চাপের মুখে পড়েও ভাস্কর্য ও মূর্তি ইস্যু নিয়ে হেফাজতে ইসলাম চুপ থাকবে না। আগামী সপ্তাহে তারা নতুন কর্মসূচি দিবে বলে জানা যায়। আর মামলাগুলো রাজপথে ও আইনগতভাবে মোকাবেলার কথা বলছে তারা।
এরমধ্যে এই ইস্যুতে হেফাজতের আমীর মাওলানা জুনাইদ বাবুনগরী ও যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধেও আলাদা একটি রাষ্ট্রদ্রোহের মামলা হয়েছে। মামলাগুলো তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই)। আর কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর নির্মাণাধীন ভাস্কর্য ভাঙচুরের ঘটনায় চারজন গ্রেফতার হলেও তদন্ত পর্যায়ে বাবুনগরী ও মামুনুল আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। কারণ এজাহারে তাদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাঙচুরের কথা বলা হয়েছে।
আর ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরের ঘটনায় হেফাজতের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আবার সচল হয়ে উঠছে। ওই সময় ঢাকাসহ সারাদেশে মোট ৮৩টি মামলা করা হয়েছিল। তারমধ্যে ১৮টি মামলায় এপর্যন্ত চার্জশিট দেয়া হয়েছে। দু’টি মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। আর একটি মামলার বিচার শেষ হয়েছে ও আসামিরা খালাস পেয়েছেন। এসব মামলায় তিন হাজার ৪১৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
আসামিদের মধ্যে হেফাজতের শীর্ষ নেতা জুনাইদ বাবুনগরী ও মাইনুদ্দিন রুহীসহ অনেকেই আছেন।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘আমরা হেফাজতের বিরুদ্ধে পুরান ও নতুন সব মামলার দ্রুত তদন্ত করে তাদের আইনের আওয়তায় আনার জন্য দাবি জানিয়েছি। আশা করি এবার আর কোনো মামলা হিমাগারে যাবে না। আমরা চাই তারা যেন এসব মামলা থেকে কোনোভাবেই পার পেতে না পারেন। তাদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খল আচরণ সরকার দেখবে। আর আমরা আওয়ামী লীগ তো মাঠে রয়েছিই।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, হেফাজতের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের মামলাগুলোর দ্রুত তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে এনিয়ে বুধবার চেষ্টা করেও তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, এরমধ্যে মামলাগুলোর ব্যাপারে সারাদেশে এসপিদের নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। একটি অগ্রগতি প্রতিবেদনও পাঠাতে বলা হয়েছে।
নানা পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, সরকার এখন সবদিক দিয়ে হেফাজতকে কোণঠাসা করতে চাইছে। মামলা ও সরকারের মাঠ দখলের আগাম পরিকল্পনার কাছে হেফাজত এখন অনেকটাই বিভ্রান্ত। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য লিখিত আবেদন জনিয়েছে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ব্যাপারে প্রথম যিনি বলেছেন সেই মামুনুল হকও চুপসে গেছেন। তিনি তার ফেসবুকে কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙার নিন্দা জনিয়েছেন। তারা এখন বার বার বলছেন, ‘একটি মহল আলেম-ওলামাদের সরকারের মুখোমুখি করার ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সুগভীর কোনো চক্রান্ত আছে।’
হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পদক মাওলানা জাকারিয়া নোমান ফয়েজী বলেন, ‘আমরা মামলাগুলো রাজপথে ও আইনতভাবে মোকাবেলা করব। এজন্য সারাদেশে আইন সহায়তা সেল গঠন করা হচ্ছে। এই মামলাগুলোকে আমরা কোনো চাপ মনে করছি না। আমরা ভীতও নই।’
তিনি জানান, হেফাজতের শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। দেশের শীর্ষ আলেমদের সাথেও কথা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহে হেফাজত নতুন কর্মসূচি দেবে। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি ভাস্কর্য ও মূর্তি একই জিনিস। আমাদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন নেই।’ তবে কী ধরনের কর্মসূচি হতে পারে তা তিনি স্পষ্ট করেননি।
তার কথা, হেফাজত একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, কোনো সংঘাত চায় না। এ কারণেই প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা করার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। তিনি সময় দিলে হেফাজত নেতারা দেখা করবেন। এটা কোনো ভয় বা চাপের মুখে নয়। হেফাজত নেতারা সরাসরি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে চান।
আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুর ঠিক কাজ নয়। আমরা কাউকে ভাস্কর্য ভাঙতে বলিনি। আমরা সরকারকে ভাস্কর্য ভাঙতে বলেছি। তারা ভাঙবে। আর কুষ্টিয়ার ঘটনা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা।’
অন্যদিকে ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র নায়েবে আমীর সৈয়দ ফয়জুল করিম ধোলাইপাড়ে সমাবেশ করে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার কথা বললেও তার দল এখনো ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি দেয়নি।
দলটির যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘এ নিয়ে আমরা নতুন কোনো কর্মসূচি এখনো দিচ্ছি না। আমরা বিষয়টি তুলে ধরেছি। এখন দেখতে চাই সরকার বিশৃঙ্খলা চায়, না শান্তি চায়। আর এটি কোনো রাজনৈতিক ইস্যু নয়, ধর্মীয় বিষয়। আমরা বলেছি ভাস্কর্য আর মূর্তি একই। এখনো বলছি। এটা ইসলামের কথা। একটি মহল ইসলামী দলগুলোকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করাতে চাচ্ছে। এর মধ্যে দেশবিরোধী চক্রান্ত আছে।’ তিনি ফয়জুল করিমের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাকে মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে অভিহিত করেন।
২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে যেমন পেয়েছিল এবার হেফাজত এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থন পায়নি। বিএনপি এ বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলছে না। জাতীয় পার্টি সরকারে পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আর ইসলামী দলগুলোও হেফাজতের কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে।
সূত্র : ডয়েচে ভেলে