ঢাকা: দেশের ৫টি সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী আজ চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ওই আসনগুলোতে দলীয় টিকিট পেতে ১৪১ জন মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা এখন প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বেশি হওয়ায় একটি শর্ট লিস্টও তৈরি করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী তার নিজস্ব সোর্স দিয়ে ইতোমধ্যে মাঠ যাচাই ও পর্যবেক্ষণ করেছেন। প্রার্থীদের ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তা, তৃণমূলে অবস্থানসহ বেশ কয়েকটি বিষয় পর্যবেক্ষণে তুলে আনা হয়েছে। ওই রিপোর্টের আলোকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সভায় চুলচেরা বিশ্লেষণ শেষে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।
সম্প্রতি ইসরাফিল আলম এমপির মৃত্যুতে নওগাঁ- ৬, মোহাম্মদ নাসিম এমপির মৃত্যুতে সিরাজগঞ্জ-১, শামসুর রহমান শরিফ ডিলু এমপির মৃত্যুতে পাবনা-৪, হাবিবুর রহমান মোল্লা এমপির মৃত্যুতে ঢাকা-৫ এবং অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন এমপির মৃত্যুতে ঢাকা-১৮ আসন শূন্য হয়ে যায়। ওই পাঁচটি আসনে এমপির পরিবার বা স্বজনদের মধ্যে থেকে কেউ মনোনয়ন পাচ্ছেন, নাকি এমপির পরিবারের বাইরে নতুন কাউকে মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে- এ নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে নেতাকর্মীদের মধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনা চলছে।
জানা গেছে, রাজধানীর দুটো আসন নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে বেশ আগ্রহ রয়েছে। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফম বাহাউদ্দিন নাছিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক। তিনজনের মধ্যে জাহাঙ্গীর কবির নানক ছিলেন ঢাকা-১৩ আসনের এমপি। বাকি দু’জন নিজ এলাকার এমপি ছিলেন। ঢাকার দু’টি আসন শূন্য হওয়ায় তারাও ভেতরে ভেতরে নড়েচড়ে বসেছেন। বিশেষ করে ঢাকা-১৮ আসনের প্রতি নেতাদের একটু আগ্রহ বেশি। যদিও ওই আসনে সর্বোচ্চ ৫৬ জন দলীয় টিকিট পেতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
এরমধ্যে অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনের ভাগনে আনিসুর রহমানও রয়েছেন। আর ঢাকা-৫ আসনে রয়েছেন এমপি পূত্র মশিউর রহমান মোল্লা সজল। দলের হাইকমান্ডের কাছে তার রেকর্ড খুব বেশি ইতিবাচক নয়। তা ছাড়া হাবিবুর রহমান মোল্লা টানা তিনবার এমপি ছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত টানা ৫ বার দলীয় টিকিট পেয়ে নির্বাচন করে চারবার জয়লাভ করেন। এই দীর্ঘ সময়ে অন্য যোগ্য নেতারা বঞ্চিত হয়েছেন। ফলে এসব কিছু বিবেচনা করে এমপির পরিবারের বাইরে অন্য কাউকে টিকিট দেয়ার বিষয়টিও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছেন যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ও সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশীদ মুন্না, ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও ডিএসসিসির ৭০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিকুর রহমান।
তরুণ ছাত্রনেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সুনজরে রয়েছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন। এ ছাড়াও জোটের ইমেজসম্পন্ন প্রার্থী হিসেবে জাসদের সহ সভাপতি মো: শহীদুল ইসলামকে নিয়েও চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া নওগাঁ-৬ আসনে ৩৪ জন, পাবনা-৪ আসনে ২৮ জন, ঢাকা-৫ আসনে ২০ জন ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনে তিনজন আওয়ামী লীগের টিকিট পেতে মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। এরমধ্যে সিরাজগঞ্জ-১ আসনে মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভির শাকিল জয়, নওগাঁ-৬ আসনে ইসরাফিল আলমের স্ত্রী সুলতানা পারভীন এবং পাবনা-৪ আসনে শামসুর রহমান ডিলুর স্ত্রী কামরুন্নাহার শরীফ, ছেলে গালিবুর রহমান শরীফ, মেয়ে মেহজাবিন শিরিন পিয়া ও মেয়ের জামাতা আবুল কালাম আজাদ মিন্টু এবং খালাতো ভাই বশির আহমেদ আওয়ামী লীগের টিকিট পাওয়ার জন্য ফরম জমা দিয়েছেন।
জাতীয় সংসদের ৫টি আসনের উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্তকরণ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের অন্যতম সদস্য লে. কর্নেল (অব:) ফারুক খান নয়া দিগন্তকে বলেন, আগামীকাল (আজ) বৈঠক আছে। ওই বৈঠকে মনোনয়নের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সৎ, যোগ্য ও ত্যাগী প্রার্থীদের মূল্যায়ন করা হবে। এমপির পরিবারের বাইরে মনোনয়ন দেয়া হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন কিছু বলা যাচ্ছে না। বৈঠকে গেলে আলাপ-আলোচনা করলে বুঝতে পারব কারা মনোনয়ন পাচ্ছে।