ঢাকা: উপনির্বাচনের আসন ৫টি। প্রার্থী সংখ্যা ১৪১। এর মধ্যে একটি আসনে এক পরিবারেই রয়েছে ৬ জন। এ চিত্র আওয়ামী লীগের। মাত্র ৫টি আসনের বিপরীতে এত প্রার্থী নিয়ে অনেকটা বিপাকে দলের নেতারা। ১৪১ জনের মধ্য থেকে মাত্র ৫ জনকে বেছে নিতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। উপ-নির্বাচনের আসনগুলোর মধ্যে রয়েছে-নওগাঁ-৬, সিরাজগঞ্জ-১, পাবনা-৪, ঢাকা-৫ ও ঢাকা-১৮। এসব আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়াটাই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কয়েকটি আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীর তালিকায় আছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক প্রভাবশালী নেতা। সংশ্লিষ্টরা জানান, গড়ে আসন প্রতি ২৮ জন মনোনয়ন চেয়েছেন, যা ২০১৮ সালের ৩০শে ডিসেম্বরের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তুলনায় দ্বিগুণ। ওই সময় দেশের ৩০০ আসনে চার হাজার ২৩ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। আসন প্রতি সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১৪ জনের কম। সংসদ নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী সবচেয়ে বেশি ছিল বরগুনা-১ আসনে। এ আসনের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ৫২ জন। এবারের উপ-নির্বাচনে ওই রেকর্ড ভেঙে গেছে। পাঁচটি আসনের মধ্যে ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়ন চেয়েছেন আওয়ামী লীগের ৫৬ জন। এছাড়া নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪, পাবনা-৪ আসনে ২৮, ঢাকা-৫ আসনে ২০ এবং তিনজন সিরাজগঞ্জ-১ আসনে তাদের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন।
দলীয় সূত্র জানায়, মনোনয়ন বোর্ড শিগগিরই সভা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, অতীতের মতো দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে জাতীয় সংসদের আসন্ন উপ-নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া হবে না। প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষেত্রে অন্যসব বিষয়ের সঙ্গে এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হবে। কিছু জনপ্রতিনিধি ও নেতাকর্মীর দুর্নীতিতে সম্পৃক্ততায় বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টির ফলে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এদিকে শূন্য হওয়া আসনগুলোর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা জয়ী হবে বলেও প্রত্যাশা দলটির শীর্ষ নেতাদের। তাদের যুক্তি, যেসব আসনের সংসদ সদস্য মারা গেছেন তারা সবাই আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য ছিলেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই উপ-নির্বাচনে তাদের মনোনীত প্রার্থীরা জিতবেন। বিজয় নিশ্চিত করতে তারা যোগ্য ও জনপ্রিয়দের মনোনয়ন দেবেন বলেও জানান। তবে এত প্রত্যাশীর ভিড়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করাটাকে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। তারা বলেন, ৫টি আসনে যারা মনোনয়ন ফরম কিনেছেন তাদের বেশির ভাগই যোগ্য ও মেধাবী। আওয়ামী লীগের আদর্শে তারা নিজেদের রাজনৈতিক জীবনকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ঢাকা-১৮ আসনের জন্য সবচেয়ে বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতা থেকে শুরু করে থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্যও রয়েছে।
মনোনয়ন ফরম কিনেই এ আসনের অনেক প্রার্থী প্রচারণায় নেমে গেছেন। একে-অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগারও করছেন। ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ভূমিদস্যু, দখলবাজ, নারী কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িত অনেকেই এ আসনের জন্য মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তাদের ফরম কেনা দেখে এখন আমার নিজেরই লজ্জা লাগছে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থী বাছাইয়ে কখনও ভুল করেন না। তিনি যোগ্য, সৎ প্রার্থীদের বেছে নেবেন। আশা করি উপ-নির্বাচনে দল থেকে আমাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। একই আসনের জন্য ফরম কিনেছেন তেজগাঁও থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এসএস হোসাইন। তিনি মানবজমিনকে বলেন, প্রয়াত সাহারা খাতুন আমার খালাম্মা। তার রাজনৈতিক জীবনে আমি সঙ্গী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। তার সততার আদর্শ নিয়ে দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন। আশা করি এবারের মনোননয়ন আমাকেই দেয়া হবে। আসনটিতে অন্যদের মধ্যে দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন যুব মহিলা লীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা হাবীব হাসান, এসএম তোফাজ্জল হোসেন, ভাটারা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইসহাক মিয়া প্রমুখ। ওদিকে পাবনা-৪ আসনে ২৮টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে।
সাবেক মন্ত্রী শামসুর রহমান শরিফ ডিলুর প্রয়াণে শূন্য হওয়া এই আসনে তার স্বজনদের অনেকেই মনোনয়ন চাইছেন। তাদের মধ্যে আছেন ডিলুর স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, খালাতো ভাই, ভাগ্নিজামাইসহ আরো কয়েকজন। জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য রবিউল আলম বুদু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ আলী জিরু, শিল্পপতি জালালউদ্দিন তুহিন, মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ রশীদুল্লাহ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
ঢাকা-৫ আসনের উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে ২০টি। তাদের মধ্যে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, প্রয়াত সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান সজল, যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, আওয়ামী লীগ নেতা ড. আওলাদ হোসেন, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক উপকমিটির সাবেক সদস্য এবং বঙ্গবন্ধুর পুত্রবধূ সুলতানা কামালের ভাতিজি নেহেরীন মোস্তফা দিশি উল্লেখযোগ্য।
সবচেয়ে কম মনোনয়ন ফরম বিক্রি হয়েছে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে। এখানে প্রয়াত সংসদ সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে ও সাবেক সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়, মোহাম্মদ নাসিমের ভাতিজা শেহেরিন সেলিম রিপন ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতা অমিত কুমার দেব মনোনয়ন ফরম কিনেছেন।
নওগাঁ-৬ আসনে প্রয়াত সংসদ সদস্য ইস্রাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওমর ফারুকসহ ৩৪ জন মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। তাদের মধ্যে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা রয়েছেন। যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সাবেক একাধিক নেতাও ফরম তুলেছেন।
সংসদ সদস্যদের মৃত্যুর কারণে যে ৫টি সংসদীয় আসন শূন্য হয়েছে তার সবগুলোতেই চলতি মেয়াদসহ টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। অবশ্য তার আগে নওগাঁ-৬ আসনটি আগের টানা তিন মেয়াদে (১৯৯১-২০০১) বিএনপি’র এমপি ছিলেন। এছাড়া পাবনা-৪ আসনটি ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী বিজয়ী হলেও এরপর থেকে টানা আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে আসছে। ঢাকা-৫ (পূর্বের-৪) আসনে ১৯৯১ সালে বিএনপি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হন। এই আসনটির মতো ঢাকা-১৮ (পূর্বের-৫) আসনেও ১৯৯১ সালে বিএনপি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ আবার ২০০১ সালে বিএনপি প্রার্থী জয়ী হন। অপরদিকে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে বরাবরই আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হয়ে আসছেন।