ধ ভক্ত ও নিবেদিত কর্মী কিন্তু আমার মাকে প্রকাশ্য দিবালোকে এভাবে পিটিয়ে রক্তাত্ব জখম করে আমার মাকে মেরে ফেললো তার কী কোনো বিচার আমরা পাবনা? আজ ২৪দিন আমার মায়ের এমন নির্মম মৃত্যুর সময় পেরিয়ে গেলেও মামলার ২নং পলাতক আসামী আশিকুজ্জামান দীপ্তকে পুলিশ আজ পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ তাহলে কী আমার মায়ের হত্যার বিচার দ্রুত হবে না তাই গাছা থানা পুলিশের নিকট আবেদন আমার মায়ের হত্যাকারী মামলার ২নং আসামীকে গ্রেফতার করে অতী দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হউক।
এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গাছা থানার এস.আই. রাশেদুর রহমান জানান, উক্ত ঘটনায় আমরা ২জন আসামীকে গ্রেফতার করেছি এবং বাকী ১জন আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
অপরদিকে গাছা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ ইসমাইল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, উক্ত ঘটনায় আমরা ২জন আসামীকে গ্রেফতার করেছি গ্রেফতারের পর আমরা আসামীদেরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি, তারা খুনের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে এবং পলাতাল মামলার ২নং আসামীকে গ্রেফতারের জন্য আমরা জোড় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি খুব শিঘ্রই ২নং আসামীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হব বলে তিনি জানান।