এলোমেলো শিক্ষাপঞ্জিতে এবার বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দও মাটি হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। ইতোমধ্যে করোনার কারণে বাতিল করা হয়েছে বই উৎসব। স্কুল খোলার আগে শিক্ষার্থীরা কে কবে নতুন বই হাতে পাবে সেটি নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্কুল বন্ধ থাকলেও পৃথক পৃথক ক্লাসের জন্য আলাদা তারিখ নির্ধারণ করে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের স্কুলে নিয়ে এসে নতুন বই তাদের হাতে তুলে দেয়া হবে।
এ দিকে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ বছর করোনার কারণে বই উৎসব বাতিল করা হয়েছে। ফলে প্রতি বছরের মতো এবার ১ জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী বই হাতে পাচ্ছে না। ইতোমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঘোষণা অনুযায়ী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। করোনা পরিস্থিতির এ অবস্থায় অব্যাহত থাকলে ছুটি আরো বাড়তে পারে, এমন ধারণাও পাওয়া যাচ্ছে। এই অবস্থায় কবে শিক্ষার্থীরা বই পাবে, এ নিয়ে নানা প্রশ্ন অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
যদিও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিতরণের জন্য এ বছরে সর্বমোট সাড়ে ৩৪ কোটি বই মুদ্রণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মাধ্যমিকের বই প্রায় ২৪ কোটি ৩৪ লাখ। বাকিটা প্রাথমিক স্তরের। ১ জানুয়ারির আগে মাধ্যমিক স্তরের সব বই স্কুলে না পৌঁছলেও প্রাথমিক স্তরের সব বই-ই পৌঁছে যাবে স্কুলে স্কুলে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের অনেকেই জানান, স্কুল বন্ধ থাকবে আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। এই ছুটি বাড়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন আসে শিক্ষার্থীরা তাদের নতুন বছরের বই হাতে পাবে কবে?
গত ১০ বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে প্রতি বছর গণভবনে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দিয়ে বই উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতির কারণে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী ৩১ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বই তুলে দিয়ে এর উদ্বোধন করা হবে। পরে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের হাতে পর্যায়ক্রমে নতুন বছরের বই তুলে দেয়া হবে।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম জানান, করোনার কারণে এ বছর বই বিতরণ প্রক্রিয়ায় কিছুটা এলোমেলো অবস্থা হয়েছে। তবে তিনি বলেন, আমাদের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মাধ্যমিক ও প্রাথমিকের বই বিতরণের কৌশল ও প্রক্রিয়া একই ধরনের হবে। আমরা চিন্তা করছি এবার একেক দিন একেক শ্রেণীর বই বিতরণ করা হবে। এর আগে রোল নম্বর অনুযায়ী বইগুলো প্যাকেট করা থাকবে। বই নেয়ার জন্য অভিভাবকদের স্কুলে আসার জন্য বলা হবে। এ ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। যেসব স্কুলে এক শ্রেণীতে শিক্ষার্থী সংখ্যা বেশি এসব ক্ষেত্রে সকাল ও বিকেলে আলাদা করে অভিভাবকদের বই নিতে বলা হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) বিতরণ নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক জিয়াউল হক বলেন, আমরা এবার বই বিতরণের কাজ সহজ করার জন্য কাজ আগেই ভাগ করে নিয়েছি। তিনি বলেন, এনসিটিবির দায়িত্ব হলো উপজেলা-থানা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত বই পৌঁছানো। বাকি দায়িত্ব পালন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর। গত ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাধ্যমিকের ১৩ কোটি এবং প্রাথমিকের ৮ কোটি মিলে ২১ কোটি বই উপজেলা শিক্ষা অফিস পর্যন্ত পৌঁছানো হয়েছে। বাকি বই পৌঁছানোর চেষ্টা করছি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছেন, এবারে বই উৎসব পালন করা না হলেও প্রতি বছরের মতো এবারো ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নতুন বছরের পাঠ্যপুস্তক উদ্বোধন করবেন। করোনার কারণে এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই মন্ত্রী ও সচিবরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে উপস্থিত হবেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হবেন বলে আশা করা হচ্ছে