যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতার মেয়াদের শেষ দিকে নানা গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। তার মধ্যে অন্যতম তিনি নতুন একটি রাজনৈতিক দল গঠন করবেন। তার নাম হবে ‘প্যাট্রিয়ট পার্টি’। শেষ পর্যন্ত এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, নতুন কোন রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নেই তার। ফ্লোরিডায় রিপাবলিকানদের এক সম্মেলনে তিনি বলেন, নতুন দল গঠন করলে রিপাবলিকানদের ভোট ভাগ হয়ে যাবে। ডেমোক্রেট জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটাই তার প্রথম বক্তব্য। রোববারের ওই ভাষণে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, তিনি ২০২৪ সালে আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন।
এ সময় তিনি নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কড়া সমালোচনা করেছেন। বলেন, বাইডেন ‘আমেরিকা ফার্স্ট নীতি থেকে চলে গেছেন আমেরিকা লাস্ট’ নীতিতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে আরো বলা হয়, ক্ষমতা ছাড়ার সময়ে কংগ্রেসে তিনি অভিশংসনের মুখে পড়েন। তবে শেষ পর্যন্ত সিনেট তাকে বাঁচিয়ে দেয়। রোববার ফ্লোরিডার অরল্যান্ডোতে কনজার্ভেটিভ পলিটিক্যাল অ্যাকশন কনফারেন্সে (সিপিএসি) তিনি বক্তব্য রাখেন। সেখানে তাকে দেখে মনে হয়েছে, এখনও রিপাবলিকান দলের ওপর রয়েছে তার আধিপত্য। গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে এই কনফারেন্স। সেখানে যে মুড বা ভাবধারা দেখা গেছে তাতে সবাইকে কট্টর ট্রাম্পপন্থি হিসেবেই মনে হয়েছে। এর মধ্যে ছিলেন টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ এবং ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। তারা কনফারেন্সে বক্তব্যও রেখেছেন।
এখনও ফেসবুক, টুইটার সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিষিদ্ধ সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ৬ই জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে নৃশংস হামলায় তার উস্কানি থাকার অভিযোগে এমন ব্যবস্থা নিয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। ২০ শে জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেন শপথ নেয়ার আগেই প্রথা ভেঙে অনেকটা সঙ্গোপনে হোয়াইট হাউজ ছাড়েন ট্রাম্প। তিনি কোনো আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই ছুটে যান ফ্লোরিডায় মার-এ লাগো গলফ অবকাশ যাপন কেন্দ্রে। তারপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন ট্রাম্প। সেখান থেকে রোববার ওই কনফারেন্সে যোগ দেন ৭৪ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী কাম সাবেক প্রেসিডেন্ট। এক ঘন্টারও বেশি দেরিতে তিনি সেখানে হায়াত রিজেন্সি হোটেলের স্টেজে উপস্থিত হতেই সমর্থকরা উল্লাস করতে থাকেন। এ সময় তাদের বেশির ভাগেরই মুখে কোন মাস্ক ছিল না। সমর্থকদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিচ্ছি যে, চার বছর আগে আপনাদের সঙ্গে নিয়ে যে অবিশ্বাস্য যাত্রা শুরু করেছিলাম, তা শেষ হয়ে গেছে। আমরা এখানে সমবেত হয়েছি আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে। আমাদের ভবিষ্যত আন্দোলন বা গতিবিধি কি হবে তা নিয়ে কথা বলতে। আমাদের দলের ভবিষ্যত এবং প্রিয় দেশের ভবিষ্যত নিয়ে কথা বলতে এখানে এসেছি আমরা। এ সময় তিনি নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ধারণাকে প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, ওসব গুঞ্জন- ফেক নিউজ। আমরা যদি নতুন দল গঠন করি তাহলে ভোট ভাগ হয়ে যাবে। তাতে আমরা কখনোই জিততে পারবো না। তাই দল গঠন কোনো বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আমাদের দল আছে। তা হলো- রিপাবলিকান পার্টি। এই দলটি ঐক্যবদ্ধ হচ্ছে এবং আগের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে।
৩রা নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হেরে যান ট্রাম্প। তারপর জানুয়ারির দাঙ্গায় বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হন। তা সত্ত্বেও রিপোর্ট বলছে এখনও তার ভোটারদের কাছে তিনি চরম মাত্রায় জনপ্রিয়। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জরিপে দেখা গেছে, তার ভোটারদের মধ্যে যাদেরকে জরিপ করা হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৪৬ ভাগ বলেছেন, তিনি যদি রিপাবলিকান পার্টি ত্যাগ করে নিজে দল গঠন করেন তাহলে তাকেই ভোট দেবেন তারা। ওদিকে সিপিএসি’র বক্তব্যে ট্রাম্প আবারও তার মিথ্যা দাবি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছিল বলে নভেম্বরে ডেমোক্রেটদের কাছে হেরেছেন তিনি। এ সময় তিনি আগামী ২০২৪ সালে নির্বাচন করার ইঙ্গিত দেন। ট্রাম্প বলেন, প্রকৃতপক্ষে আপনারা জানেন যে, তারা (ডেমোক্রেটরা) হোয়াইট হাউজকে হারিয়েছে। কে জানে? কে জানে? এমনও তো হতে পারে তৃতীয় দফায় আমি তাদেরকে পরাজিত করতে পারি। বাইডেন প্রশাসনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বাইডেন প্রশাসন খুব খারাপ করছে। আমরা কল্পনাও করতে পারি না যে, তারা কতটা খারাপ করছে। তারা আর কতদূরই বা যাবে!