সিলেটের এমসি কলেজে তরুণী ধর্ষণের ঘটনাই প্রমাণ করে এই দেশে কেউই নিরাপদ নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এই ঘটনা নতুন নয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে ধর্ষণের ঘটনা এমনভাবে ঘটছে যে, আমরা অতীতে কখনো এমনটা দেখিনি। সবচাইতে লজ্জার ব্যাপার আওয়ামীলীগের মতো একটা পুরনো দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। যাদের একটা অতীত ঐতিহ্য আছে। এই সংগঠনের নেতারাই এই সমস্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরি পালন করেছে। এটা ছাত্রলীগের চরিত্রগত একটা ব্যাপার আছে।
আপনারা দেখবেন যতো ধরণের অপকর্ম ১৯৭২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। আমরা অবিলম্বে এই সব ঘটনায় জড়িত ছাত্রলীগের দুষ্কৃতিকারীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানাচ্ছি।
আজ রোববার গুলশানস্থ বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ সমস্ত ঘটনাই প্রমাণ করে এই দেশে কারো নিরাপত্তা নেই। এই দেশে যতো ধরণের নৈরাজ্য চলছে সেটা আওয়ামী লীগ সৃষ্টি করেছে। আমাদের অত্যন্ত দুর্ভাগ্য যে, আামাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে চললো। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই এই ধরণের নৈরাজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিস্থিতি চরম অবনতি হয়েছে। আজকে খুবই দুর্ভাগ্যের বিষয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারের সঙ্গে মিলে এই ধরণের অপরাধগুলো করছে। এই যে কক্সবাজারে এতো পুলিশ সদস্যের বদলি প্রমাণ করে ওইখানে যে সকল ক্রসফায়ারগুলো হয়েছে এগুলো সবই পরিকল্পিতভাবে হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ একটা দিক দিয়ে সফল হয়েছে যে তারা এই দেশের সকল মানুষের মনে একটা ত্রাস, ভীতি তৈরী করতে পেরেছে। ভয় সৃষ্টি করতে পেরেছে। আজকে সমাজের প্রত্যেকটা স্তরে নিরাপত্তার অভাব বোধ করা হচ্ছে। এক সময় যারা উচ্চ কন্ঠে কথা বলতেন তাদের ধাবিয়ে দেয়া হয়েছে। তারাও এখন কথা বলছেন না। আমি যে আপনাদের সামনে কথা বলছি এটাও বিপদজনক। আমি যে ফোনে কথা বলি এটা ২৪ ঘন্টাই রেকর্ড হয়। পরে এটা প্রিন্ট করা হয়। এই কল রেকডিংয়ের প্রিন্টের কপিও আমি দেখেছি।
মির্জা ফখরুল বলেন, এই সরকারের ওপর জনগণের আস্থা যখন শূন্যের কোঠায়, তখন জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে, বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে, বিএনপি’র ধ্বংসের একটি সুপরিকল্পিত মিথ্যাচার চলেছে। এই মিথ্যাচার দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এক গভীর ষড়যন্ত্র। একটি গণতান্ত্রিক, স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের যে স্বপ্ন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মানুষ দেখেছিল, যে চেতনা ধারণ করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধ করেছিলো তাকে নস্যাৎ করার একটা অপচেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক চ্যানেলে সরকারের নির্দেশে সম্পূর্ণ বিকৃত, বিকারগ্রস্থ মানসিকতায় তথা কথিত নাটক নামে পরিবেশন তারই একটি অংশ। আওয়ামী লীগ বল পূর্বক ক্ষমতা দখলের পর থেকেই অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ভাবে ইতিহাস বিকৃত করে ভবিষ্যত প্রজন্ম তথা জনগণের সামনে স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক সংগ্রাম নিয়ে মিথ্যা ও ভুল তথ্য পরিবেশন করছে।
গণমাধ্যমকে ভূমিকা রাখার আহবান
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে গণমাধ্যমকে সাহসী ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়ে ফখরুল বলেন, হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে জঘন্য মিথ্যাচার, প্রচারণা জনগণকে বিভ্রান্ত করবে না। বাংলাদেশের গণমাধ্যম জতির সকল সংকটময় মূহুর্তে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে জনগণের স্বার্থের পক্ষে তাদের কলম ধরেছেন এবং সংগ্রাম করেছেন। মহান ভাষা আন্দোলন, পাকিস্তানী সামরিক শাসন, ৬৯ এর গণঅভূত্থান সর্বোপরি ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিক, সম্পাদক, সংবাদ কর্মীদের ভূমিকা নক্ষত্রের মতোই উজ্জ্বল গৌরবময়। পরবর্তী সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে, স্বৈরচারের বিরুদ্ধে সংগ্রামে, অবৈধ শাসকদের বিরুদ্ধে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গৌরবময়। গণমাধ্যমের সকল পর্যায়ের কর্মী, সাংবাদিক, সম্পাদকবৃন্দকে জনগণের স্বার্থের পক্ষে, গণতন্ত্রের পক্ষে, স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব, সুশাসনের পক্ষে অবস্থান নেয়ার জন্য আহ্বান জানাই।
বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং বিএনপি’র বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সধারণ সম্পাদক ও তথ্য মন্ত্রীর দায়িত্ব হীন মন্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ফখরুল বলেন, বিএনপি কোনও ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। জনগণের ভালবাসা ও সমর্থনে বিশ্বাসী বিএনপি। কোনও সাজানো মধ্যরাতের ভোট ডাকতি নির্বাচন অথবা ভোটার বিহীন নির্বাচনের মধ্য দিয়ে অতীতে কখনও ক্ষমতায় যায়নি। আওয়ামী সরকার বিভিন্নভাবে ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতায় গিয়েছে, আতাঁত করেছে স্বৈরচারের সঙ্গে, অবৈধ মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের সঙ্গে চক্রান্ত করে ২০০৮ সালে ক্ষমতা দখল করেছে। জাতীয় আন্তর্জাতিক চক্রান্তের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার আপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় আওয়ামী লীগকে জনগণ নয় রাষ্ট্র যন্ত্রের ওপর ভর করে ক্ষমতায় থাকতে হচ্ছে। একথা আওয়ামী লীগের তথ্য মন্ত্রী এবং সাধারণ সম্পাদককে বার বার মনে করিয়ে দিতে হয়। নিজেদের বিবেক কে প্রশ্ন করে দেখার জন্য আহ্বান জানানো হয়। এই সব অলীক, কল্প কাহিনী তৈরী না করে নিজেদের সমস্যা সমাধানের দিকে মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, কেভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন এখনও চুড়ান্তভাবে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদন পায়নি। বেশ কয়েকটি দেশে উদ্ভাবন ও পরীক্ষার কাজ চলছে। বিএনপি মনে করে ভ্যাকসিন সংগ্রহ ও বিতরনের ক্ষেত্রে কোনও রকম রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, ও বানিজ্যিক স্বার্থও যেন সাধারণ মানুষের ভ্যাকসিন প্রপ্তিতে কোন ব্যাঘাত না ঘটায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান করছি এবং জনগণ যেন কোনও ব্যায় ব্যাতিরকেই এই ভ্যাকসিন পেতে পারেন তার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারকে আহবান জানাচ্ছি।
পাবনা-৪ এ পূননির্বাচনের দাবি
বিএনপি মহাসচিব বলেন, পাবনা-৪ উপ নির্বাচনে আবার প্রমান করেছে যে, এই নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনার যোগ্য নয়। তারা সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধংস করেছে। এই নির্বাচনকে বাতিল করে পুনরায় নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবী জানাই।
শনিবার বিকাল ৫টায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। সভায় পরিকল্পিত মিথ্যা অপপ্রচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য দলের অঙ্গ সংগঠনসমূহ ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল, জাসাস, মুক্তিযোদ্ধা দল সকল জেলার বিএনপি ও অঙ্গ সমূহ কেন্দ্রীয় নির্দেশ অনুযায়ী কর্মসূচী পালন করবে। একই সঙ্গে সভা, সেমিনার, ওযেবনার, র্ভাচুয়াল আলোচনা সভা অনুষ্ঠানের আয়োজন করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।