কায়মন বাক্যে প্রার্থনা করি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী শেখ হাসিনাকে মানব ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভুষিত করা হোক। বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিবসে এটাই কামনা করছি। জানি আমার কথা বা লেখা কোন কিছুই নোবেল কমিটির কানে পৌছবে না। তবে হৃদয় অনুভুতির শক্তি অসীম। কৃতজ্ঞতা এবং ভালবাসার মহিমা অপার। সকল কিছুর উর্দ্ধে মানবতার জয়জয়কার। বিশ^ মানবতায় আমার মত অগুণিত মানুষ তাই মনে করে। সেই শক্তি ও মাহাত্ত্ব বুকে ধারন করে আমার এবং আমাদের এই কামনা। মানবতার জননী নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভুষিত হোন।
বলা হয়ে থাকে, বিশে^ যে ক’জন মহান নেতাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভুষিত না করায় নোবেল প্রাইজ তার মর্যাদাহানি করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাদের অন্যতম। ১৫ই আগষ্টের নৃশংসতা বাংলাদেশ ও বিশে^র ইতিহাসে এক কালো অধ্যায়। তবে বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা সরকার প্রধান হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিটি ক্ষেত্রে উচ্চতার আসনে নিয়েছেন। পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা আজ বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছে। শুধু বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থানই না, বিশ^ শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার অবদান আধুনিক পৃথিবীর জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। ইতমধ্যে মানব জাতি তাকে ‘মানবতার জননী’ স্বীকৃতি দিয়েছে। বিশ^শান্তি নিয়ে কাজ করা বাঘা বাঘা প্রতিষ্ঠান, অধ্যাপক, গবেষকগণ শেখ হাসিনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভুষিত করার জন্য নাম প্রস্তাব করেছেন। এর আগেও একাধিকবার নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব হয়েছে। তবে এবারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন, অত্যন্ত শক্ত দাবিদার আমাদের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী শেখ হাসিনা।
বিশে^র প্রতিটি কোনে প্রথিতযশা বিশ^বিদ্যালয়, শান্তিবাদি প্রতিষ্ঠান এবং গবেষক শেখ হাসিনাকে শান্তির অগ্রদুত হিসেবে মনে করেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ‘অক্সফোর্ড নেটওয়ার্ক অব পিস স্টাডিজ, এর দুজন শিক্ষাবিদ ড. লিজ কারমাইকেল ও ড. এন্ড্রু গুসলার শেখ হাসিনাকে মানবিক বিশে^ প্রধান নেতা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। কলাম্বিয়া বিশ^বিদ্যালয়ের পিস স্টাডিজ বিভাগের ৩ অধ্যাপক ড. অলডো সিভিকো, ড. দিপালী মুখোপাধ্যায় ও ড. জুডিথ ম্যাটলফ শেখ হাসিনাকে বিশ^ শান্তির দুত হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। হার্ভাড বিশ^বিদ্যালয়ের হার্ভার্ড ডিভাইনিটি স্কুলের ডিন ডেভিড এন হেম্পটন বলেছেন, এতগুলো শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার জন্য মানবিক হৃদয় লাগে। জার্মানি যা করতে পারে নি, শেখ হাসিনা তা করে দেখিয়েছেন। অষ্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন ক্যানবেরার ‘পিস এন্ড রিসার্চ ইনিস্টিটিউট’ প্রধান ড. হেনরিক উরডাল নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করে বলেছেন, ‘বিশ^শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য শেখ হাসিনাকেই বিশ^ শান্তির নেতার মর্যাদা দেয়া উচিত। সত্যিকার অর্থেই যদি শান্তিতে অবদানের জন্য কোন পুরস্কার থাকে তাহলে সে পুরস্কার পাবার একমাত্র যোগ্য ব্যক্তি হলেন শেখ হাসিনা।’ বিশ^শান্তি নিয়ে গবেষণা করা এতসব বাঘা বাঘা মনিষিদের মন্তব্যের পরও কিছু কথা থেকে যায়। যা সবার অগোচরে। মানুষের জন্য শেখ হাসিনার হৃদয় উজার করা ভালবাসা। মানবতার জন্য মায়া-মমতা ও দরদ। আর এখন বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষও শেখ হাসিনাকে ভালবাসে। হয়ত বলবেন, নোবেল পুরস্কার নয় মানুষের ভালবাসাই সবথেকে বড় প্রাপ্তি। তবু বলবো নোবেল শান্তি পুরস্কার আমাদের প্রধানমন্ত্রী মানবতার জননী শেখ হাসিনার প্রাপ্য।
কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভুষিত করা উচিৎ এর কিছু উল্লেখযোগ্য বিষয় তুলে ধরতে চাই। সব্রাগ্রে রোহিঙ্গা শরনার্থী সমস্যার কথা বলবো। বিশে^র উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্সসহ বাঘা বাঘা রাষ্ট্র ও রাষ্ট্র প্রধানগণ শরণার্থি সমস্যাকে এড়িয়ে গেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সেসব রাষ্ট্রে শরণার্থি প্রবেশে বাধা দিতে কুণ্ঠা বোধ করেননি। প্রতিদিন উন্নত জীবনের আশায় ছুটা অভিবাসিদের বিতারিত করা হচ্ছে। সেখানে দুর্বল অর্থনীতির বাংলাদেশ অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে মায়ানমারের ১০ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থিকে আশ্রয় ও বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সামাধান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার অবদান অনস্বীকার্য।
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বিশে^র জন্য প্রধান সমস্যাগুলোর একটি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে শতভাগ সফল। সরকার সর্বদাই জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিষয় সর্বোচ্চ গুরুত্ব সহকারে মনিটরিং করছে। যে কারনে দেশের আভ্যন্তরিন সন্ত্রাসী গোষ্ঠি মাথা তুলারই সুযোগ পায় না। মুসলিম প্রধান দেশ হবার পরও সরকারের কঠোর অবস্থানের কারনে আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠি আইএসআই বা আল কায়েদা সদস্যরা বাংলাদেশে সুবিধা করতে পারেনি। অতিতে বাংলাদেশের একটি দলের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী ভারতের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠিকে সহযোগীতার অভিযোগ ছিলো। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার ও শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে জঙ্গিবাদ বিরোধী ভুমিকার কারনে প্রতিবেশী ভারতের ওলফা সমস্যা সমাধান সহজ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে শন্তু লারমার নেতৃত্বে উপজাতিদের সাথে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন সমস্যা ছিলো। প্রথমবার ক্ষমতাসীন হলে ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তি চুক্তি করেন। যে চুক্তির বলে উপজাতিরা তাদের নাগরিক মর্যাদা লাভ করে। পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসে।
বাংলাদেশ বিশ^ শান্তি রক্ষায় বদ্ধ পরিকর। যে কারনে জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা মিশনে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংখ্যক সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সর্বদা মানব জাতির শান্তিপূর্ণ সহবস্থানে বিশ^াস করে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ প্রথম এবং শেখ হাসিনা প্রধান ভুমিকা রাখছেন। বিশ^শান্তি রক্ষায় যার নেতৃত্বে সব থেকে বেশী ভুমিকা রাখা হচ্ছে তিনিইতো শান্তি পুরস্কারের জন্য উপযুক্ত। তাই শেখ হাসিনারই নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রাপ্য।
বাংলাদেশের মানুষ অন্য যে কোন সময়ের চাইতে শান্তিতে বসবাস করছে। একসময়ের ক্ষুধা ও দারিদ্র পিড়িত বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৬৪ ডলার। শিক্ষার হার ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ। গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৩ বছর। বাংলাদেশ বিশে^র ৩৯তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। প্রতিদিন এইসব পরিসংখ্যান উর্দ্ধমুখি হচ্ছে। এসবকিছুই সরকার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের ফসল। দূর্ণীতি প্রতিরোধে শেখ হাসিনা সরকার দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। নিজ দলের চিহ্নিত ও জনপ্রিয় অনেক নেতাও রেহাই পায়নি। সরকারের অনেক বড় বড় আমলা দূর্ণীতির দন্ডে পদচ্যুত হয়েছেন। নিজ জনসাধারণ দেশের মানুষের শান্তিপূর্ণ সহবস্থান বিশ^শান্তির প্রথম শর্ত। শেখ হাসিনা তা বেশ ভালভাবেই নিশ্চিত করেছেন।
রাজনৈতিকভাবেও শেখ হাসিনার নেতৃত্ব প্রশংসনীয়। সম্প্রতি সর্ববৃহৎ বিরোধী দল বিএনপি সভানেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বিশেষ ক্ষমতায় করামুক্তি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা অন্য যে কোন সময়ের চাইতে শান্তিপূর্ণ। শেখ হাসিনার জনমুখি কার্যক্রমে বিরোধীদলগুলোও অনুধাবন করেছে জ¦ালাও-পোড়াও আন্দোলন বা হরতাল জনসাধারণকে কেবল ভোগান্তিই দিতে পারে। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেই দেশের মঙ্গল ও শান্তি নিহিত। রাজনৈতিকভাবে দেশের স্থিতিশিল অবস্থার জন্য যেমন শেখ হাসিনার কুশলী রাজনীতি ফলপ্রসু হয়েছে। ঠিক একইভাবে আন্তমহাদেশীয় রাজনীতিতেও শেখ হাসিনা সমিহ জাগানিয়া নাম। এশিয়া তথা বিশে^র দুই বৃহৎ পরাশক্তি চীন ও ভারতের সাথে সমান তাল রেখে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিদেশনীতি। বাংলাদেশকে তুষ্ট করতে চীন বা ভারত রীতিমত প্রতিযোগীতায় লিপ্ত। এখানেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিশালত্ব। ভুখন্ড, আয়তন বা অর্থনীতি সবকিছুই ব্যক্তি শেখ হাসিনার কাছে মৃয়মান। বিশ^ নেতৃত্বে শেখ হাসিনা প্রথমসারির বিশ^ নেতা। একজন বিশ^নেতা শেখ হাসিনা সত্যিকারের বিশ^শান্তির দুত। শান্তি পুরস্কার তাঁরই গলে সাজে।
করোনা মহামারিতে পর্যুদস্ত বিশ^। বাংলাদেশও এর বাইরে না। তবে জনবহুল বাংলাদেশে করোনা সেভাবে বিস্তার হয়নি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রতিরোধমূলক আগাম ব্যবস্থা নেবার কারনেই এটা সম্ভব হয়েছে। শেখ হাসিনার করোনা নিয়ন্ত্রণ বিশে^ প্রশংসিত ও পঠিত হচ্ছে। যে কোন রোগবালাই মানব সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করে। অর্থনৈতিক স্থবিরতা আনে। সেখানে দুরারোগ্য করোনা বাংলাদেশের মত জনবহুল ও উন্নয়নশীল দেশে দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব রেখে যাবে এটাই স্বাভাবিক। কিনতু শেখ হাসিনার বিশেষ পদক্ষেপে সেরকম কিছু ঘটেনি। এটা অনেক বড় অর্জন।
সর্বোপরি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তথা বিশ^ মুসলিমের অভিভাবক হিসেবে ভুমিকা রেখেছেন শেখ হাসিনা। ইসলাম ধর্মাবলম্বি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় তার সবথেকে বড় নজির। সৌদি আরবের নেতৃত্বে মুসলিম জোটে বাংলাদেশ সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। দেশের অভ্যন্তরে ধর্মীয় মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদকে যেমন দমন করেছেন। স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াতে ইসলামের যুদ্ধাপরাধীদের বিচরের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি প্রয়াত আল্লামা শাহ আহমেদ সফি (র.) এর নেতৃত্বে হেফাজতে ইসলাম বিভিন্ন দাবিতে কঠোর আন্দোলন শুরু করেন। কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সেইসব শিক্ষা প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি তিনি(শেখ হাসিনা) দিয়েছেন। এতে দেশের মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত লাখ লাখ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা খুশি। ধর্মীয় শিক্ষায় শেখ হাসিনার এই একটি পদক্ষেপের কারনে বিশ^শান্তির জন্য অনুকরণীয় হতে পারে। কারন সঠিক ধর্মীয় শিক্ষার মাধ্যমেই মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদ প্রতিহত করা সম্ভব। যারা ভুল পথের ইশরায় জঙ্গি হিসেবে চিহ্নিত হতে পরতো। শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণে তারই এখন সরকারের সহযোগতায় ধর্মীয় শিক্ষা পাচ্ছে। সমাজের মুল ধারায় সামিল। এটাই শেখ হাসিনার অন্যন্যতা। শেখ হাসিনার মতত্ত্ব। শেখ হাসিনার মানবিকতা। মনবতার শান্তির দুত শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিনে শুভ কামনা। নোবেল শান্তি পুরস্কারে সাফল্যমন্ডিত হোক তার মানবতার অবদান। জয়তু শেখ হাসিনা।
লেখক : সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
২৮/০৯/২০২০