প্রদীপ-আকবর একই সুতোয় গাঁথা

Slider টপ নিউজ


কক্সবাজার: টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদকে গুলি করে হত্যার রেশ এখনও মানুষের মন থেকে মুছে যায়নি। শিহরে উঠা এ ঘটনা গোটা দেশকে কাঁপিয়েছে। গ্রেপ্তার হয়েছেন টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাস। শামলাপুর চেকপোস্টে দায়িত্বরত এসআইও গ্রেপ্তার হয়েছেন। এ ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। পুলিশের মর্যাদা ফিরিয়ে আনতে কাজ করতে থাকেন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু একি? প্রদীপের ঘটনাও মনে দাগ কাটতেই সিলেটের বন্দরবাজার ফাঁড়ির এসআই আকবরের ঘটনা। ফাঁড়িতেই নির্মম নির্যাতন করে তরতাজা যুবক রায়হানকে হত্যা। আবারও শিরোনাম হয় পুলিশ।

হত্যাকারীর তালিকায় যুক্ত হয় পুলিশের নাম।
সিলেটে এ নিয়ে চলছে আন্দোলন। বিক্ষোভ। বন্দরবাজার ফাঁড়িতে নির্যাতনে খুন হওয়া যুবক রায়হানের শিশুসন্তান বড় হয়ে জানবে তার বাবাকে হত্যা করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত পুলিশেরই ক’জন সদস্য। তার বিধবা স্ত্রী আজীবন এ ক্ষত বয়ে বেড়াবেন। বন্দরবাজার ফাঁড়ি থেকে প্রায় রাতেই কান্নার শব্দ ভেসে আসতো।

আশপাশের বাসিন্দারা এ কান্নার আওয়াজ পেলেও ভয়ে কেউ ওদিকে ফিরেও তাকাতেন না। কারণ পুলিশ বলে কথা। কিছু বললে পাছে তাকেও এমন নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় কি না।

যতটুকু জানা গেছে, মাত্র ১০ হাজার টাকার জন্য তার ওপর নির্মম অত্যাচার চালায় পুলিশের এসআই আকবর। নখ খুঁচিয়ে তুলে ফেলা হয়। আর পুলিশের বর্বর নির্যাতনে জীবিত যুবক লাশ হয়ে ফেরেন বাড়িতে।
প্রশ্ন জাগে, এসব পুলিশের মন কি দিয়ে গড়া। এদের মধ্যে কি মনুষ্যত্ববোধ আছে? এরা কি পুলিশ হওয়ার যোগ্যতা রাখে? তাহলে ওদের নিয়োগ কীভাবে হয়েছিল? সবচেয়ে বড় কথা- এই ফাঁড়িতে কি হচ্ছে- তা কি সিলেটের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা জানতেন না। ওই ফাঁড়িতে কি তাদের নজরদারি ছিল না? অথচ থানা, ফাঁড়ি সর্বত্রই ঊর্ধ্বতনদের নজরদারি থাকার কথা। এটা না করে থাকলে তারাও এর দায় এড়াতে পারেন না।
কক্সবাজার শামলাপুর চেকপোস্টে যখন মেজর সিনহাকে বিনা কারণে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ওসি, এসপি মিলে এ হত্যাকে ধামাচাপা দিতে ব্যর্থ চেষ্টা চালান। সিলেটের রায়হানের বেলায়ও ধামাচাপা দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালানো হয়। পরে আসল ঘটনা জানাজানি হলে অভিযুক্ত এসআই আকবর পালিয়ে যায়। এখনও তাকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। ঘটনা ধামাচাপা দেয়া এবং তার পালিয়ে যাওয়ায় প্রমাণ করে সে অপরাধী। কিন্তু প্রশ্ন হলো- ঘটনার ছয়দিন পরও তাকে ধরা গেল না কেন? কিংবা তাকে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দেয়া হলো কেন?

এভাবে একের পর এক অকান্ডে পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা কি বাড়ছে? মোটেও না। তাহলে যারা পুলিশ বাহিনীর মর্যাদা ধরে টানছে তাদের কঠিন বিচার হওয়া উচিত। শুধু তাই নয়, ভবিষ্যতে কোনো পুলিশ যাতে এ ধরনের ঘটনায় জড়িত হতে না পারে সেজন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে এবং পুলিশ বাহিনীর স্বার্থেই- এটা করতে হবে। কজন পুলিশের জন্য গোটা বাহিনীকে কেন বদনাম বয়ে বেড়াতে হবে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *