মানবপাচার ও অর্থপাচারে জড়িত থাকার অভিযোগে গত বছরের ৭ই জুন কুয়েত ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট সিআইডি লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মাদ শহিদুল ইসলাম পাপুলকে আটক করে। এ তথ্য এখনো জানে না জাতীয় সংসদ সচিবালয়। প্রায় ৭ মাসের আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত বৃহস্পতিবার তার চার বছরের কারাদণ্ড এবং ১৯ লাখ কুয়েতি দিনার জরিমানা করা হয়েছে। এ তথ্য গতকাল এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জানে না সংসদ সচিবালয়। কতদিনে জানবে বা কে জানাবে সে তথ্যও নেই সংসদ সচিবালয়ের কাছে। আটক ও শাস্তির তথ্য না জানা পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে স্পিকার বা সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থা নেয়ার কোনো সুযোগও নেই। এমপি পাপুলের বিষয়ে সংসদ কীভাবে জানতে পারে- এমন প্রশ্নে সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, দুইভাবে এটা সম্ভব হতে পারে। প্রথমত-কুয়েত কর্তৃপক্ষ সরাসরি সংসদ সচিবালয় বা স্পিকারকে অবহিত করতে পারেন।
দ্বিতীয়ত-বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানাতে পারে। এর আগে জুনে এমপি পাপুল আটকের প্রায় ২০ দিন পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর কাছে জানতে চাইলে তিনি মানবজমিনকে বলেন, এমপি পাপুলের কুয়েতে আটকের বিষয়টি আমরা অবহিত নই। তার দপ্তর থেকে গতকালও একই তথ্য জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, পাপুলের সাজার বিষয়টি সরকারের পক্ষ থেকে সংসদকে অবহিত করা হলে স্পিকার তার আসন শূন্য ঘোষণা করতে পারেন। আবার স্পিকার এ সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে নির্বাচন কমিশনের মতামতও চাইতে পারেন। এদিকে সংবিধানের ৬৭ (খ) অনুচ্ছেদ অনুসারে স্পিকারের অনুমতি ছাড়া কোনো সংসদ সদস্য টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে তার সদস্যপদ শূন্য হবে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৫০ কার্যদিবস অনুপস্থিত রয়েছেন পাপুল, ফলে ওই ৯০ কার্যদিবসের নিয়মে পড়ার আগে তিনি আরো অনেক সময় পাচ্ছেন। এমপি পাপুল ইস্যুতে ডেপুটি স্পিকার এডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, একজন সংসদ সদস্য যদি কোনো মামলায় দুই বছর বা তদূর্ধ্ব সময় সাজাপ্রাপ্ত হন এবং সেই সাজা যদি নৈতিক স্খলন হয়। আর সেই বিষয়টা সরকার বা কোনো কর্তৃপক্ষ সংসদকে যদি অবহিত করেন যে আপনার ওই আসনের অমুক এমপি এই মামলায় এই ধারায় এতো বছরের কারাদণ্ড হয়েছে এবং সেটাকে আমরা নৈতিক স্খলন বলে বিবেচনা করি তখন সংসদ সেই বিষয়ে চিন্তাভাবনা করে কাগজপত্র দেখে তাকে তখন ‘ডিজমেম্বর’ (সংসদ সদস্য পদ থেকে বহিষ্কার) করতে পারে। তার আগে দেখভাল করার কোনো সুযোগ সংসদের নেই। আইনজ্ঞরা বলছেন, সংবিধানে নৈতিক স্খলনজনিত অপরাধে ন্যূনতম দুই বছর সাজায় এমপি পদ খারিজ হওয়ার বিধান রয়েছে। সাজা দেশে হবে, না বিদেশে, তা অস্পষ্ট। পাপুলের সাজা হয়েছে চার বছর। ফলে কুয়েতে সাজা হলেও বাংলাদেশের সংসদে পাপুলের পদ খারিজ হবে বলেই মত তাদের। এ জন্য কুয়েতের আদালতের রায়ের অনুলিপি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেও জানিয়েছেন আইনজ্ঞরা।
সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, একজন সংসদ সদস্য যদি ফৌজদারি অপরাধ করেন, সাজা পৃথিবীর যেখানেই হোক, তাহলে তার এমপি পদ থাকবে না। এমপি পদ খারিজের জন্য শুধু প্রমাণ হতে হবে, তিনি ফৌজদারি অপরাধ করেছেন, সেই অপরাধের জন্য তার সাজা হয়েছে। তিনি বলেন, তবে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অবশ্যই কুয়েতের আদালতের রায়ের অনুলিপি পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সংসদ সদস্য যদি নৈতিক স্খলনজনিত কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন এবং ন্যূনতম দুই বছর কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন, তাহলে তার সংসদ সদস্য পদ বাতিল হবে। এই অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তার নৈতিক স্খলন হয়েছে, তিনি সংসদ সদস্য পদে থাকার যোগ্যতা হারিয়েছেন। সরকারর উচিত দ্রুত রায়ের কপি সংগ্রহ করা। তিনি আরো বলেন, চাইলে দেশের কোনো সচেতন নাগরিক রায়ের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহ করে স্পিকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে জমা দিতে পারেন।